একসময়ের ছোট পর্দার ব্যস্ত অভিনয়শিল্পী শাহরিয়ার নাজিম জয় এখন পুরোদস্তুর উপস্থাপক। ৩০০ সেকেন্ড নামে অনুষ্ঠান যেমন উপস্থাপনা করেন, তেমনি ৩০০০ সেকেন্ডের অনুষ্ঠান উপস্থাপনায়ও সিদ্ধহস্ত এই তারকা। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন বিষয় ঘিরে তারকাদের নিয়ে ফেসবুক লাইভও করে থাকেন। এই অভিনয়শিল্পী ও উপস্থাপক গতকাল শনিবার তাঁর গায়িকা মামাতো বোন দিঠি আনোয়ারসহ একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘আমার বন্ধু। তার ডামি চরিত্রে অভিনয় করে আমার অভিনয়জীবন শুরু হয়েছিল। সিনেমার নাম “শাস্তি”। তার কারণে আমি নায়িকা ববিতার কোলে উঠতে পেরেছিলাম।’
জয়ের মামা দেশবরেণ্য গীতিকবি এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ১৯৮২ সালে ডিসেম্বরে তিনি ‘শাস্তি’ ছবিটির শুটিং শুরু করেন। পরিচালক হিসেবে এটি ছিল গাজী মাজহারুল আনোয়ারের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র।
এর আগে তিনি ‘নান্টু ঘটক’ নামে ছবিটি পরিচালনা করেন। ১৯৮৪ সালে ২ মার্চ মুক্তি পাওয়া ‘শাস্তি’ ছবিটি ওই বছরের তৃতীয় ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ছিল। একই বছরে মুক্তি পাওয়া ‘নসীব’ ছবিটি ছিল বছরের সবচেয়ে হিট ছবি। দ্বিতীয় ব্যবসাসফল ছবির তালিকায় ছিল ‘রসের বাইদানি’।
এদিকে ‘শাস্তি’ ছবি নিয়ে জয়ের ফেসবুক পোস্ট প্রসঙ্গে জানতে গতকাল সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হয়। জয় জানালেন, তখন তিনি তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে পড়তেন। একই ক্লাসে পড়তেন তাঁর মামাতো বোন গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কন্যা দিঠি আনোয়ার। ‘শাস্তি’ ছবির শুটিং সময়ে তাঁদের বার্ষিক পরীক্ষা ছিল। তাই জয়ের মামি জোহরা গাজী মেয়ে দিঠিকে শুটিং করতে যেতে দেননি। তার আগে অবশ্য কিছুদিন ছবিটির শুটিং করেছিলেন দিঠি। ওই ছবিতে দিঠি অভিনয় করেছিলেন ববিতার ছোট ভাইয়ের চরিত্রে।
শাহরিয়ার নাজিম জয় বললেন, ‘আমি আর দিঠি ক্লাস থ্রিতে পড়তাম। তখন মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি গার্লস স্কুলে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত ছেলেরাও পড়ত। দিঠির ও আমার ফাইনাল পরীক্ষা। দিঠির মা ছিলেন খুব কড়া। পরীক্ষার আগে শুটিংয়ের শিডিউল পড়ায় মামি কোনোভাবেই অনুমতি দেননি। এদিকে ছবির অভিনয়শিল্পী নায়ক রাজ্জাক তখন ভীষণ ব্যস্ত। কুমিল্লার ময়নামতি পাহাড়ে ক্লাইমেক্স শুটিং হবে। ওই ছবির মেইন শিশুশিল্পী কিন্তু দিঠি। মামি দিঠিকে আটকে দিয়েছেন। মামা-মামির এ নিয়ে খুব ঝগড়া হয়ে গেল। এদিকে দিঠি ছাড়া ছবিটিও হবে না। মামা করল কি, আমাকে নিয়ে চলে গেল। আমারও পরীক্ষা। আমাকে নিয়ে দিঠির ড্রেস পরিয়ে ববিতার কোলে উঠিয়ে তাঁকে বললেন, ক্যামেরা ক্লোজ ধরলে ওর চোখটা একটু ঢেকে রাখবা (হাসি)।’
কথায় কথায় জয় বললেন, ‘সারা দিন ময়নামতি পাহাড়ে ববিতার কোলে। কী অ্যাকশন, ববিতাকে মেশিনগান ধরে রাখছে রাজ্জাক। আমাকেসহ কিডন্যাপ করছে। সোহেল রানা নিচে থেকে পুলিশ বাহিনী নিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। ওদিকে ভিলেন রাজ। ভয়াবহ দৃশ্য। সোহেল রানা হচ্ছে ববিতার প্রেমিক। ববিতা ধনীর মেয়ে, রাজ্জাকের শত্রু তাঁর বাবা। আর আমি ববিতার ছোট ভাই। দিঠিরে ওই ছবিতে ভাই বানানো হয়েছে। আসলে ক্লাস থ্রিতে ছেলে আর মেয়ে কি? আমারও তিন দিন পর পরীক্ষা। শুটিং শেষ করে পরদিন চলে এলাম। দিঠি বরাবরই ফার্স্ট সেকেন্ড হতো—সেবারও তাই হয়েছে। আমি যথারীতি ডাব্বা পাইতাম, ডাব্বাই পাইছি। মানে পাস করছি, তবে ফার্স্ট, সেকেন্ড ও থার্ড হইনি আরকি।’
মজার ছলে জয় বললেন, সেদিন দিঠির কারণে আমাকে পরীক্ষার মধ্যে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় শুটিং করতে যেতে হয়েছিল। আর দিঠি আরাম করে পরীক্ষা দিয়ে ঠিকই সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে। আমার অভিশাপে তাই দিঠি আর অভিনয় করতে পারেনি। আমিই এখনো করছি। এটা আমার সঙ্গে কনসপ্রেসি। (হাসি)। তবে দিঠি কিন্তু ঠিকই গান করছে।’