বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাক। দেশের চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রেও তাঁর অবদান রয়েছে। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট তিনি মারা যান। নায়করাজ রাজ্জাকের প্রয়াণের পাঁচ বছর উপলক্ষে গতকাল রোববার মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক ও শিল্পী সমিতি। এ ছাড়া তাঁকে স্মরণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন তাঁর ভক্ত-অনুরাগীসহ চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হন। ২২ বছর বয়সে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। তখন রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামে ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা পান। তারপর নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এই কিংবদন্তি। রাজ্জাক শুধু একজন নায়ক হিসেবেই নন, পরিচালক হিসেবেও বেশ সফল। সর্বশেষ তিনি ‘আয়না কাহিনী’ সিনেমাটি নির্মাণ করেন। নায়ক হিসেবে নায়করাজ প্রথম অভিনয় করেন জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’ সিনেমায়। এতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন সুচন্দা। তাঁর দুই ছেলে বাপ্পারাজ ও সম্রাটও চলচ্চিত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও তাঁকে নিয়ে ফেসবুকে অনেকে স্মৃতিকথা লিখেছেন। কারও লেখায় আবার ওঠে এসেছে এই কিংবদন্তিকে হারিয়ে শূন্যতার কথাও।
রাজ্জাককে স্মরণ করে অঞ্জনা লিখেছেন, ‘আপনার প্রয়াণদিবসে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি, বাংলা চলচ্চিত্রের মহান কিংবদন্তি, একাধিকবার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মহানায়করাজ রাজ্জাক ভাই, আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের পরিপূর্ণ একটি অধ্যায় যাঁকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। কয়েক যুগ বাংলা চলচ্চিত্র সমৃদ্ধিশালী হয়েছে যাঁর অদম্য পরিশ্রম, সততা, নিষ্ঠা, কর্মদক্ষতা, দর্শকপ্রিয়তায়। খ্যাতির শীর্ষে নিজের অবস্থানে যিনি অধিষ্ঠিত হয়ে রয়ে গেছেন মহানায়করাজ রাজ্জাক হয়ে। আপনিই একমাত্র নায়ক, যাঁর অবস্থান ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে খ্যাতির সর্বোচ্চ আসনে দীপ্তিময় সূর্যের ন্যায় সমুজ্জ্বল ছিল। এককথায় আপনি অনন্য, আপনি মহান শিল্পী। বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি আপনার কাছে চিরঋণী। আমি নিজে সৌভাগ্যবতী আপনার সাথে জুটি হিসেবে ৩৫টার মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি, এর মধ্য বেশির ভাগ সুপার-বাম্পার হিট।’অরুণা বিশ্বাস লিখেছেন, ‘নায়করাজ রাজ্জাক, আপনি নেই, আমাদের আর কে আছে? আপনার মতো কেউ নেই। প্রণাম।’শাকিব খান লিখেছেন, ‘চোখের সামনে না থাকলেও আপনার অদৃশ্য স্নেহ সব সময়ই আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে! যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলাদেশের সিনেমা থাকবে, তত দিনই নায়করাজ রাজ্জাক আমাদের সকলের হৃদয়ে অহংকার হয়ে থাকবেন। আপনার আত্মার শান্তি কামনা করি। শান্তিতে থাকুন আমাদের নায়করাজ।’রাজ্জাকের সঙ্গে চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী চরিত্রে অভিনয় করেছেন গায়ক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক ইমন সাহা। তাঁর সঙ্গে পর্দা ভাগাভাগি করাটাকে জীবনের সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য মনে করছেন তিনি। রাজ্জাক নিয়ে ইমন সাহা লিখেছেন, ‘আজ নায়করাজ রাজ্জাকের চাচার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি এই কারণে, “রাম রহিম জন” চলচ্চিত্রে শিশু অভিনেতা হিসেবে তাঁর সাথে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর নির্দেশনায় চারটি সিনেমায় সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি। তবে এসব গল্পের চেয়েও বেশি, তিনি ছিলেন আমার বাবার বিশেষ বন্ধু, আমার খুব প্রিয় রাজ্জাক কাকু। তিনি এখনো আমার সর্বকালের সবচেয়ে চলচ্চিত্র তারকা। সৃষ্টিকর্তা তাঁর আত্মাকে চিরশান্তিতে রাখুন।’অমিত হাসান লিখেছেন, ‘নায়করাজ রাজ্জাকের না ফেরার দেশে পাঁচ বছর। আঙ্কেল, আল্লাহর কাছে আপনার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ আপনাকে বেহেশত নসিব করুন।’ নায়করাজ রাজ্জাককে স্মরণ করে ২০১৭ সালের নিজের লেখা একটি কবিতাও পোস্ট করেছেন এই ঢালিউড তারকা।রাজ্জাকের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ হয়েছে চিত্রনায়িকা নিপুণের। প্রয়াণের এই দিনে তিনি লিখেছে, ‘মুকুটটা তো পড়ে আছে, রাজাই শুধু নেই।’ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা “স্বাধীনতা পদক”প্রাপ্ত বরেণ্য অভিনেতা, আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় পিতৃপ্রতিম অভিভাবক নায়করাজ রাজ্জাক আঙ্কেলের প্রয়াণদিবসে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। হে কীর্তিমান কালপুরুষ, ওপারে ভালো থাকুন, প্রভুর চিরশান্তির ছায়াতলে।’রাজ্জাক ছাড়া চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি রাজাবিহীন রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন সাইমন সাদিক। তিনি বলেছেন, ‘রাজাবিহীন রাজ্যে আজ ধ্বংসের খেলা চলছে! আপনার রাজ্যের সুনাম আমরা প্রতিনিয়ত নষ্ট করছি জনাব! কিন্তু জনাব, চিন্তা করবেন না! এখানে নিশ্চয়ই আবার ভালোবাসার খেলা হবে! আর জান্নাত থেকে আপনি হাসবেন। মহান আল্লাহ আপনাকে জান্নাত দান করুন, স্যার।’