বিকট শব্দে মেঘ ডাকছে, থেকে থেকে চমকাচ্ছে বিদ্যুৎ। অন্ধকারে একটি বাড়ির পাশে একাকী দাঁড়িয়ে আছেন একজন। ধীরে ধীরে হেঁটে আলোর মধ্যে আসেন তিনি। স্পষ্ট হয় তাঁর চেহারা। তিনি আর কেউ নন, আফরান নিশো। এটি ‘সুড়ঙ্গ’–এর প্রথম টিজারের দৃশ্য। গত মে মাসে টিজারটি প্রকাশের পর থেকেই আলোচনায় আসে সিনেমাটি। পরে সেই আলোচনা আরও বাড়িয়ে দেয় ফোরটেস্ট বা পূর্বাভাস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিনেমার বিভিন্ন দৃশ্যের ঝলক নিয়ে তৈরি ফোরটেস্টটি হয়ে ওঠে আলোচনার বিষয়। অবশেষে দর্শকের অপেক্ষা ফুরাচ্ছে, আর কয়েক ঘণ্টা পরেই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ‘সুড়ঙ্গ’।
আবার রাফী, আবার সত্য ঘটনা
চরকি ও আলফা আই স্টুডিওজ লিমিডেটের যৌথ প্রযোজনায় আর রায়হান রাফীর পরিচালনায় এই সিনেমা দিয়েই বড় পর্দায় আফরান নিশোর অভিষেক হবে, তাঁর সঙ্গে থাকছেন তমা মির্জা। কয়েক বছর ধরে সত্য ঘটনা অবলম্বনে প্রেক্ষাগৃহ ও ওটিটির জন্য কনটেন্ট তৈরি করে আলোচনায় রায়হান রাফী। সুড়ঙ্গও তাই। ছবিটি সম্পর্কে আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাফী বলেছিলেন, এটি তাঁর স্বপ্নের কাজ হতে যাচ্ছে। ছবিটি করতে গিয়ে তাঁর অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল লোকেশন। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুট করেছেন। এমন সব জায়গা, যেখানে বছরের অর্ধেক সময় পানি থাকে। সেখানে সেট বানানো, ২০০ জনের টিম নিয়ে কাজ করাটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।
ছবিটি নিয়ে গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় নিশো বলেন, ‘সবার অ্যাপ্রিসিয়েশনে আমি মুগ্ধ। ছোট করে হলেও আমার কাজ নিয়ে সবাই যেভাবে বলছেন, এ জন্য আমি আমার মনের ভেতর থেকে কৃতজ্ঞ। ভালোবাসা দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে। এত ভালোবাসা আমি রাখব কোথায়?’
সিনেমাটিতে প্রথমবারের মতো জুটি হয়েছেন নিশো ও তমা মির্জা। নিশোর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে তমা বলেন, ‘এই সিনেমায় আমার চরিত্রটা একটু ট্রিকি। পরিচালক রাফীর সঙ্গে আমার আগে বেশ কিছু কাজ হয়েছে। তিনি কাজের প্রতি খুবই হেলপফুল। নিশো ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ। তিনি আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। নিশো ভাই আমার কাজটাকে আরও সহজ করে দিয়েছেন।’
‘ফারিয়া চমক’
‘সুড়ঙ্গ’তে আফরান নিশো ও তমা মির্জা আছেন—এটা আগেই জানা ছিল। তবে ছবিটির আইটেম গান ‘কলিজা আর জান’-এ বড় চমক হিসেবে হাজির হন নুসরাত ফারিয়া। ১২ জুন প্রকাশিত গানটিতে ফারিয়ার আবেদনময়ী রূপ, নিশোর বেসামাল নাচ ভক্তদের মুগ্ধ করেছে। গানটি নিয়ে ফারিয়া প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘(গান) শতভাগ মনের মতো হয়েছে। যেভাবে ভেবেছি, সবকিছুই ঠিকঠাক আছে। ঢাকার চলচ্চিত্রে এর আগে এত জাঁকজমক করে, এত সুন্দর করে, এত বাজেটের আইটেম গান হয়েছে কি না, জানা নেই। দর্শকের গানটি একবার দেখলে বারবার দেখার আগ্রহ হবে।’ গানটিতে ফারিয়ার সঙ্গে প্রায় চার শ নৃত্যশিল্পী অংশ নিয়েছেন। শুটিং করতেও চার দিন লেগেছে।
দেশীয় সিনেমার প্রেক্ষাপটে গানটির বাজেটও অনেক বেশি বলে জানান পরিচালক। রায়হান রাফী বলেন, ‘গল্পের প্রয়োজনে এই সিনেমায় একটি আইটেম গান দরকার ছিল। আমরা জোর করে রাখছি না। দর্শক ছবিটি দেখলেই বুঝতে পারবেন। তা ছাড়া সিনেমায় নতুনত্বও থাকল।’
‘ওটিটি আর সিনেমা হল একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী না’
‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তি উপলক্ষে গত সোমবার ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সিনেমার পরিচালক রায়হান রাফী, অভিনেতা আফরান নিশো, তমা মির্জা, আলফা আই স্টুডিওজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার শাকিল, চিফ অপারেটিং অফিসার সন্দ্বীপ শ্রীবাস্তব, চরকির হেড অব কনটেন্ট অনিন্দ্য ব্যানার্জি। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন তাঁরা।
শাহরিয়ার শাকিল বলেন, ‘১৫ বছর ধরে দর্শককে ভালো ও নতুন কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করছে আলফা আই। চরকিও দর্শকদের অন্য রকমের কনটেন্ট উপহার দিয়ে যাচ্ছে। “সুড়ঙ্গ”র মধ্য দিয়ে বেশ কটি নতুন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ফেরানো সহজ না, সেটা রাফী পেরেছেন বা পারেন। তমা মির্জা আমার অসম্ভব প্রিয় অভিনেত্রী, বারবার তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন। নিশোর সঙ্গে আমার বহুদিনের পরিচয়, দীর্ঘ যাত্রা আমাদের। সব মিলিয়ে এই সিনেমার সঙ্গে অনেক ইমোশন জড়িয়েছে। এখন মাত্র আর কয়েক দিনের অপেক্ষা।’
অনিন্দ্য ব্যানার্জি বলেন, ‘সিনেমা হলের জন্য চরকি এই প্রথম এত বড় উদ্যোগ নিয়েছে। ওটিটি আর সিনেমা হল যে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী না, সেটাই আমরা বোঝাতে চেয়েছি। দর্শক যদি সুড়ঙ্গ পছন্দ করেন, তবে বাংলা কনটেন্ট ইন্ডাস্ট্রির কল্যাণ হবে।’
প্রথম সপ্তাহে ২৮টি হলে মুক্তি পাচ্ছে ‘সুড়ঙ্গ’। নির্মাতাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভারতসহ উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে ধীরে ধীরে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। ছবিটির পেমেন্ট পার্টনার বিকাশ, এন্টারটেইনমেন্ট পার্টনার টিকটক ও মার্চেন্ডাইজ পার্টনার দারাজ।