সিনেমার নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন ছিল ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই। নাটকের পরিচিত মুখগুলো নাম লিখিয়েছিলেন সিনেমায়। ব্যবসাসফল সেসব সিনেমায় পরিচিতি এনে দিলেও পরে আর সিনেমায় সেভাবে দেখা যায়নি এই অভিনেত্রীদের। কী কারণ?
জানা গেল, কেউ স্বেচ্ছায় সিনেমা থেকে দূরে সরে যান। কেউ আবার অভিমান করে নায়িকা হওয়ার পথে হাঁটেননি। কেউ চলচ্চিত্র নায়িকা হওয়ার পথে একের পর এক চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। হেঁটেছেন ভিন্ন পথে। ফিরে গেছেন ছোট পর্দার দুনিয়ায়।
‘প্রেমে পড়েছে মন প্রেমে পড়েছে’ গানটি তখন দর্শকদের মুখে মুখে ছিল। এটি ছিল মতিন রহমানের ‘রং নাম্বার’ সিনেমার গান। এই সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসিত হন অভিনেত্রী ঈপ্সিতা শবনম শ্রাবন্তী; কিন্তু পরে আর তাঁকে সিনেমায় দেখা যায়নি। সেই সময়ে তিনি অনেক সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন; কিন্তু নাম লেখাননি। এ নিয়ে জানতে চাইলে সোমবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেই সময়ে একের পর এক প্রস্তাব পেয়েছিলাম সিনেমার; কিন্তু করিনি।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আগে জানিয়েছিলেন, সেই সময়ে নাটকে বেশি অভিনয় করে স্বাচ্ছন্দ৵ বোধ করতেন। ফিল্মে অভিনয় করা তাঁর কাছে অনেক কষ্টের মনে হতো। তবে ‘রং নাম্বার’ সিনেমায় অনেক শর্ত সাপেক্ষে কাজ করেছিলেন। তিনি নিজের মতো করেই কাজ করতে পছন্দ করতেন। যে কারণে সিনেমার জনপ্রিয়তার পরেও তিনি নাটকেই নিয়মিত ছিলেন।
তখন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী, কোহিনুর আক্তার সুচন্দার পরিচালনায় ‘হাজার বছর ধরে’ সিনেমায় নাম লেখান। কলেজে পড়াশোনার সময়ে ২০০৫ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়। প্রথম সিনেমা দিয়ে রীতিমতো তারকা বনে যান অভিনেত্রী শারমিন জোহা শশী। পরে টুনি চরিত্রে জনপ্রিয়তায় একের পর এক সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছেন; কিন্তু বেশির ভাগ সিনেমার গল্পই ‘হাজার বছর ধরে’ সিনেমার সমপর্যায়ের না হওয়ায় সিনেমাগুলো ছেড়ে দেন। এ ছাড়া সেই সময়ে কাটপিস সিনেমার সংখ্যা বেশি হওয়ায় সিনেমার পরিবেশ ভালো ছিল না। তাঁর পরিবারও চাইত না তিনি সিনেমায় নিয়মিত থাকুন।
শশী বলেন, ‘সিনেমায় আমার ভাগ্য সহায় হয়নি। আর যখন দেখলাম না করতে করতে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে, তখন আর সিনেমা নিয়ে ভাবিনি। পরে নাটকেই নিয়মিত হই। আর সেই সময়ে বাংলা সিনেমায় মানসম্মত গল্পের সিনেমা তৈরি কম ছিল। তখন শুনতাম, কাটপিস সিনেমার যুগ চলছে। পরিবেশের কারণে পরিবার সিনেমায় আর যেতে দেয়নি।’ সিনেমায় শশীর নায়ক ছিলেন রিয়াজ।
প্রথম সিনেমাতেই নায়িকা হিসেবে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন জিনাত সানু স্বাগতা। তাঁর নায়ক ছিলেন চিত্রনায়ক মান্না। সিনেমার নাম ‘শত্রু শত্রু খেলা’। জয়নাল আবেদীন পরিচালিত সিনেমাটি ব্যবসায়িকভাবে লাভজনকও হয়। স্বাগতা এই সিনেমার পরে ভেবেছিলেন, হয়তো চিত্রনায়িকা হিসেবে অভিনয় করবেন। সেই চেষ্টাও করেন; কিন্তু পরে তাঁকে ব্যর্থ হতে হয়।
অভিমান নিয়ে স্বাগতা বলেন, ‘মান্না ভাইয়ের সঙ্গে সিনেমায় অভিনয় করে আমার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। সিনেমাটি থেকে আমি অনেক প্রশংসা পাই। পরে সিন্ডিকেটের আন্ডারে চলে সব চলে যায়। আমি অনেক চেষ্টা করেছি সিনেমা করে যেতে পারিনি। পরে আবার মান্না ভাইয়ের সঙ্গে সিনেমা করার কথা ছিল। তার পরেই মান্না ভাই মারা যান।’
