দীর্ঘ বিরতির পর ফিরছে আরণ্যকের দর্শকপ্রিয় নাটক ‘ময়ূর সিংহাসন’। রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর রাজারবাগের গঙ্গাসাগর দিঘির পাড়ে বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির প্রাঙ্গণে আয়োজিত শারদীয় নাট্যোৎসবে নাটকটি মঞ্চস্থ হবে। মঙ্গলবার ৮ অক্টোবর সন্ধ্যা সাতটায় বেইলি রোডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তনে দর্শনীর বিনিময়ে হবে নাটকের আরেকটি প্রদর্শনী।
আরণ্যক নাট্যদলের ৩২তম প্রযোজনা ‘ময়ূর সিংহাসন’। ১৯৯৯ সালে প্রথম মঞ্চে আনা হয় নাটকটি। ২০০৯ সালে হয় শততম মঞ্চায়ন। মান্নান হীরার রচনায় নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন শাহ আলম দুলাল। শততম মঞ্চায়নের পর অনিয়মিতভাবেই মঞ্চে আসে নাটকটি। এ কারণে মাঝে দীর্ঘদিনের বিরতি পড়ে। তবে এখন থেকে নিয়মিতই নাটকটি মঞ্চে থাকবে বলে জানালেন দলপ্রধান মামুনুর রশীদ।
‘ময়ূর সিংহাসন’ প্রসঙ্গে নাট্যকর মান্নান হীরা বলেন, ‘মফস্বল শহরে আমার শৈশব ও বাল্যকাল কেটেছে। ভীষণ রকম নিমজ্জিত ছিলাম সে সময়ের নাট্যকর্মের সঙ্গে। সেই বয়সে দেখা দেবতাতুল্য নাট্যাভিনেতাদের জীবন, কর্ম, বিশ্বাস, ত্যাগ-তিতিক্ষা আজও অন্তরে জ্বলছে। তারই আলোকে লেখা এই নাটকটি। দেখেছি সংসার-বন্ধন ছিন্ন করা অভিনেতাদের, গৃহহীন অভিনেত্রীদের, সমাজ প্রত্যাখ্যাত কুশীলবদের। সবাই মিলে মঞ্চের পাদপ্রদীপে যখন উচ্চারণ করতেন দেশপ্রেমের বাণী, তখন তার ঢেউ গিয়ে লাগত পথে-প্রান্তরের গণতন্ত্র আর স্বায়ত্তশাসনের রাজনীতিতে। অথচ সেই আলো জ্বালা মানুষদের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনে অনেকের অলক্ষ্যে ঘটে যেত বড় বড় ট্র্যাজেডি। তার ইতিহাস আমরা রচনা করতে পারিনি। সেই সব দেশপ্রেমিক মানুষের কথা স্মরণে নির্মিত এই নাটক।’ মান্নান হীরা মনে করেন, ‘বাংলাদেশে ষাটের দশকটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়টাতেই গড়ে ওঠে গণতন্ত্রের দাবি, ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা। আবার একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প তৎকালীন সামরিক শাসক ছড়িয়ে দিয়ে রচনা করেছে কালো অধ্যায়। সেই ভয়ানক আগুনে আজও জ্বলছে মানুষ—তার শিল্প, সাহিত্য এবং সংস্কৃতি। যার ভয়াবহ দায় আমাদের আজও বহন করতে হচ্ছে।’
রোববার বিকেল চারটায় পদাবলী কীর্তন পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় নাট্যোৎসবের তৃতীয় দিনের আয়োজন। এদিন পদাবলী কীর্তন পরিবেশন করবেন জয়পুরহাটের কুমারী লক্ষ্মী দেবী। এরপর সন্ধ্যা সাতটায় আরণ্যক নাট্যদল মঞ্চস্থ করবে ‘ময়ূর সিংহাসন’ নাটকটি। রাত নয়টায় স্বপ্নদল মঞ্চস্থ করবে ‘জাদুর প্রদীপ’। এটি নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। পরদিন সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় নাগরিক নাট্যাঙ্গন মঞ্চস্থ করবে ‘বাংলা আমার বাংলা ও সেই সব দিনগুলো’। এটি নির্দেশনা দিয়েছেন হৃদি হক। রাত নয়টায় চন্দ্রকলা থিয়েটার মঞ্চস্থ করবে ‘তন্ত্রমন্ত্র’।
মঙ্গলবার শারদীয় নাট্যোৎসবের সমাপনী সন্ধ্যায় বহুবচন নাট্যদল মঞ্চস্থ করবে ‘অনিকেত সন্ধ্যা’। নির্দেশনা দিয়েছেন আরহাম আলো। এদিন রাত নয়টায় নাট্যফৌজ মঞ্চস্থ করবে ‘এজন মুন্সির পোস্টার’। নির্দেশনা দিয়েছেন লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস।