এক সপ্তাহ শুটিং করার পর অনিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের জায়েদ খান ও কলকাতার নায়িকা সায়ন্তিকার সিনেমা ‘ছায়াবাজ’-এর বাকি কাজ। রোববার রাতে প্রথম আলোকে ছবির প্রযোজক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নৃত্য পরিচালক মাইকেল বাবুর সঙ্গে সায়ন্তিকা ও জায়েদ খান গানের শুটিং করতে চাননি। তাঁরা দুজন মিলে মাইকেলকে অপমান–অপদস্ত করেছেন। ৬ সেপ্টেম্বর লোকেশনে কাজ না করে তাঁরা মাইকেলকে সারা দিন বসিয়ে রেখেছিলেন। তাঁরা গাড়ি থেকেই নামেননি। এখন মাইকেলের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। শুটিং নিয়ে নানা ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে, তা না হলে কাজ করব না। প্রথম ধাপের শুটিংয়ে আমার প্রায় ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। প্রয়োজন হলে জলে যাবে টাকা, তা–ও আর এই ছবির কাজ শেষ করব না।’
এই প্রযোজকের কথা, ‘আমার দেশের শিল্পীকে অপমান করবে, সেটা আমি একজন সিনেমার মানুষ হয়ে মেনে নেব না। কারণ, আমার দেশকে অন্য দেশের মানুষ এসে ছোট করতে পারেন না। আজ মাইকেলকে অপমান করেছে, কাল পরিচালকের সঙ্গে করত, আরেক দিন হয়তো ইউনিটের অন্য কারোর সঙ্গে করত। সেটি হতে দেব না। এর সমাধান না হলে কাজ আর করব না। যা ক্ষতি হয় হবে।’
এই প্রযোজক জানান, এই গল্প নিয়ে সিনেমা করার কথা ছিল না তাঁর। তাঁর দাবি, ‘এই গল্প নিয়ে একটি ওয়েব ফিল্ম বানানোর কথা ছিল। কিন্তু জায়েদ খানের অনুরোধে এই সিনেমা শুরু করা। তা না হলে আমি করতাম না। অথচ জায়েদ খান ও সায়ন্তিকা মিলে ফাঁসিয়ে দিল আমাকে। কী আর করার, সব বিচার ওপরওয়ালার ওপর ছেড়ে দিলাম।’
অন্যদিকে ছবির শুটিংকে ঘিরে প্রযোজকের নামে নানা ধরনের অভিযোগ করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন নায়ক-নায়িকা দুজনই।
সায়ন্তিকা গণমাধ্যমে বলেছেন, শুটিং চলাকালীন নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা ছিল। এভাবে শুটিং করা সম্ভব নয়। একটি সিনেমায় কাজ করতে হলে উপযুক্ত টিমওয়ার্ক দরকার, সেটি এই শুটিংয়ে ছিল না। যদিও প্রথমে নৃত্যশিল্পী মাইকেলের সঙ্গে আমার ঝামেলা হয়েছিল। কিন্তু সেটি বড় ইস্যু নয়। এখানে বড় ইস্যু প্রযোজক।’
অভিনেত্রীর কথায়, ‘বারবার আমি প্রযোজক মনিরুলের সঙ্গে কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা নিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কোনো উত্তরই পাওয়া যায়নি। তাঁর শুটিং নিয়ে আগে থেকে কোনো পরিকল্পনা নেই। কোনো ব্যবস্থা নেই।’
এদিকে জায়েদ খানও প্রযোজকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন, ‘এই শুটিং এতটাই অব্যবস্থায় ভরা ছিল যে নায়িকার কস্টিউম, হোটেল ভাড়া, খাবারের বিলও আমি দিয়েছি। ১ লাখ ৩০ হাজার হোটেল বিল এসেছিল। প্রযোজক ৯৭ হাজার বিল দিয়ে চলে গেছে। বাকি টাকা আমি দিয়েছি। প্রযোজক প্রতিনিয়তই মিথ্যাচার করছেন। তাঁর কথা–কাজে মিল নেই।’
সিনেমা করতে চাননি প্রযোজক, আপনার অনুরোধেই নাকি প্রযোজক সিনেমাটি করেছেন—প্রযোজকের এমন মন্তব্যে জায়েদ খান বলেন, ‘ঠিক আছে, আমাকে নিয়ে কাজটি করার জন্য প্রযোজককে বলেছি। কিন্তু তাই বলে শুটিংয়ে কোনো শৃঙ্খলা থাকবে না। শুটিংয়ে ভালো মানের খাবার থাকবে না। এটা তো হতে পারে না।’
জায়েদ খান বলেছেন হোটেল ভাড়ার একটি অংশ তাঁকে বহন করতে হয়েছে। এমনকি নায়িকার পোশাকের ব্যবস্থাও জায়েদ খান করেছেন। এ ব্যাপারে প্রযোজকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভাড়া বুঝিয়ে দিয়ে আমরা ঢাকা চলে এসেছি। এরপর শুনেছি, ৭ সেপ্টেম্বরও কারা যেন ছিলেন হোটেলে। সেই টাকা তো আমি দেব না। কারণ, আমার শুটিং প্যাকআপ হয়েছে ৬ সেপ্টেম্বর। আর জায়েদ খানকে নায়িকার ড্রেস দিতে হবে কেন? আমি সায়ন্তিকার ড্রেস বাবদ আলাদা ৫০ হাজার রুপি দিয়েছি। পারিশ্রমিকের মধ্যেই জায়েদ খানের ড্রেসের টাকা ধরা হয়েছে। এত সব মিথ্যাচার আর নিতে পারছি না।’
যদি সায়ন্তিকা ও জায়েদ খান নৃত্য পরিচালকের কাছে ক্ষমা না চান, কী হবে ছবির ভাগ্যে—এমন প্রশ্নে প্রযোজক বলেন, ‘এই ছবির কাজ আর করব না। যদি করিও, সব বাদ দিয়ে এ দেশের শিল্পী নিয়ে নতুন করে এই ছবির কাজ শুরু করব।’
আপনি ও সায়ন্তিকা ক্ষমা চাইবেন কি না—জায়েদ খানের কাছে জানতে চাইলে তিন বলেন, ‘আমি কেন ক্ষমা চাইব। আমি তো এসবের মধ্যে নেই। আমি শুটিংয়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেসব বলেছি। আর সায়ন্তিকা ক্ষমা চাইবেন কি না, সেটি তাঁর নিজের ব্যাপার। আমি তাঁর ব্যাপারে বলতে পারব না।’
গত ২৯ আগস্ট তাজু কামরুলের পরিচালনায় সায়ন্তিকা ও জায়েদ খানকে নিয়ে ‘ছায়াবাজ’ ছবির শুটিং শুরু হয় কক্সবাজারে। এক সপ্তাহ টানা শুটিং করে ৭ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে গেছেন সায়ন্তিকা। দেশে যাওয়ার পরপরই বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ছড়িয়েছে, নৃত্য পরিচালক মাইকেল বাবুর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় প্রথম ধাপের কাজ শেষ না করেই দেশে ফিরে গেছেন সায়ন্তিকা। শোনা যায়, একটি গানের দৃশ্যের সময় নৃত্য পরিচালক মাইকেল বাবু না বলে সায়ন্তিকার হাত ধরে গানের দৃশ্য বুঝিয়ে দেওয়ার কারণেই নাকি নায়িকা চটেছেন। পরবর্তী সময় গানের কাজ শেষ না করেই দেশে ফিরে গেছেন এই নায়িকা।