নাটক প্রচারে টেলিভিশনের পাশাপাশি মাধ্যম হিসেবে সামনে এসেছে ইউটিউব ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম
নাটক প্রচারে টেলিভিশনের পাশাপাশি মাধ্যম হিসেবে সামনে এসেছে ইউটিউব ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম

টেলিভিশন নাটক

আয়ের সুযোগ বেড়েছে, বাড়ছে বাজেটও

কয়েক বছর ধরেই টেলিভিশন নাটকের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। মান কমে যাওয়ার পেছনে অভিযোগের একটি ছিল কম বাজেট। কিন্তু ইউটিউব ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কারণে নাটক থেকে আয়ের সুযোগ ঘটছে নানাভাবে। টেলিভিশন নাটক–সংশ্লিষ্টদের মত, এখন থেকে ক্রমেই বাড়বে নাটকের বাজেট। ভালো নাটকও তৈরি হবে।

কয়েক বছর ধরেই টেলিভিশন নাটকের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। মান কমে যাওয়ার পেছনে অভিযোগের একটি ছিল কম বাজেট। কিন্তু ইউটিউব ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কারণে নাটক থেকে আয়ের সুযোগ ঘটছে নানাভাবে। টেলিভিশন নাটক–সংশ্লিষ্টদের মত, এখন থেকে ক্রমেই বাড়বে নাটকের বাজেট। ভালো নাটকও তৈরি হবে।

একসময় নাটক নির্মাণের পরে টেলিভিশনই ছিল প্রচারের একমাত্র মাধ্যম। এখন টেলিভিশনের পাশাপাশি প্রচারমাধ্যম হিসেবে সামনে এসেছে ইউটিউব ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। টেলিভিশন চ্যানেলকে একবার প্রচারের স্বত্ব দেওয়ার পর আবার সেই নাটকটি বিক্রি হচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। আবার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশের মাধ্যমে আজীবন আয়েরও একটি সুযোগ খুলছে।

গত ঈদুল আজহায় ‘ইতি মা’, ‘বোধ’, ‘যে শহরে টাকা ওড়ে’সহ বেশ কয়েকটি টেলিভিশন নাটক প্রশংসিত হয়। নাটকগুলো টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়ার পর ইউটিউব চ্যানেলেও প্রকাশিত হয়েছে। গত ঈদে লাইভ টেকনোলজিসের বেশ কয়েকটি নাটক প্রশংসিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক তামজীদ অতুল জানান, নানামাত্রিক প্রচারের সুযোগ থাকায় এখন টেলিছবি কিংবা নাটকে বাজেট বাড়ানো যায়। কনটেন্ট নিয়ে পরিকল্পনাও থাকে আলাদা।

টেলিভিশনের জন্য যখন নাটক বানানো হতো তখন বাজেট কম ছিল, এরপর স্পনসর প্রজেক্ট এলে একটু বাড়ল। এখন ইউটিউব ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আসায় তুলনামূলক ভালো বাজেট দেওয়া হচ্ছে। তবে একটা ভালো স্ট্যান্ডার্ড প্রোডাকশন বানানোর জন্য যে বাজেট দরকার, তা এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। এই ভাষ্য তরুণ নির্মাতাদের। যদিও নাটক থেকে আয়ের সূত্র নানা জায়গা থেকে হলেও সেই অনুপাতে নির্মাতারা সম্মানী পাচ্ছেন না। নির্মাতা আশফাক নিপুণ বলেন, ‘আমরা যখন টেলিভিশনে কাজ করতাম তখন রিলেটিভলি বাজেট পেতাম। টেলিভিশন একবার কি দুইবার অন–এয়ার করত। একটা ফর্মুলা ছিল। এখন একই প্রোডাক্ট যখন ত্রিমুখী ব্যবসা করবে এবং ইউটিউব ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আজীবন ব্যবসা করবে, সেই তুলনায় নির্মাতারা বাজেট পাচ্ছেন না। কারণ, ইন্ডাস্ট্রিতে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট এক্সারসাইজ করা হচ্ছে না।’

