সবাই ভীষণ ব্যস্ত। একে একে বের হচ্ছেন মহড়াকক্ষ থেকে। চেহারা দেখে বোঝা যায়, বিধ্বস্ত সবাই। মহড়ায় বেশ ধকল গেছে। মুখোমুখি পোশাক পরিকল্পক মহসিনা আক্তারের। বললেন, ‘ভাই, খুব ক্ষুধা লাগছে। একটা কিছু খেয়ে কথা বলি?’ কথা চালাই অন্য অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে। সময়টা মঙ্গলবার বিকেল। স্থান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিলেকোঠা।
বসন্তে আচানক বৃষ্টি স্থবির করে দিয়েছে নগরবাসীকে। তাতে কিছু যায়–আসে না অভিনয়শিল্পীদের। জোর কদমে এগিয়ে চলছে মহড়া। ১৪ মার্চ। আবারও জমে উঠবে শিল্পকলা একাডেমির প্রাঙ্গণ। সৈয়দ জামিল আহমেদ এবার শহীদুল জহিরের উপন্যাস ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ মঞ্চে নিয়ে আসছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও তার পরবর্তী বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নাটকের গল্প।
বাইরের লোকের মহড়ায় ঢোকা বারণ আছে। তাই মহড়া শেষে নাটকটি নিয়ে দু–চার কথা শুনতে দ্বারস্থ হই অভিনয়শিল্পীদের কাছে। যোজন মাহমুদ এই নাটকের অভিনেতা। জামিল আহমেদের সঙ্গে তাঁর প্রথম কাজ। তিনি বললেন, ‘জামিল স্যার রিজওয়ান যখন নির্দেশনা দেন, তখন জানি, আমার বন্ধুরা কাজ করছে। কিন্তু ওই প্রযোজনার জন্য কখন লোক নিয়েছে বুঝতে পারিনি। একটা ঈর্ষা ছিল। পরে যখন নাটকটি দেখি আরও আফসোস বেড়ে যায়। আগ্রহ হয়, জামিল স্যারের সঙ্গে একটি প্রযোজনায় কাজ করতেই হবে। সেই সূত্র ধরে খোঁজখবর রাখি। এই প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাই।’
যোজন মাহমুদ জানান তাঁর কাজ ও অভিজ্ঞতা নিয়ে। বলেন, ‘নাটকটি একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রযোজনা। কিন্তু শহীদুল জহির যেভাবে মুক্তিযুদ্ধকে দেখিয়েছেন, আমি অন্য কোনো নাটক, গল্প, উপন্যাসে এমনটি দেখিনি। আমি এই নাটকের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও তাঁর পরবর্তী বাস্তবতাটাকে যেন অনুভব করেছি।’ যোজন মাহমুদের সঙ্গে কথা চলে। তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন পিজু পারভেজ ও হাসান মুহাম্মদ তাবিন। গ্রুপ থিয়েটার নাট্যচর্চার সঙ্গে দুজনের কেউ যুক্ত নন। কাজ করছেন রেপার্টরি থিয়েটারের মাধ্যমে। বাংলাদেশে এখন রেপার্টরি থিয়েটারের মাধ্যমে কাজ চলছে। এই তরুণেরাও ঝুঁকছেন সেদিকে।
২০১৭ সালে রিজওয়ান নাটক দিয়ে বেশ সাড়া জাগান সৈয়দ জামিল আহমেদ। পেশাদারি নাট্যচর্চার দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি যাত্রা এটি। আয়োজনটি বেশ অর্থনৈতিকভাবেও সফল হয়। সেই সফলতাকে পুঁজি করে ‘স্পর্ধা’ নামের একটি পেশাদারি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে সৈয়দ জামিল আহমেদকে উপদেষ্টা করে। তারাই এই নাটকটি মঞ্চে আনছে। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ১৪ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। উদ্বোধনী দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়, ১৫ মার্চ বেলা সাড়ে ৩টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা, ১৬ মার্চ বেলা সাড়ে ৩টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা, ১৭ মার্চ বেলা সাড়ে ৩টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা, ১৮ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা, ১৯ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা এবং ২০ মার্চ বেলা সাড়ে ৩টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রদর্শিত হবে নাটকটি।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। ক্ষুধা মিটিয়ে চলে আসেন মহসিনা আক্তারও। তিনি আয়োজক স্পর্ধা প্ল্যাটফর্মের একজন সদস্য। নাটকটি নিয়ে বলেন, ‘এই সময়ে উপন্যাসটি নিয়ে কাজ করার কারণ হলো, এটি এমন একটি উপন্যাস, যা শুধু মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেনি, মুক্তিযুদ্ধ–পরবর্তীকালে কীভাবে রাজাকাররা আবারও শক্তিশালী হয়ে দাঁড়ায় তা দেখিয়েছে। সে কারণে মনে হয়েছে, এই সময়ে এটা করা দরকার।’ মহসিনা জানান, রিজওয়ান করার সময় টিকিটসংক্রান্ত জটিলতা হয়। এবার সেটি সহজ করার জন্য ব্যবস্থা করা হবে। প্রত্যাশা, আবারও জমবে মেলা নাট্যাঙ্গনে।