বড় সিনেমা, বড় প্রযোজক, বড় পরিচালক, বড় নায়ক—সব মিলিয়ে বড় পর্দায় ঝড় তুলতে আসছে ‘তুফান’। সব জল্পনাকল্পনা, গুঞ্জনের অবসান হলো। এবার রায়হান রাফীর পরিচালনায় বড় পর্দায় আসছেন বাংলাদেশের সুপারস্টার শাকিব খান।
বাংলা চলচ্চিত্রে শাকিব খানের এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। দুই বাংলার চলচ্চিত্রের কোলাবোরেশন নিয়ে আলফা আই, চরকি ও ভারতীয় স্বনামধন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসভিএফ ফিল্মস এবার এক হয়েছে। এরই মধ্যে ঘোষণা করা হলো এই তিন প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হচ্ছে বড় পর্দার দুটি সিনেমা।
আজ সোমবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বিকেল পাঁচটায় আয়োজন করা হয় এক সংবাদ সম্মেলনের। সেখানেই ঘোষণা দেওয়া হয় ‘তুফান’-এর। ৯ ডিসেম্বর ঘোষণা দেওয়া হয় রেদওয়ান রনি পরিচালিত সিনেমা ‘দম’-এর। যেই সিনেমার মূল চরিত্রে দেখা যাবে চঞ্চল চৌধুরীকে।
পরিচালক রায়হান রাফী সিনেমাটা নিয়ে বেশ রোমাঞ্চিত। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই এক্সসাইটেড। কারণ, একসঙ্গে আলফা, এসভিএফ ও চরকি—তিনটা বড় প্রতিষ্ঠান এক সুতায় গেঁথে দুটো সিনেমা বানাচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশের একমাত্র সুপারস্টার শাকিব খান, তাঁর সঙ্গে এটা আমার প্রথম সিনেমা।
সবচেয়ে বড় তিনটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, একজন সবচেয়ে বড় সুপারস্টার যখন একসঙ্গে হয়, তখন আসলে এই সিনেমা নিয়ে আশা করাই যায়। কেবল তো আমরা কাজ শুরু করলাম। সবার দোয়া চাই। তবে এটা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, “তুফান” বাংলা সিনেমার জন্য একটা মাইলফলক হতে যাচ্ছে।’
‘তুফান’ ছবিটি নিয়ে শাকিব খান নিজেও বেশ আনন্দিত। তিনি বললেন, ‘আমি সব সময় বলে আসছি, বাংলাদেশি সিনেমার সম্ভাবনা অপার। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও বড় একটা বাজার আছে। সারা বিশ্বে ৩০ কোটি বাংলা ভাষাভাষী রয়েছেন, তাঁদের শুধু ভালো মানের সিনেমা উপহার দিতে হবে। আর সিনেমা অঙ্গনে কাজের মানুষদের শুধু কাজের পরিবেশটা দিতে হবে। বাকিটা সিনেমাপ্রেমীরাই ঠিক করে নেবেন।’
নিজের অভিনীত সিনেমার উদাহরণ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সর্বশেষ “প্রিয়তমা” সিনেমা মুক্তির পর আমরা নতুন করে তা আবার দেখেছি। এই ছবি বাংলা সিনেমায় নতুন যুগের সূচনা করেছে। ফ্রান্স, ইতালি, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশে ছবিটি দেখার জন্য দর্শকের লম্বা লাইন, অগ্রিম টিকিট নিয়ে উৎসাহ–উদ্দীপনার খবর পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি।
খবরে যখন দেখেছি দেশের বাইরে সিনেমা দেখতে লম্বা লাইন, তা–ও আবার আমার দেশের—গর্বে বুক ভরে যায়। মনে মনে ভাবছি, এই স্বপ্নটাই তো আমি দেখছি। এখন সিনেমাপ্রেমী সবাইকে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। নতুন এই ছবি দিয়েও দুর্দান্ত কিছুর সূচনা হবে। গল্পটা নিয়ে এককথায় বলব, এমন গল্পের বাংলা সিনেমা এর আগে দেখা যায়নি। অন্য রকম কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে, যা সবাইকে আনন্দিত করবে, করবে গর্বিতও।’
আলফা আই স্টুডিওজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার শাকিল বলেন, ‘আলফা আই স্টুডিওজ সব সময় বাংলাদেশের বিনোদনজগতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। একটি অগ্রগামী চিন্তার প্রোডাকশন হাউস, আমরা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম যে বাঙালি দর্শক ভালো মানের কনটেন্ট দেখতে চান। আমরা প্রতিবারই সেটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এবার আলফা, এসভিএফ ও চরকি এক হয়েছি বাংলা চলচ্চিত্রের বাজারকে উন্নত করতে এবং বিশ্বব্যাপী দর্শকের কাছে পৌঁছাতে।’
শাহরিয়ার শাকিল আরও বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ শাসন করছে এমন দুটি সেরা প্রতিভাকে একত্র করছি আমরা। একমাত্র সুপারস্টার শাকিব খান এবং বর্তমান সময়ের হিট পরিচালক রায়হান রাফী এক হয়েছেন দর্শককে আরেকটি ব্লকবাস্টার সিনেমা দেওয়ার জন্য।’
২৮ বছর ধরে ‘রেইনকোট’, ‘চোখের বালি’, ‘অটোগ্রাফ’, ‘২২শে শ্রাবণ’–এর মতো সিনেমা নির্মাণ করে বাংলা সিনেমার ভান্ডার সমৃদ্ধ করেছে ভারতের প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ। প্রযোজনা সংস্থাটির পরিচালক ও সহপ্রতিষ্ঠাতা মহেন্দ্র সোনি বলেন, ‘আমরা বাংলা সিনেমায় একটি নতুন অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে। কারণ, এসভিএফ, আলফা আই, চরকি এবং মেগাস্টার শাকিব খানকে সঙ্গে নিয়ে এমন একটি প্রযোজনা সামনে আনতে যাচ্ছি, যা গল্প বলার স্কেলকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করবে। এই কোলাবোরেশন বাংলা চলচ্চিত্রকে অভূতপূর্ব বৈশ্বিক উচ্চতায় পৌঁছে দিতে প্রস্তুত, যা আমাদের সবার জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে থাকবে।’
চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুসময় চলছে। আমাদের জন্যও খুব আনন্দের সময়। আলফা আই, চরকি ও এসভিএফ মিলে বাংলা ভাষাভাষী দর্শককে হলমুখী করতে ও আন্তর্জাতিক মানের কনটেন্ট দেওয়ার জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছে। কেননা, এত বড় ক্যানভাসে এত বড় আয়োজনের বাংলা সিনেমা তথা বাঙালি দর্শকের জন্য এই সিনেমা আমাদের উপহার হবে।’