আমরা যখন টেলিভিশনে কাজ করতাম তখন রিলেটিভলি বাজেট পেতাম। টেলিভিশন একবার কি দুইবার অন–এয়ার করত। একটা ফর্মুলা ছিল। এখন একই প্রোডাক্ট যখন ত্রিমুখী ব্যবসা করবে এবং ইউটিউব ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আজীবন ব্যবসা করবে, সেই তুলনায় নির্মাতারা বাজেট পাচ্ছেন না।
আশফাক নিপুণ, নির্মাতা

যেহেতু একটি প্রোডাক্ট দিয়ে নানাভাবে আয়ের সুযোগ হচ্ছে, তাই নির্মাতাদের দাবি, প্ল্যাটফর্ম অনুযায়ী বাজেট নির্ধারণ করা উচিত। তবে কোনো কোনো নির্মাতা মনে করেন, একটি প্রোডাক্ট দিয়ে ত্রিমুখী আয় হলেও প্ল্যাটফর্ম অনুযায়ী আবার আয়ের ব্যাপারটি কমে গেছে। নির্মাতা মাহমুদ দিদার বলেন, ‘তিন জায়গা থেকে নাটকের আয়ের কথা বলা হচ্ছে, এটা খুব একটা সত্য নয়। ধরুন একটা নাটক বানানো হলো ৩ লাখ টাকায়। তা যদি চ্যানেল নেয়, চ্যানেল শুধু প্রচারের স্বত্ব নিচ্ছে ১ লাখ টাকায়। কিন্তু আমার খরচ ৩ লাখ টাকা। মানে ওই বাজেটটাই এখন ভাগ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, ইউটিউব থেকে এক অংশ পাচ্ছি কিংবা ওটিটি থেকে একাংশ পাচ্ছি। অর্থাৎ আগের বাজেটটাই ভাগ হয়ে যাচ্ছে। নির্মাতারা খুব একটা লাভবান হচ্ছে না। কারণ, নাটকটি নানাভাবে বিক্রি হলেও দিন শেষে আয়ের ভাগটা প্ল্যাটফর্মের মালিকেরাই ভোগ করে থাকেন। নির্মাতাদের জায়গা আগের মতোই আছে।’

টেলিভিশনের পাশাপাশি প্রচারমাধ্যম ইউটিউব ও ওটিটি চলে আসায় বাজেট বেড়েছে, এটা সত্য। তবে এখনো সবকিছু গোছানো নয়। জি সিরিজের কর্ণধার নাজমুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘এখন নাটকের বাজেট বাড়ছে। মাঝখানে বাজেট কমে গিয়েছিল। তবে কনটেন্ট ও পরিচালকভেদে নাটকের বাজেটের তারতম্য হয়।’

ইউটিউব ও ওটিটি আসার কারণে আয়ের সুযোগ বেড়েছে ঠিক, তবে এখনো পুরোপুরি কাঠামো তৈরি হয়নি। কারণ, ইউটিউব ও ওটিট প্ল্যাটফর্মে নাটক প্রচার বাড়ার সময়টাতেই করোনা মহামারি শুরু হয়ে যায়। ফলে সবকিছুর ওপর সেই প্রভাব আছে। তবে ভবিষ্যতে নাটকের বাজেট বাড়বে।

তিনি মনে করেন, ইউটিউব ও ওটিটি আসার কারণে আয়ের সুযোগ বেড়েছে ঠিক, তবে এখনো পুরোপুরি কাঠামো তৈরি হয়নি। কারণ, ইউটিউব ও ওটিট প্ল্যাটফর্মে নাটক প্রচার বাড়ার সময়টাতেই করোনা মহামারি শুরু হয়ে যায়। ফলে সবকিছুর ওপর সেই প্রভাব আছে। তবে ভবিষ্যতে নাটকের বাজেট বাড়বে।

কয়েক বছর ধরে বাজেট কম ও নানা কারণে নাটকের মান খারাপ হওয়ার যে অভিযোগ ছিল, তা ঘুচতে শুরু করেছে। গত ঈদুল আজহায়ও বেশ কয়েকটি নাটক প্রশংসিত হয়েছে। অনেক নাটকের তুলনামূলক বাজেট ভালো ছিল। টেলিভিশন, ইউটিউব ও ওটিটি—নাটক প্রচারের মাধ্যম বেড়ে যাওয়ায় নাটকের বাজেট বাড়বে, তৈরি হবে ভালো মানের নাটকও। তবে বাজার ঠিক হতে অপেক্ষা করতে হবে আরও।