একাডেমির ১ নম্বর ও ২ নম্বর ফটকের পকেট অংশ খোলা থাকবে।
ফটক খোলা হবে বিকেল সাড়ে পাঁচটায়।
কেবল টিকিট দেখিয়েই একাডেমি চত্বরে প্রবেশ করা যাবে।
শারীরিক তাপমাত্রা পরিমাপ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকবে।
মোট আসনের শতকরা ৩০ ভাগ টিকিট বিক্রি করা যাবে।
সংগঠনের কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতিপত্রের ব্যবস্থা করেছে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন।
‘করোনার ধাক্কা কাটিয়ে জাতীয় নাট্যশালা খুলছে ২৩ অক্টোবর, শুক্রবার। পালাকার করছে নাটক উজানে মৃত্যু। সময়: সন্ধ্যা ৭টা। তারিখ: ২৩ অক্টোবর ২০২০, শুক্রবার। স্থান: জাতীয় নাট্যশালা, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।’
হঠাৎ চোখ আটকে যায় এই পোস্টে। নাট্যকর্মীদের ফেসবুক ওয়ালে এমন পোস্ট দেখা যায়নি দীর্ঘদিন। করোনার কারণে জাতীয় নাট্যশালার হলগুলো ছিল বন্ধ। প্রায় সাত মাস পর খুলছে জাতীয় নাট্যশালা। প্রথম দিনে নাট্যশালার তিনটি হলেই জ্বলবে আলো।
১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ওয়েবসাইটে সচিব মো. নওসাদ হোসেনের স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে, একডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হল, এক্সপেরিমেন্টাল হল, স্টুডিও থিয়েটার হল, জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তন, জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তন আজ থেকে এবং সেমিনার কক্ষ, ট্রেনিং রুম ও মহড়া কক্ষসমূহ ২১ অক্টোবর থেকে সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত কেবল শুক্র ও শনিবার এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতেই প্রদর্শনী করা যাবে।
একাডেমির হল বরাদ্দের তালিকা অনুযায়ী আজ জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে থাকছে পালাকার নাটকের দলের নাটক ‘উজানে মৃত্যু’। সন্ধ্যা সাতটায় নাটকটি দেখা যাবে। পরীক্ষণ থিয়েটারে দেখা যাবে জাগরণী থিয়েটারের ‘রাজার চিঠি’ এবং স্টুডিও থিয়েটারে থাকছে খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠী ঢাকার ‘স্মরণ ও প্রমাঞ্জলী’। শুধু নাট্যশালায়ই নয়, বেইলি রোডের মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনেও আজ দেখা যাবে শৌখিন থিয়েটারের নাটক ‘ধূম্রজ্বালা’।
নাটক প্রদর্শনী কতটা চ্যালেঞ্জ এই করোনাকালে? পালাকারের দলপ্রধান আমিনুর রহমান বলেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে একটা দীর্ঘ সময় মিলনায়তন না-ও খুলতে পারে। এই সময়ে যাতে দলকে সচল রাখা যায়, তাই করোনার মধ্যেও অনলাইনে মহড়া করেছি। তাই দল গোছানোর ক্ষেত্রে খুব একটা মুশকিলে পড়তে হয়নি। তবে চ্যালেঞ্জ আছে দর্শকদের নিয়ে। এই নতুন পরিস্থিতিতে তাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে। তা ছাড়া স্বাস্থ্যবিধিকে এই মুহূর্তে গুরুত্ব দিচ্ছি সবচেয়ে বেশি। আরেকটা সুবিধার বিষয় হলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এই সময়ে প্রদর্শনীর হলভাড়া মওকুফ করেছে। তাই খরচের যে চাপ থাকার কথা ছিল, তা থেকে কিছুটা মুক্ত থাকতে পারছি।’
এই সময়ে যাতে দলকে সচল রাখা যায়, তাই করোনার মধ্যেও অনলাইনে মহড়া করেছি। তাই দল গোছানোর ক্ষেত্রে খুব একটা মুশকিলে পড়তে হয়নি। তবে চ্যালেঞ্জ আছে দর্শকদের নিয়ে। এই নতুন পরিস্থিতিতে তাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে। তা ছাড়া স্বাস্থ্যবিধিকে এই মুহূর্তে গুরুত্ব দিচ্ছি সবচেয়ে বেশি।আমিনুর রহমান, দলপ্রধান পালাকার নাটকের দল
কীভাবে প্রদর্শনী হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে, তারও একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে একাডেমির ওয়েবসাইটে। সেখানে বলা হয়েছে, দর্শকেরা একাডেমির ১ নম্বর ও ২ নম্বর গেটের পকেট অংশ দিয়ে ঢুকতে পারবেন। কেবল টিকিট দেখিয়েই একাডেমি চত্বরে প্রবেশ করা যাবে। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় খুলে দেওয়া হবে ফটক। নাটক শেষ হওয়ার ৩০ মিনিট পর ফটক বন্ধ হবে। একাডেমির ব্যবস্থাপনায় শারীরিক তাপমাত্রা পরিমাপ করা হবে। তবে দর্শকের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করবে আয়োজক সংগঠন। মোট আসনের শতকরা ৩০ ভাগ টিকিট বিক্রি করা যাবে। এ ছাড়া সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে পারবেন সর্বোচ্চ ৩০ জন।
তবে নাটকের দল ও সংগঠনের কর্মীদের জন্য বিশেষ অনুমতিপত্রের ব্যবস্থা থাকবে। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের মহাসচিব কামাল বায়েজীদ ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানা ও নিজেকে নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের উদ্যোগে ঢাকাস্থ নাটকের সংগঠন, যাদের সুনির্দিষ্ট দিবসে প্রদর্শনী কিংবা মহড়া থাকবে না, সে সমস্ত দলের সদস্যদের জন্য নাট্যশালায় প্রবেশে বিশেষ প্রবেশপত্র দেওয়া হবে। ঢাকার বাহিরের নাট্যবন্ধুদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। করোনাকালীন দুর্যোগ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য এটি একটি প্রক্রিয়া। প্রবেশপত্রের জন্য যোগাযোগ করুন জাতীয় নাট্যশালার ষষ্ঠ তলার থিয়েটার ক্লাবে প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে।’
করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে সারা দেশে নাট্য প্রদর্শনী বন্ধ ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। তারপর থেকে শিল্পকলা একাডেমিতেও নাটক মঞ্চায়ন বন্ধ। তবে গত ২৮ আগস্ট মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে আলো জ্বলার মধ্য দিয়ে ফের নাট্যাঙ্গন মুখর হয়। সেদিন লাল জমিন নাটকের মাধ্যমে মুখোমুখি হন অভিনয়শিল্পী ও দর্শক। এ ছাড়া কাঁটাবনে নিজস্ব মহড়াকক্ষে নাটকের দল প্রাচ্যনাট আয়োজন করেছে উঠান নাটকের মেলা ‘মহলা মগন’।