ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের পর আজ পাকিস্তানের ৪২টি মাল্টিপ্লেক্সের ১২৮টির বেশি পর্দায় মুক্তি পাচ্ছে ‘তুফান’। সাম্প্রতিক সময়ে অন্য কোনো ঢাকাই সিনেমা পাকিস্তানের এতগুলো হলে মুক্তি পায়নি।
জানা গেছে, পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের বড় দুই শহর করাচি ও হায়দরাবাদের ৬টি মাল্টিপ্লেক্স মুক্তি পাচ্ছে তুফান। এ ছাড়া পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোর, ইসলামাবাদ, মুলতান, ফয়সালাবাদ, গুজরানওয়ালা, গুজরাটসহ ১৩টি শহরের ৩৬টি মাল্টিপ্লেক্স মুক্তি পাচ্ছে ‘তুফান’। পাকিস্তানের দর্শকদের জন্য সিনেমাটি উর্দুতে ডাব করা হয়েছে।
‘তুফান’–এর উর্দু ট্রেলার মুক্তির পর থেকেই পাকিস্তানে ছবিটি নিয়ে শুরু হয় উন্মাদনা। ট্রেলার মুক্তির পর প্রতিক্রিয়া ভিডিও বানান দেশটির অনেক ইউটিউবার। তাঁরা সিনেমাটির অ্যাকশন, শাকিব খানের উপস্থিতির প্রশংসা করেন।
পাকিস্তানের দর্শকের মধ্যেও আগে থেকেই তুফান নিয়ে আগ্রহ লক্ষ করা যায়। ‘বাংলা সিনেমার কিং, অভিনন্দন পাকিস্তানে’, ‘স্বাগত শাকিব খান’, ‘সাপোর্ট ঢালিউডের শাকিব খান’, ‘বাংলাদেশের সুপারস্টারের অপেক্ষায়’, এমনই নানা মন্তব্য চোখে পড়েছে ‘পাকিস্তানি সিনেমা’ ফেসবুক পেজসহ দেশটির বেশ কিছু ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে।
বড় পরিসরে ‘তুফান’ সিনেমার এ মুক্তিতে বেশ উচ্ছ্বসিত শাকিব খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশি সিনেমার গ্র্যান্ড বিশ্ব যাত্রা কিন্তু “প্রিয়তমা” দিয়ে শুরু হয়েছে। “প্রিয়তমা”র গান এবং সিনেমা ছড়িয়েছে গ্লোবালি। সংবাদমাধ্যমে ওই সময়েই জানতে পেরেছি, সারা বিশ্বসহ পাকিস্তানেও আমার সিনেমা বা আমাকে নিয়ে তীব্র আগ্রহের কথা। “রাজকুমার”–এর ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
অবশেষে পাকিস্তানি সিনেমাপ্রেমীরা তাদের সিনেমা হলে “তুফান” দেখবে, তা–ও আবার ১২৮টির বেশি পর্দায়—এটা যেন হওয়ারই ছিল।
আর এটা শুধু আমার একার নয়, বাংলাদেশি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য দুর্দান্ত সংবাদ। পাকিস্তানি ফিল্মের বড় মাপের প্রোডাকশন হাউস আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী একটি প্রযোজনা সংস্থার কর্ণধারকে ফোন করে তুফান নিয়ে তাদের এক্সাইটমেন্টের কথা জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে দারুণ কিছু দেখার অপক্ষায় আছি।’
এক মাস ধরে পাকিস্তানের প্রেক্ষাগৃহের সামনে ‘তুফান’ সিনেমার পোস্টার, শাকিবের কাটআউট এই নায়কের চোখ এড়ায়নি। ভিনদেশের মানুষদের এ ভালোবাসায় আপ্লুত শাকিব খান বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরেই নাকি পাকিস্তানে এমনটা হচ্ছে। সেখানকার ইউটিউবাররা আমাকে ঘিরে অনেক ধরনের কনটেন্ট বানাচ্ছে, এমন খবর আমার ডিজিটাল টিম থেকেও কয়েকবার জানানো হয়েছে। বাংলাদেশি ফিল্মের একজন শিল্পী হয়ে আরেক দেশে নিজের দেশের ফিল্ম দিয়ে এক্সপ্লোর করতে পারাটা ভীষণ আনন্দের। “তুফান” মুক্তি নিয়ে ভক্তদের এই উচ্ছ্বাস আমাকে অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত করেছে। কারণ, দেশ–বিদেশের ভক্তরা, শাকিবিয়ানরা আমার সব সময়ের অনুপ্রেরণা। সবশেষে বলব, পাকিস্তানেরও মন জয় করুক “তুফান”।’
বাংলাদেশি সিনেমার বাজার বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত উল্লেখ করে শাকিব খান আরও বলেন, ‘“প্রিয়তমা”, “রাজকুমার”, “তুফান” সেই নজির রেখেছে। একটা ফিল্মকে আরেকটা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’
পাকিস্তানে মুক্তি বিষয়ে সিনেমাটির অন্যতম প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে আমরা বেশ ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। এক মাস ধরে সেখানের সিনেমা হলগুলোতে ছবিটি নিয়ে দারুণ উৎসাহ চোখে পড়েছে। সিনেমাটির উর্দু ডাবিং নিয়েও অনলাইন, অফলাইনে প্রশংসা পেয়েছি।’ পাকিস্তানে মুক্তি নিয়ে বেশ আশাবাদী এই প্রযোজক। তাঁর কথায়, ‘দেখুন ছবিটি নিয়ে শুধু দেশে নয়, বাইরেও আমরা সাফল্য পেয়েছি। সব মিলিয়ে পাকিস্তান নিয়েও আমরা দারুণ আশাবাদী। আশা রাখি সিনেমাটির সাফল্যে হলের সংখ্যা আরও বাড়বে।’
চলতি বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় রায়হান রাফীর ‘তুফান’। ছবিতে নব্বই দশকের একজন গ্যাংস্টারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শাকিব খান। সিনেমাটিতে আরও অভিনয় করছেন মিমি চক্রবর্তী, চঞ্চল চৌধুরী, মাসুমা রহমান নাবিলা, মিশা সওদাগর প্রমুখ। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে আলফা-আই স্টুডিওজ লিমিটেড; ডিজিটাল পার্টনার চরকি এবং ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে আছে এসভিএফ।