কে কাকে ছোট করছে, সেই বোধবুদ্ধি আমার আছে: অপু বিশ্বাস

‘লাল শাড়ি’ চলচ্চিত্র, অপু বিশ্বাস ও সাইমন সাদিক
‘লাল শাড়ি’ চলচ্চিত্র, অপু বিশ্বাস ও সাইমন সাদিক

সম্প্রতি বেসরকারি একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন ‘লাল শাড়ি’ ছবির জুটি অপু বিশ্বাস ও সাইমন সাদিক। একপর্যায়ে দর্শকদের উদ্দেশে দুই অতিথিকে তিন লাইনের একটি চিঠি লেখার আহ্বান করেন উপস্থাপক। অপু বিশ্বাস সন্তান আব্রাম খান জয়ের উদ্দেশে তিন লাইনের চিঠি লেখেন। অনুষ্ঠানে সেটি পড়ে শোনান সাইমন। চিঠিতে অপু লেখেন, ‘জয়, তুমি বড় হও। তোমার সঙ্গে মায়ের আশীর্বাদ আছে। তুমি তোমার ভাইকে অনেক ভালোবাসবে।’ ভাই বলতে শাকিব খানের আরেক সন্তান বীরের নামটি এখানে উল্লেখ না করলেও সাইমন যখন অপুর কাছে জানতে চান, ‘ভাই মানে বীর, রাইট?’ অপু হাসতে হাসতে মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দেন।

জয় ও অপু বিশ্বাস

বৃহস্পতিবার দুপুরে এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এর নিচে মন্তব্যের ঘরে ভক্ত-অনুসারীদের বেশ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বছর ধরে কানাঘুষার পর গত বছর বুবলী শাকিবের আরেক সন্তান শেহজাদ খান বীরকে প্রকাশ্যে আনেন। বিষয়টি নিয়ে তখন হইচই পড়ে যায় মিডিয়ায়। বীরের খবর প্রকাশ্যে এলেও এত দিন বীরকে নিয়ে কোনোই মন্তব্য করেননি শাকিবের আরেক সন্তান জয়ের মা অপু বিশ্বাস।

উনি যা যা করছেন বা করেন, তা তো আমার সন্তান দেখছেন। আমার সন্তানের তো বোঝার বয়স হয়ে গেছে। এখন জয়ের বয়সীরা অনলাইনে লেখাপড়া করে। আমি নাম বলব না, একজন তো একটা ভিডিও ছেড়েছেন। জয়ও সেই ভিডিও দেখেছে। সুতরাং এই সব ভিডিওতে তার ওপরও তো প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু আমি তো সেই কাজটি করব না

বীরের প্রতি জয়কে উপদেশমূলক এই বার্তা প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথম আলোকে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘পৃথিবীতে আমার কাছে সব সন্তানই পবিত্র। সব বাচ্চাই আমার স্নেহের। সন্তানের মানসিক বিকাশের জন্য পুঁথিগত বিদ্যার চেয়ে পারিবারিক শিক্ষা অতি জরুরি, দরকার। মানুষের সঙ্গে আচার–আচরণ কেমন হবে, আমি আমার বাচ্চাকে সেই শিক্ষা দিচ্ছি। তিন লাইনের বার্তায় সেটাই প্রকাশ করেছি আমি।’

শেহজাদকে নিয়ে শবনম বুবলী

কথার একপর্যায়ে বুবলীকে ইঙ্গিত করে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘উনি যা যা করছেন বা করেন, তা তো আমার সন্তান দেখছেন। আমার সন্তানের তো বোঝার বয়স হয়ে গেছে। এখন জয়ের বয়সীরা অনলাইনে লেখাপড়া করে। আমি নাম বলব না, একজন তো একটা ভিডিও ছেড়েছেন। জয়ও সেই ভিডিও দেখেছে। সুতরাং এই সব ভিডিওতে তার ওপরও তো প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু আমি তো সেই কাজটি করব না। আমি আমার সন্তানকে সঠিক পথে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলব।’

অপুর বক্তব্য, ‘আমি মনে করি, আমার পারিবারিক শিক্ষা মানুষকে সম্মান দেওয়া, ক্ষতি করা নয় এবং আমি সেটা করার চেষ্টা করি। কে কাকে ছোট করছে, সেই বোধবুদ্ধি আমার আছে। আমি অনেক দিন থেকেই এসব বিষয় নিয়ে মিডিয়া এড়িয়ে চলতে চেয়েছি। কিন্তু সিনেমার মানুষ হওয়ায় মিডিয়ার সামনে কথা বলতে গিয়ে টুকটাক তা সামনে চলে আসে।’

এই অভিনেত্রীর ভাষ্য, ‘আমার বাবা, মা ও কাকাদের শিক্ষা হচ্ছে, মানুষকে ছোট করে কোনো কিছু করবে না। যাতে করে অপর প্রান্তের মানুষ ছোট হয়ে যায়। এটি সুবুদ্ধির পরিচয় নয়। এমন কোনো কাজে নিজেকে যুক্ত করবে না, যাতে অন্যের ক্ষতি হতে পারে। আমার বাবা, মা, কাকা—কেউই বেঁচে নেই। কিন্তু চলার পথে তাঁদের স্মরণ করি, তাঁদের অনুকরণ করি আমি।’
অপুর কথা, এই পৃথিবীর জার্নিটা খুব বড় নয়, এখানে অন্য মানুষের ক্ষতি করে জায়গাটা আরও সংকুচিত যেন না হয়।

চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস

কিন্তু মাঝেমধ্যে পারিপার্শ্বিক কিছু ঘটনার কারণে অনেক সময় নিজে হতাশ হন, বিরক্ত বোধও করেন অপু বিশ্বাস। তিনি আরও বলেন, ‘আমার মাথায় ঢোকে না, ভাবি, কারও কারও পারিবারিক শিক্ষাটা এমন কেন? মানুষকে কীভাবে উপস্থাপন করতে হয়, কেন বুঝতে চায় না? একটা মানুষ তাকে ক্ষতি করেছে কি না, তা উপলব্ধি না করেই উল্টো ওই মানুষ সম্পর্কে অনর্থক বাজেভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করছেন, করে যাচ্ছেন। বিষয়টি দুঃখজনক।’
এদিকে ওই অনুষ্ঠানের চিঠির কারণে অপু বিশ্বাসকে ফেসবুকে তাঁর ভক্ত-অনুসারীরা বাহবা দিয়েছেন, প্রশংসা করেছেন।

মন্তব্যের ঘরে জারিন ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, ‘অপু আসলে ভালো মনের মানুষ। দোয়া করি, আবার তাঁদের সংসারজীবন ঠিক হয়ে যাক।’
নিপা ইসলাম নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘অপুর প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা বেড়ে গেল। ভালো থাকবেন অপু বিশ্বাস।’

তবে আইরিন তাহরিন নামের অন্য একজন হাসির ইমো দিয়ে লিখেছেন,‘নিজেকে মহান বানানোর অপচেষ্টা। যদিও এ ছাড়া আর উপায়ও নেই। কারণ, বাবা শাকিব খান দুই সন্তানকেই ভালোবাসেন।’