গতকাল ১১ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছে কুসুম সিকদার অভিনীত, পরিচালিত ও প্রযোজিত সিনেমা ‘শরতের জবা’। নিজের সিনেমার মুক্তি ছাড়াও কুসুমের কাছে ১১ অক্টোবর তারিখটা বিশেষ কিছু। ২০০২ সালের এই ১১ অক্টোবরেই ‘নতুন জীবন’ পেয়েছিলেন অভিনেত্রী। ২২ বছর পর সেই একই তারিখে আবার নতুন যাত্রা শুরু হলো তাঁর।
কুসুমের মতে, সিনেমা মুক্তির জন্য সময়টা সুবিধার নয়। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে অনেক দিন তারকাবহুল সিনেমা মুক্তি পায়নি।
কিন্তু ১১ অক্টোবর তারিখটা হাতছাড়া করতে চাননি তিনি। কিন্তু কেন? বলতে গিয়ে কুসুম ফিরে গেলেন ২২ বছর আগে। যে কুসুমকে তখন কেউই চেনেন না। সাধারণ এক নারী। সেদিন সন্ধ্যায় জীবনটা যেন বদলে গিয়েছিল তাঁর।
খোলাসা করে কুসুম বলেন, ‘আমি প্রথম পথচলা শুরু করি এই দিনে। “লাক্স–আনন্দধারা মিস ফটোজনিক” প্রতিযোগিতা দিয়ে ১১ অক্টোবর আমার ভাগ্য বদলে যায়। দিনটি আমি কখনোই ভুলতে পারি না। এবার সিনেমা মুক্তির জন্য যখন ডেট দেখছিলাম, তখন হঠাৎ লক্ষ করি, কোনো একটি শুক্রবার একই দিনে। সেই দিনে সিনেমা মুক্তি দিলে কেমন হয়। সেই ভাবনা থেকেই সিনেমাটি মুক্তি দিয়েছি। ১১ অক্টোবর আগে আমাকে নতুন জীবন দিয়েছিল। ২২ বছর পর ১১ অক্টোবরে আবার নতুন জন্ম হলো।’
গতকাল থেকে কুসুমের নামের সঙ্গে নতুন পরিচয় যুক্ত হয়েছে। কেবল অভিনেত্রী নন, তিনি একাধারে শরতের জবার পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার। এ জন্যই বারবার এটিকে ‘নতুন জন্ম’ বলছেন তিনি। আগে নায়িকা হিসেবে সিনেমার সঙ্গে থাকতেন। কিন্তু এবার কাঁধে নিতে হয়েছে বড় দায়িত্ব। যে কারণে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কীভাবে রাত আর কীভাবে দিন হচ্ছে, সেটাও কাজে মগ্ন থেকে ভুলে যেতে হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার কুসুম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিনেমার প্রচারে বেলা ১১টায় বের হয়েছি। প্রতিদিন বাসায় ফিরেছি রাত ১০-১১টায়। প্রচার থেকে শুরু করে ডিস্ট্রিবিউশন, পোস্টপ্রোডাকশনের সব কাজ একহাতে করতে হচ্ছে। এটা নতুন অভিজ্ঞতা। আগে জানতামই না, একটা সিনেমা মুক্তির জন্য এত দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এটা আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে, আমাকে আতঙ্কিত করেছে। আমাকে দীর্ঘ সময় চিন্তার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, যা হয়তো আমাকে নতুনভাবে অভিজ্ঞতা দেবে।’ তবে এটাও বলে রাখলেন, সিনেমা দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া জটিল হলেও কাজগুলো উপভোগ করেছেন।
তবে বিরূপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখিও হতে হয়েছে। দীর্ঘদিনের কাছের মানুষের ওপর কিছুটা ভরসা করেছিলেন। আশা ছিল, তাঁরা হয়তো নিজেদের জায়গা থেকে কিছুটা হলেও সহযোগিতা করবেন। কিন্তু কুসুম জানান, তাঁর টিম ও পরিবারের মানুষের বাইরে অন্য কারও কাছ থেকে সেই অর্থে সহায়তা পাননি। এমনকি নারী নির্মাতা ও প্রযোজক হিসেবেও তাঁকে পদে পদে বঞ্চিত হতে হয়েছে।
মন ভার করে কুসুম বলেন, ‘আমি যদি নারী না হতাম, তাহলে অনেক জায়গা থেকে সহায়তা পেতাম। শুধু একজন নারী হিসেবে নতুন পরিচয়ে আসায় আমাকে ইচ্ছা করে অনেকেই হয়তো সহায়তা করেননি। অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি, অনেক বাধা এসেছে, সেগুলো নারী না হয়ে আমি পুরুষ হলে ওভারকাম করা আরও সহজ হতো। আরও বেশি সহায়তা পেতাম। তবে আমি অভিজ্ঞতা নিয়েই সামনে এগোতে চাই। আমি থেমে থাকব না। আমার মতো করেই কাজ করে যাব।’
কুসুমকে সর্বশেষ দেখা যায় ‘শঙ্খচিল’ সিনেমায়। সেটা আট বছর আগে। সেই সিনেমায় অভিনয় করে পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। যে কারণে এবারের সিনেমাটিও তাঁকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। ‘এবার তো আর শুধু অভিনেত্রী নয়; পরিচালক, প্রযোজক হিসেবেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। আমি শুধু দর্শকদের উদ্দেশে বলব, আমার শুরু জিরো থেকে। আমি চেষ্টা করেছি সিনেমাটিকে সৃষ্টিশীল একটা জায়গায় নিয়ে যেতে। কষ্টের পাশাপাশি জীবনে আনন্দের দরকার আছে। দর্শক পূজার এই ছুটিতে আমাদের সিনেমাটি দেখুক। আলোচনা–সমালোচনা হোক, সেটা প্রত্যাশা করি,’ বলেন কুসুম শিকদার।
গতকাল রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সের বিভিন্ন শাখা, ব্লকবাস্টার সিনেমাস ছাড়াও চট্টগ্রামের বালি আর্কেডের সিনেপ্লেক্সেও চলছে ছবিটি। এতে কুসুম ছাড়াও অভিনয় করেছেন ইয়াশ রোহান, জিতু আহসান, শহীদুল আলম সাচ্চু, নরেশ ভূঁইয়া, নিদ্রা দে নেহা, মাহমুদুল ইসলাম, অশোক ব্যাপারী প্রমুখ।