সিনেমার নায়ক বসে আছেন। তাঁকে ঘিরে ধরেছেন ভক্তরা। এমন সময় সেখানে গাড়ি নিয়ে এসে দাঁড়ালেন দিলদার। আর সঙ্গে সঙ্গে নায়কের সামনে থাকা ভক্তরা জড়ো হলেন দিলদারের সামনে। এমন ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটেছে।
এ ঘটনা জনপ্রিয় এক নায়কের মুখে শোনা। এর আগে চলচ্চিত্র পরিচালক মালেক আফসারী এক ফেসবুক লাইভে এমন একটি ঘটনা ভক্তদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছিলেন। এতেই বোঝা যায়, ঢালিউডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এই অভিনেতা। তারকাদের ছাপিয়ে জনপ্রিয় হয়েছিলেন দিলদার। সেই অভিনেতার আজ প্রয়াণ দিবস।
মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে যেন হারিয়ে যেতে বসেছেন এই অভিনেতা। তাঁকে এখন আর তেমন স্মরণ করা হয় না। এ তথ্য জানালেন দিলদারের পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ এই দিনে পরিবার যেটুকু আয়োজন করে এই যা।
পরিবারের সদস্যরা জানালেন, প্রতিবার ঘরোয়া মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে এই অভিনেতার জন্য দোয়া করা হয়। আগে এফডিসিতে স্মরণ করা হলেও এখন হয় কি না, সেটা বলতে পারলেন না পরিবারের সদস্যরা।
দিলদারের জামাতা হারুনুর রশিদ বলেন, ‘এখন মানুষ কি আর অন্যজনের খবর নেয়। কে কার খবর নেবে। এফডিসির কেউ আর খবর নেয় না। শিল্পীদের মধ্যে আসলে ওই বন্ধন নেই। তারা শুধু নামেই বলে শিল্পী সমিতি একটি পরিবার। সত্যিকারের পরিবার হলে তো কেউ না কেউ দিলদারের মতো অভিনেতার খবর রাখত।’
কেউ খবর রাখুক বা না রাখুক, এ নিয়ে তেমন অভিযোগ নেই দিলদারের পরিবারের। এই অভিনেতা মৃত্যুর সময় স্ত্রী ও দুই কন্যাসন্তান রেখে গিয়েছিলেন।
কেমন আছেন তাঁরা। হারুনুর রশিদ বলেন, ‘অনেকেই লেখেন দিলদার সাহেবের স্ত্রী–সন্তানেরা ভালো নেই, এটা মিথ্যা কথা। তাঁরা মনগড়া লেখা লিখেন। তাঁর স্ত্রী আমার ফুফু হন। তিনি এখনো সুস্থ এবং ভালো আছেন। তাঁর দুই মেয়ে ভালো আছেন। আমাদের পারিবারিক বন্ধনও ভালো। সবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয়।’
দিলদারের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মাসুমা আক্তার রুমা এবং ছোট মেয়ে জিনিয়া আফরোজ সোমা। মাসুমা দন্ত চিকিৎসক। তাঁদের এক ছেলে এক মেয়ে। মাসুমা পরিবার নিয়ে থাকেন গুলশানের নিকেতনে। ছোট মেয়ে জিনিয়া বসুন্ধরা এলাকায় থাকেন। তাঁর স্বামী পাঁচ বছর আগে ক্যানসারে মারা গেছেন। তিনি আর্থিকভাবে সচ্ছল।
দিলদারের স্ত্রী রোকেয়া বেগম থাকেন ডেমরা। দুই মেয়ের বাসায় প্রায়ই আসেন। মাসুমা আক্তার বলেন, ‘আমরা আম্মাকে সব রকম স্বাধীনতা দিয়েছি। তিনি যেটা ভালো মনে করেন সেটাই। তিনি যদি মনে করেন আমাদের সঙ্গে থাকবেন, সেখানে কোনো বাধা নেই। তিনি মাঝেমধ্যে ঢাকায় আসেন, আবার ডেমরায় থাকেন—এটা বেশ পছন্দ করেন। তাঁর বয়স ৬৮ বছরের মতো হবে। এখনো তিনি নিজের মতো থাকেন। মা নিজের খরচও আমাদের কাছ থেকে নিতে চান না।’
জানা যায়, ডেমরায় দিলদারের বাড়ি আছে, সেগুলো ভাড়া ও দিলদারের রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে যা আয় আসে, সেটা দিয়েই খরচ চলে যায়। তা ছাড়া রোকেয়া বেগমের পৈতৃক সম্পত্তির থেকে প্রাপ্ত অর্থে স্বাচ্ছন্দ্যে তাঁদের চলে যাচ্ছে। বাবার জন্য দোয়া চেয়ে মাসুমা বলেন, ‘আমরা ভালো আছি। অনেকেই মাঝেমধ্যে বিভ্রান্ত ছড়ান। এগুলো মানুষ অন্যভাবে নেয়। কারণ, বাবার জন্য এখনো আমরা সবাই সম্মান পাই। বাবার ভক্তরা আমাদের যে সম্মান দেন, সেটাই অনেক প্রাপ্তি। সেই সম্মান কেউ নষ্ট করবেন না।’ অনেকেই মনে করেন দিলদারের স্ত্রী ডেমরা বাসায় একা থাকেন। তাঁর দেখার কেউ নেই—এসব সত্য নয় বলে জানালেন পরিবারের সদস্যরা।
২০ বছর বয়সে তিনি প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। এর পর থেকেই নিজের জগৎ চেনাতে থাকেন এই অভিনেতা। দিনে দিনে তিনি কৌতুক অভিনেতা হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে থাকেন বাংলা চলচ্চিত্রে। একসময় তাঁর জন্য লেখা হতে থাকে আলাদা গল্প। এমনও সময় গেছে, প্রযোজকদের আস্থা ছিল দিলদার মানে হিট ছবি। মানুষকে হাসিয়েই তিনি পেয়েছেন যেমন খ্যাতি, তেমনি কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। অনেকে মনে করেন, দিলদার মারা যাওয়ার পর বাংলা চলচ্চিত্রে কৌতুক অভিনয়ের সেই জায়গাটা এখনো খালি রয়ে গেছে।
তাঁর অভিনয় ব্যতিক্রম, আঙ্গিক এবং বাচিক অভিনয়ে তাঁর স্বকীয়তা ছিল। সিনেমা হলে মুগ্ধ হয়ে সেই অভিনয় দেখতে যেতেন দর্শক।
হলে দর্শক টানতে ছবির প্রচারণায় আলাদা গুরুত্ব পেতেন এই কৌতুক অভিনেতা। টেলিভিশনের পর্দায় এখনো প্রয়াত অভিনেতা দিলদারের উপস্থিতি তেমনটাই জানান দেয়। গুণী এই অভিনেতা ২০০৩ সালে ১৩ জুলাই ৫৮ বছর বয়সে মারা যান দিলদার।
দিলদারের মা-বাবার দেওয়া নাম ছিল দেলোয়ার হোসেন। এদিকে এক মামার নামও ছিল দেলোয়ার হোসেন। তাই চলচ্চিত্রে আসার আগে ভাবলেন, নামটা বদলে ফেলবেন। সবার সম্মতিতে রাখলেন দিলদার হোসেন। বদলে যাওয়া এই নামেই তিনি ঠাঁই করে নেন দর্শকহৃদয়ে। দিলদারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ সব অবদানের স্বীকৃতি এখনো পরিবারের সদস্যরা যত্ন করে রেখেছেন। সেসবের মধ্যে দিয়েই সন্তানেরা বাবাকে স্মরণ করেন।