প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে নির্মাণের সঙ্গে জড়িত মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সিনেমা, নাটক, ধারাবাহিকসহ নানান কালজয়ী কাজ দর্শকদের উপহার দিয়েছেন তিনি। দেশ-বিদেশের নানা চলচ্চিত্র উৎসবে সমাদৃত হয়েছে তাঁর পরিচালিত সিনেমা। এবার তিনি অভিনয় করছেন নিজ পরিচালিত সিনেমায়। যেদিন ছবিতে অভিনয়ের খবর প্রকাশ্যে এল, একই দিনে আরেকটি সুখবর এল দেশীয় চলচ্চিত্রের জন্য। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ও অভিনীত ছবিটি বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে জায়গা করে নিয়েছে।
চরকিতে ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’ প্রজেক্টে জনপ্রিয় ১২ জন নির্মাতা ভালোবাসার গল্প নিয়ে ১২টি চরকি অরিজিনাল ফিল্ম বানাচ্ছেন। এই পুরো প্রজেক্টের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন জনপ্রিয় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি নিজেই নির্মাণ করছেন দুটি সিনেমা। কিছুদিন আগেই ঘোষণা দেওয়া হয় ফারুকীর প্রথম সিনেমা ‘মনোগামী’-এর। ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’- বা ‘অটোবায়োগ্রাফি’ ফারুকী পরিচালিত আরেকটি সিনেমা।
‘অটোবায়োগ্রাফি’ বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের ২৮তম আসরের প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে। আগামী অক্টোবরে এই উৎসবেই হবে সিনেমাটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার। এশিয়া থেকে প্রতিষ্ঠিত চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য ‘জিসোক’ নামে এই প্রতিযোগিতা বিভাগে ‘অটোবায়োগ্রাফি’ এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। যার মধ্যে আছেন ফিলিপাইনের মাস্টার ফিল্মমেকার ব্রিলান্টে মেন্ডোজা, শ্রীলঙ্কার পাওয়ার হাউস প্রসন্ন ভিটানেজ, ইন্দোনেশিয়ার ইয়োসেপ অ্যাঙ্গি নোয়েনসহ আরও অনেকে।
বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার ও উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মিডিয়াস্টারের হেড অব স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন জারায়েফ আয়াত হোসেন, চরকির সিইও রেদওয়ান রনি, পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও অভিনেত্রী তিশাকে।
‘অটোবায়োগ্রাফি’ নিয়ে পরিচালক বলেন, ‘আমি নানা রকম গল্প বলার চেষ্টা করেছি। সেগুলোর একেকটা একেক রকমভাবে মানুষকে স্পর্শ করেছে। অভিনয় কেমন হওয়া উচিত, কোন গল্প বলা জরুরি—এসব নিয়ে সারাক্ষণই নিরীক্ষা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যে কাজটা কখনোই করার চেষ্টা করিনি, সেটা হলো অভিনয়। প্রথম দিকে এটা নিয়ে আমার মধ্যে ইতস্তত ভাব থাকলেও তিশা আমাকে একটা কথা বলে আমার সংশয় দূর করে দেয়। ও বলে, এই গল্প তুমি জীবনে একবারই করতে পারবে। করে ফেলো, প্লিজ!’
