যেখানে বাংলা সিনেমার কাছে পাত্তা পাচ্ছে না হলিউডের ছবি

‘হাওয়া’ সিনেমার পোস্টার
ছবি: সংগৃহীত

পোস্টার, ট্রেলার প্রকাশের পর আলোচনা ছিল। সিনেমাপ্রেমীরা তাঁদের বহুল প্রতীক্ষিত ছবিটি নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখিয়েছেন। কিন্তু ‘সাদা সাদা কালা কালা’—এই গান গান দিয়ে ‘হাওয়া’ সিনেমা হয়ে উঠেছে জনমানুষের ছবি। মুক্তির আগেই সিনেমার গানটি সবার মুখে মুখে। শহর থেকে সুদূর গ্রামেও ছড়িয়েছে গানটি। অবশেষে ২৯ জুলাই দেশের ২৪টি প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে। সিনেমাটি দেখতে দর্শকের ব্যাপক আগ্রহের প্রমাণ অগ্রিম টিকিট বিক্রির সংখ্যা। দেশের মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে আগাম টিকিট কাটার হিড়িক পড়েছে। এরই মধ্যে দেশের প্রায় সব কটি মাল্টিপ্লেক্সে দুই-তিন দিনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ‘হাওয়া’র টিকিট নিয়ে দর্শকের আগ্রহ আশাবাদী করছে চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্টদের। তাঁরা বলছেন, তরুণ নির্মাতারা এভাবে একের পর এক ভালো সিনেমা নির্মাণ করতে থাকলে, দর্শকের যে জোয়ার তৈরি হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। প্রযোজকেরা সিনেমায় আবার লগ্নি করতে শুরু করবেন, বাড়বে হলের সংখ্যাও।

মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ও প্রযোজক ইফতেখার নওশাদ জানান, তাঁর হলে এখন ‘পরাণ’ চলছে। আগামী শুক্রবার থেকে চলবে ‘হাওয়া’। ছবিটির অগ্রিম টিকিট বিক্রিও শুরু হয়েছে। বাংলা সিনেমার ভালো ব্যবসা নিয়ে নিজের আনন্দের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদে মুক্তি পাওয়া “পরাণ” দিয়ে দারুণ সাড়া পেয়েছি। আগে দর্শকের অভাবে আমার হলের নাইট শো প্রায়ই বন্ধ থাকত। এখন নাইট শো নিয়মিতই চলছে। সিনেপ্লেক্সের মতো অনলাইনে টিকিট বিক্রির সুযোগ থাকলে আরও অগ্রিম টিকিট বিক্রি করতে পারতাম।’

জলকেন্দ্রিক মিথ নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘হাওয়া’

এই প্রযোজক ও হলমালিকের মন্তব্য, তরুণেরা যদি এভাবে একের পর এক ভালো ছবি দর্শকদের দিতে পারেন, তাহলে সিনেমার ব্যবসা আগের মতো চাঙা হবে। ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’ ছবিতে দর্শকের উন্মাদনা দেখে মনে হচ্ছে বাংলা সিনেমার নতুন যুগের সূচনা শুরু হয়ে গেছে।’

‘হাওয়া’ নিয়ে উন্মাদনা সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছে মাল্টিপ্লেক্সগুলোর অগ্রিম টিকিট বিক্রি দেখে। স্টার সিনেপ্লেক্সের সব শাখায় প্রতিদিন ‘হাওয়া’র ২৬টি শো চলবে। আজ বুধবার দুপুরে মাল্টিপ্লেক্সটির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সিনেমাটির প্রথম তিন দিনের সব টিকিট বিক্রি প্রায় শেষ। এখন ‘পরাণ’-এর ১৮টি শো চলছে। প্রথম থেকেই ছবিটি হাউসফুল যাচ্ছে। এখন আমাদের এখানে হলিউডের সিনেমা বাংলা সিনেমার কাছে পাত্তা পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে বাংলা সিনেমার দর্শক জোয়ার শুরু হয়েছে।’ ‘হাওয়া’র তিন দিনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ার কথা জানালেন গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল মুভি থিয়েটারের অর্থ ব্যবস্থাপক আশীষ পাল, ‘আমাদের এখানে ১৯০ আসনের থিয়েটার হলের তিন দিনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এখন পরের দিনগুলোর টিকিট বিক্রি চলছে।’

প্রচারে ‘হাওয়া’ সিনেমার টিম

একই রকমের খবর দিলেন নারায়ণগঞ্জের সিনে স্কোপের নির্বাহী পরিচালক রবিও। তিনি বলেন, ‘আগামী তিন দিনের টিকিট সোল্ডআউট। যদিও আমাদের থিয়েটার হলটি মাত্র ৩৫ আসনের। আজই ২০০ টিকিট বিক্রি করেছি। ছবির “সাদা সাদা কালা কালা” গানটির গীতিকার ও সুরকার হাশিম মাহমুদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। এর কিছুটা প্রভাব পড়ছে টিকিট বিক্রিতে।’

এদিকে বুড়িগঙ্গার ওপারে লায়ন সিনেমাসের দুটি হলের একটির দুই দিনের আগাম টিকিট বিক্রি হওয়ার কথা জানালেন এর পরিচালক মুশফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘একটি হলের দুই দিনের টিকিট সব বিক্রি হয়ে গেছে। আরেকটি হলের টিকিট আজ থেকে অনলাইনে বিক্রি শুরু হয়েছে। যে অবস্থা দেখছি, তাতে আগামীকাল নাগাদ বাকি হলটিরও কয়েক দিনের আগাম টিকিট বিক্রি হয়ে যাবে।’

হাওয়া সিনেমায় চান মাঝি চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী

ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ‘হাওয়া’ নিয়ে দর্শকদের এমন আগ্রহে খুশি ছবির পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন। তিনি বলেন, ‘আমি মূলত বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করি। সিনেমা, সিনেমার প্রচারের বিষয়গুলো আমার জানা ছিল না। কিন্তু যখন ছবির পোস্টার ছাড়লাম, সাড়া দেখে চমকে গিয়েছিলাম। ট্রেলার প্রকাশে আরও বেশি সাড়া পেয়েছি। এরপর “সাদা সাদা কালা কালা” গানটি গণমানুষের হয়ে গেল।’

এই নির্মাতা মনে করেন পোস্টার, ট্রেলার, গান—সিনেমাটিকে এগিয়ে দিয়েছে। সুমন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণ-তরুণীর কাছে ছবিটি নিয়ে কথা বলতে গিয়েছি। গান করেছি। সব মিলে দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগটা বেশ শক্তভাবে করতে পেরেছি। যার ফলে আগাম টিকিটের হলে হলে ভিড় তৈরি হয়েছে। এখন দেখা যাক মুক্তির পর কী হয়।’ ‘হাওয়া’র বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, শরীফুল রাজ, সুমন আনোয়ার, নাজিফা তুষি, সোহেল মণ্ডল, নাসির উদ্দিন প্রমুখ।