রাত পোহালেই শুক্রবার সন্ধ্যায় জমকালো আয়োজনে ঢাকার ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের ২৫তম আসর বসছে। মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কারের প্রথম আসর বসেছিল ১৯৯৯ সালের ১২ মার্চ; সেই আসর থেকে ঢুঁ মেরে আসা যাক।
চিত্রনায়িকা শাবনূর ভেবেছিলেন, পুরস্কারটা তিনি পাবেন না। সেরা অভিনেত্রী হিসেবে সেই সময়ের আরেক ব্যস্ত নায়িকা পপিকে ঘিরে এফডিসিতে জোর চর্চা চলছিল। পপিই পাচ্ছেন, এমন গুজবও ছড়িয়ে পড়েছিল। তালিকায় ছিল মৌসুমীর নামও। সব মিলে শাবনূরের আশা তলানিতে নেমেছিল।
সেদিন সাদামাটা পোশাকে হাজির হয়েছিলেন শাবনূর। তবে দর্শকেরা শাবনূরকে খালি হাতে ফেরায়নি। পপি ও মৌসুমীকে পেছনে ফেলে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে শাবনূরের নামই ঘোষণা করেছিলেন অভিনেতা বুলবুল আহমেদ।
এমন ঘোষণায় শাবনূর মঞ্চে এসে বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। শাবনূরের মুখে কোনো কথাই নেই। হাঁপাচ্ছিলেন। দর্শকসারি থেকে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সিদ্দিক জামান নান্টু চেঁচিয়ে বললেন, ‘একটু পানি খেয়ে নাও।’ পুরস্কার গ্রহণের পর আনন্দে আটখানা শাবনূর নিজের আসনটি নাকি খুঁজেই পাচ্ছিলেন না!
পরে প্রথম আলোকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় শাবনূর বলেছিলেন ‘আমি খুশি, ভীষণ খুশি। এত খুশি লাগছে যে আমি এই মুহূর্তে কী বলব বুঝতে পারছি না।’
১৯৯৯ সালে আয়োজিত ‘মেরিল-প্রথম আলো তারকা জরিপ ও সমালোচক পুরস্কার ১৯৯৮’-এ তারকা জরিপে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার বাগিয়েছিলেন শাবনূর।
১২ মার্চ সন্ধ্যায় ঢাকার হোটেল শেরাটনের বলরুমে বসেছিল মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কারের প্রথম আসর। তারকা জরিপ ও সমালোচক পুরস্কার শাখায় মোট ১৫ বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়।
এই জমকালো আসরের কান্ডারি ছিলেন ছোট পর্দার তারকা জুটি আফজাল হোসেন ও সুবর্ণা মুস্তাফা। লেখক, সাংবাদিক আনিসুল হকের আমন্ত্রণে মঞ্চে এসে আফজাল হোসেন বললেন, ‘আমরা ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে এলাম।’ খানিকটা ভ্রু কুঁচকে সুবর্ণা মুস্তাফা বললেন, ‘কোত্থেকে!’
আফজাল হোসেন খোলাসা করলেন, ‘ইতিহাস থেকে।’ হেসে সুবর্ণা বললেন, ‘নাকি প্রাগৈতিহাসিক...!’ আফজাল হোসেন দর্শকদের বললেন, ‘মেরিল–প্রথম আলো তারকা ও সমালোচক পুরস্কারের প্রথম আসর হচ্ছে আজ। আজ এই যে আপনারা তালি দিচ্ছেন, এটাও কিন্তু ইতিহাস হয়ে থাকবে।’
মেরিল–প্রথম আলো তারকা ও সমালোচক পুরস্কারের প্রথম আসর হচ্ছে আজ। আজ এই যে আপনারা তালি দিচ্ছেন, এটাও কিন্তু ইতিহাস হয়ে থাকবে।আফজাল হোসেন
শাবনূরসহ মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের প্রথম আসরের পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা, শিল্পীদের নাম ইতিহাসে লেখা থাকবে। সঙ্গে প্রথম পুরস্কারের উপস্থাপক হিসেবে আফজাল-সুবর্ণা জুটির নামও লেখা থাকবে। টানা তিন ঘণ্টা উপস্থিত দর্শকদের মোহিত করে রেখেছিলেন এই জুটি।
পুরস্কারের পরদিন ১৯৯৯ সালের ১৩ মার্চ প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ‘তারার মেলায় এক আনন্দময় সন্ধ্যা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ১৭ মার্চ বিনোদনভিত্তিক সাময়িকী আনন্দ-তে পুরস্কার নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।