প্রথমবার ক্যামেরার পেছন থেকে সামনে কাজ করে কেমন লেগেছে, জানতে চাইলে ফারুকী বলেন, ‘অভিনয় তো একটা ভালনারেবল কাজ। আর এই গল্পে অভিনয় তো আরও ভালনারেবল ব্যাপার, যেখানে নিজের জীবনও কোনো না কোনো আঙ্গিকে লুকিয়ে আছে। তবে শুটিং শুরু হয়ে যাওয়ার পর তেমন কোনো আলাদা অনুভূতিই হয়নি। মনে হয়েছে, এটা তো স্বাভাবিক। শুধু একটা জিনিস অবশ্য আলাদা ছিল—শটের সময় মনিটরে থাকা হতো না। আমার ছোট ভাই কিবরিয়া মনিটরে থাকত। আর আমি শট শেষে গিয়ে প্লে-ব্যাক করতাম।’
‘অটোবায়োগ্রাফি’তে ফারুকীর সহশিল্পী তাঁর অভিনয়শিল্পী স্ত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। স্ত্রী যখন সহশিল্পী সে ক্ষেত্রে তাঁর কাছ থেকে অভিনয় শেখা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে ফারুকী বলেন, ‘অভিনয় শেখার ব্যাপার বলতে পারব না। কারণ, পরিচালক তো সবার আগে দেখতে পায় চরিত্রটা কীভাবে হাঁটে, কথা বলে, কি ভাবনাচিন্তা করে! ফলে এই চরিত্র কী করবে না-করবে, সেটা জানতামই। কিন্তু একটা ব্যাপার তো নিশ্চিত, সহশিল্পী যদি অসাধারণ কেউ হন, তাহলে অভিনয় সহজ হয়ে যায়। সহশিল্পী তাঁর মান দিয়ে অন্য শিল্পীর মানও ওপরে তুলে নিয়ে যেতে পারেন।’
‘অটোবায়োগ্রাফি’ প্রসঙ্গে ফারুকী বলেন, ‘এত বছরের ক্যারিয়ারে কয়েকটা প্রজন্মের ভালোবাসা পেয়েছি। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ছবিটা আমার আর তিশার সবচেয়ে পারসোনাল স্টোরি। আপনাদের ভালো লাগলে বা ভাবালে খুশি হব।’ এই সিনেমায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও নুসরাত ইমরোজ তিশা একসঙ্গে অভিনয়ের পাশাপাশি চিত্রনাট্য লেখার কাজটিও করেছেন। তিশার জন্য চিত্রনাট্য লেখার কাজটা প্রথমবারের মতো হলেও কাজটি তিনি বেশ আনন্দ নিয়েই করেছেন বলে জানান।
মাতৃত্বের পর এই সিনেমা দিয়েই নুসরাত ইমরোজ তিশা কাজে ফেরা। তিনি বলেন, ‘ইলহামের জন্মের পর এত তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করতে পারব, ধারণা ছিল না। থ্যাংকস টু ফারুকী! ও আমাকে সেই আত্মবিশ্বাসটা দিয়েছে যে আবার ফিট হয়ে কাজ করতে পারব। ইলহাম হওয়ার পর এমন আবেগপ্রবণ গল্পে কাজ করতে পেরেছি, সেটার জন্য আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি।’
নির্মাতা, স্বামী ফারুকীর সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, জানতে চাইলে তিশা বলেন, ‘ফারুকী খুব ভালো ডিরেক্টরের সঙ্গে সঙ্গে ভালো একজন অভিনেতা আগে থেকেই ছিল, কিন্তু সেটা ক্যামেরার পেছনে ছিল। এখন সবার সামনে চলে এল আরকি। এখন একটু ভয় লাগছে। অন্য ডিরেক্টর যদি ওকে নিয়ে কাজ শুরু করে, ও যদি নায়ক হয়ে যায়, তখন কী হবে?’ বলেই হাসতে থাকেন তিশা।
দর্শকদের জন্য তিশা বলেন, ‘যেকোনো সিনেমা নিয়েই তো একজন শিল্পীর অনেক প্রত্যাশা থাকে। আমারও আছে। বরং এটা নিয়ে আমার প্রত্যাশা অনেক বেশি। যেহেতু এটা আমাদের জীবনে অনেক বিশেষ একটা ছবি, আমার বিশ্বাস, দর্শকেরা ফিল্মটা দেখে হাসবে, কাঁদবে, কখনো রেগে যাবে, কখনো শান্ত হয়ে চিন্তা করবে এবং অনেক অনেক ভালোবাসা দেবে।’
চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘“মিনিস্ট্রি অব লাভ” প্রজেক্টে ফারুকী ভাইয়ের দুটি সিনেমাই গল্পে-প্লটে একদম ভিন্ন। “অটোবায়োগ্রফি” অন্য সব সিনেমা থেকে খুব আলাদা। কেননা, এই সিনেমায় ফারুকী ভাই প্রথমবারের মতো অভিনয় করেছেন। তাঁকে স্ক্রিনে দেখার জন্য আমরা সবাই মুখিয়ে আছি। সেই সঙ্গে এই প্রথম চরকি অরিজিনাল কোনো সিনেমা বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে যাচ্ছে, যেটা আমাদের জন্য গর্বের বটে।’