কিছুটা থেমে স্বাগতা বলেন, ‘আমি তখনো চেষ্টা করেছি, লাভ হয়নি। মান্না ভাই মারা যাওয়ার পরে শাকিব খানের দাপট বেড়ে যায়। সেখানেও একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। সব সিনেমায় শাকিব আর অপু বিশ্বাস। আরও দুটি সিনেমায় কাজ করেছিলাম। পরে মন খারাপ করেই ঢালিউড ছাড়ি। আফসোস আমার এখনো আছেই। তখনই সিনেমায় যে পারফর্ম করেছি, পরে তো আরও ভালো করতাম; কিন্তু সুযোগও পেলাম। তখনো এখনকার মতো ইন্ডি ফিল্মও তেমন হতো না। সিনেমা নিয়েই আমার আগ্রহ বেশি ছিল।’
এরপর বলা যায়, ছোট পর্দার আরেক অভিনেত্রীর ফারহানা মিলির কথা। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘মনপুরা’ সিনেমা মুক্তির আগেই গানগুলো প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারকা বনে যান এই অভিনেত্রী। সিনেমাটি মুক্তির পরে বাংলা সিনেমা অঙ্গনে নতুন করে আলোড়ন গড়ে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের মনপুরা। ভক্তদের মুখে মুখে ছিল সিনেমার প্রশংসা; কিন্তু পরে আর সিনেমায় অভিনয় করেননি। অনেক প্রস্তাব পেলেও সেগুলো মনমতো হয়নি। এর আগে তিনি প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, ‘গল্প পছন্দ না হওয়ায় তিনি অভিনয় করেননি। একই ধাঁচের গল্পই আমার কাছে বেশি এসেছে। এমন কোনো গল্প পাইনি যেটা মনপুরাকে ছাড়িয়ে যাবে।’
প্রথম সিনেমা দিয়েই শাকিব খানের নায়িকা বনে যান অভিনেত্রী আনিকা কবির শখ। সিনেমার নাম ‘বলো না তুমি আমার’। সিনেমাটি ২০১০ সালে মুক্তি পায়। সিনেমার দর্শকদের কাছে বদলে যেতে থাকে শখের পরিচয়। পরে শখ নাম লেখান নিলয় আলমগীরের বিপরীতে ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’ সিনেমায়। এই দুই সিনেমার পরে আর সিনেমামুখী হননি শখ।
শখ জানান, সিনেমাতেই তিনি শখের বশে অভিনয় করেছিলেন। বলা যায়, হঠাৎ সিনেমায় আসা। একসময় সিনেমায় অভিনয় করতে চাইলেও পরে সিনেমা তাকে টানেনি। এখন আর সিনেমাতে অভিনয় নিয়ে তেমন কোনো ইচ্ছাই নাই। তিনি বলেন, ‘আমার সিনেমায় অভিনয় করার ইচ্ছা ছিল না। তবুও দুটি সিনেমায় অভিনয় করেছি। সিনেমার জন্য আমি সেভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। আমার আরও অনেক কিছু শিখে তারপর আসা দরকার। আর ছোট পর্দায় কাজ করাই আমার কাছে ভালো লাগে।’
নাটকে তখনো পরিচিত মুখ অভিনেত্রী ও মডেল রুমানা। এর মধে৵ই হঠাৎ নাম লেখান সিনেমায়। ২০০৮ সালে তাঁর অভিষেক সিনেমা ছিল ‘১ টাকার বউ’। সহশিল্পী হিসেবে শাকিব খান ও শাবনূরের সঙ্গে যাত্রা শুরু। পরবর্তী সময়ে ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’, পরান যায় জ্বলিয়া রে’ এবং ‘বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না’ সিনেমা তাঁকে নায়িকা হিসেবে পরিচিত করে তোলে।
২০১০ সালে ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব–অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। সিনেমায় নিয়মিত হওয়ার আভাস দিলেও পরে তিনি সিনেমা থেকে সরে যান। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। পরে সিনেমা থেকে কেন দূরে সরে গেলেন জানতে চেয়ে তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হয়; কিন্তু কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।