এসব প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা গেছে, মান্না ও শাকিল খানকে পেছনে ফেলে তারকা জরিপে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান রিয়াজ। সুচন্দার হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার পর মাইক্রোফোন হাতে রিয়াজ বলেছিলেন, ‘দর্শকের এত ভালোবাসা পাব, তা ধারণার অতীত ছিল। এটা শুধু পুরস্কার নয়, বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা।’
এরপর সেরা গায়ক হিসেবে তপন চৌধুরীর নাম ঘোষণা করা হয়। নিলুফার ইয়াসমিনের হাত থেকে পুরস্কার নেন তপন চৌধুরী। সেরা গায়িকার পুরস্কার পেয়েছেন সাবিনা ইয়াসমীন। সাবিনা ইয়াসমীনের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়ে সুবীর নন্দী বলেছিলেন, ‘আশা করব, প্রথম আলোর ৩৫–৩৬ বছর পূর্তিতেও এমন আয়োজন করবে।’
আশা করব, প্রথম আলোর ৩৫–৩৬ বছর পূর্তিতেও এমন আয়োজন করবে।’সুবীর নন্দী
পুরস্কার নিয়ে দুটি করে গান শুনিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমীন ও তপন চৌধুরী। সেরা ব্যান্ডের পুরস্কার পেয়েছে এলআরবি। লাকী আখান্দের হাত থেকে পুরস্কার নিয়ে হ্যাপী আখান্দ্ ও আজম খানকে পুরস্কার উৎসর্গ করেছেন আইয়ুব বাচ্চু। সেই আসরে গান শুনিয়েছিল রেনেসাঁ ব্যান্ড।
সেরা টেলিভিশন উপস্থাপকের পুরস্কার পেয়েছিলেন হানিফ সংকেত। টিভিতে জনপ্রিয় অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন জাহিদ হাসান। সেই অনুষ্ঠানে টাই পরে এসেছিলেন এই অভিনেতা। তাঁকে দেখে উপস্থাপক আফজাল কবিতার ছন্দে বলেছিলেন, ‘জাহিদের টাই, দেখে বোঝা উচিত ছিল উনি পুরস্কার পেয়েছেন তাই।’ জাহিদ হাসানও কম যান না, জবাবে বললেন, ‘আনিসুল হক সুন্দর জামাকাপড় পরে আসতে বলেছিলেন তাই।’
জাহিদ পুরস্কার গ্রহণের পর মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয় বিপাশা হায়াত ও তৌকির আহমেদকে। সেই অনুষ্ঠানের কিছুদিন আগেই বিয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন এই জুটি। হুমায়ূন ফরীদির কাছ থেকে বিটিভির সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার নেন বিপাশা হায়াত। এরপর মঞ্চে জাদু দেখান জুয়েল আইচ।
এটাই আমার বাংলাদেশের অস্কার।তারিক আনাম খান
এরপর সমালোচক পুরস্কার শাখায় সেরা অভিনেতা ও নাট্যকারের পুরস্কার জিতেছেন তারিক আনাম খান। পুরস্কার গ্রহণের পর তারিক আনাম বলেছিলেন, ‘এটাই আমার বাংলাদেশের অস্কার।’ তারিক আনামকে সায় দিয়ে আফজাল হোসেন বলেন, ‘অস্কার দরকার নেই, এটাই (মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার) অব্যাহত থাকুক, আমরা তাতেই অগ্রসর হব।’
অস্কার দরকার নেই, এটাই (মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার) অব্যাহত থাকুক, আমরা তাতেই অগ্রসর হব।আফজাল হোসেন
তবে তখনো চমক বাকি ছিল। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বলা হয়েছিল, একটা চমক আছে। শেষভাগে চমক নিয়ে গিটার হাতে মঞ্চে এলেন পশ্চিমবঙ্গের গায়ক সুমন চট্টোপাধ্যায় (কবীর সুমন)। করতালিতে তাঁকে অভিবাদন জানালেন দর্শকেরা। ‘প্রথমত আমি তোমাকে চাই’ গেয়ে এ আসরের ইতি টেনেছিলেন সুমন।
এ আসরের সূচনা করেছিলেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক (এখন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক) আনিসুল হক। শুরুতে বক্তব্য রেখেছিলেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু। এ আসরে চলচ্চিত্র, টিভির জনপ্রিয় তারকা, সংগীতশিল্পী, নির্মাতা, মডেলসহ আরও অনেকেই আলো ছড়িয়েছেন।