তাঁরা কাজের কারণেই ভালোবাসছেন: জয়া

গতকাল ছিল জয়া আহসানের জন্মদিন। এদিনটায় শিল্পীর নতুন ছবির টিজার অন্তর্জালে প্রকাশ পেয়েছে। নতুন ছবি ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বললেন মনজুর কাদের

জয়া আহসান
ছবি : জয়ার ফেসবুক থেকে

আজ ঢাকায় তো কাল কলকাতায়—এক দশক ধরে এমনই এক নিয়মে চলছে জয়ার দিনকাল। কখন ঢাকায় আবার কখন কলকাতায় জানা খুব মুশকিল। তাই তো যখনই কথা হয়, শুরুতেই জিজ্ঞাসা, আপনি ঢাকায় নাকি কলকাতায়? এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। ফোনের এপাশ থেকে প্রশ্ন করতেই উত্তরে সোমবার দুপুরে জানালেন, ঢাকাতেই আছেন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে ভোলেননি।
জন্মদিনে নতুন সিনেমা ‘ওসিডি’র টিজার প্রকাশের বিষয়টি জয়ার জন্য ছিল দারুণ আনন্দের। কলকাতার পরিচালক সৌকর্য ঘোষাল এই ছবির পরিচালক। জয়ার সঙ্গে পরিচালকের দ্বিতীয় সিনেমা এটি। জয়া বললেন, ‘ভক্তরা তো আমার প্রতি নানাভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করে। আমি কাজ দিয়ে সেই ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টায় থাকি। দিনটিতে নতুন ছবির টিজার, ভক্তদের জন্য আমার পক্ষ থেকে উপহার। এর চেয়ে হয়তো ভালো উপলক্ষ আর হতে পারে না।’
দুই যুগের বেশি সময় কাজ করে অভিনয়ে অনন্য একটি নাম হয়ে উঠেছেন জয়া। এর মধ্যে এক যুগ কাজ করছেন কলকাতায়। জয়া অভিনীত কলকাতার একেকটি কাজ তাঁর ক্যারিয়ারে সাফল্যের পালক হিসেবে যুক্ত হয়। সেখানকার প্রযোজক-পরিচালকেরা এই অভিনয়শিল্পীতে আস্থা-নির্ভরতা খোঁজেন। অকপটে বলেন, দারুণ শিল্পী। সীমানা পেরোনো জয়ার প্রথম ছবি ‘আবর্ত’র পরিচালক অরিন্দম শীল তো এবারের জন্মদিনে অকপটে বলেছেন, ‘জয়া হলো আক্ষরিক অর্থেই “ডিরেক্টরস অ্যাক্টর”। মন দিয়ে কাজ করে। কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শুটিং ফ্লোরে থাকলে তখন বাইরের পৃথিবীতে কী চলছে, সেটি ও ভুলে যায়। তখন অভিনয়, অভিনয় এবং অভিনয়ই ওর শেষ কথা!’

অভিনয়শিল্পী জয়া ধীরে ধীরে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন, তা বিভিন্ন সময়ের লেখা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভকামনা দেখেও উপলব্ধি করতে পারেন বলে জানালেন তিনি। জয়া বললেন, ‘জন্মদিনে যাঁরা আমাকে শুভকামনা জানাচ্ছেন, সেটা কাজের কারণেই। কর্মের প্রতি আসক্ত হয়েই হয়তো ভালোবাসছেন—সবার মেসেজ, শুভেচ্ছা ও শুভকামনায় বুঝতে পারছি। একজন শিল্পী হিসেবে সেটা আসলে খুবই আনন্দের। তখন নিজেকে খুব বিশেষ মনে হয়।’

জয়া আহসান

জন্মদিন নিয়ে খুব একটা আগ্রহ থাকে না জয়ার। বন্ধুবান্ধব-শুভাকাঙ্ক্ষী ও পরিবারের লোকজন নিয়ে মাঝেমধ্যে উদ্‌যাপন করতে হয়। তবে ২০১৭ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজানে বর্বরোচিত হামলার পর থেকে এই দিনটায় জন্মেছেন বলতেও লজ্জা লাগে তাঁর। জয়া বললেন, ‘আমার কাছে প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ। আনন্দের দিন। হোলি আর্টিজানে হামলার দিনে আমার জন্মদিন, এ ঘটনার পর থেকে বলতেও লজ্জা লাগে আসলে। দীর্ঘদিন পর এটা কাটিয়ে উঠছি আস্তে আস্তে। জন্মদিনে কেউ খেতে বললে, কেক কাটতে বললে একদিন পরে যাই। এই দিনটা আমাদের ইতিহাসের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, তাই মনটা বিষণ্নও হয়ে থাকে।’

জয়া আহসান

মৃত্যুচিন্তাজন্মিলে মরিতে হবে—এটা চিরন্তন সত্য। কেউ কেউ মৃত্যু নিয়ে নানান কিছু ভাবেন, তবে জয়া এসব নিয়ে ভাবেন না। জয়া বিষয়টাকে এভাবেই ব্যাখ্যা করলেন, ‘জন্মের ওপর আমাদের কোনো হাত নেই। জন্মেছি এটা ভাগ্যে ছিল, মৃত্যুও তো সেটাই। তবে আমার মনে হয়, মৃত্যু নিয়ে আমাদের যে ভয় আছে, রহস্য আছে, নেগেটিভিটি আছে—মৃত্যু হয়তো ও রকম কিছু নয়। আমরা অযথাই হয়তো মৃত্যু নিয়ে বেশি ভাবি। মৃত্যুও সুন্দর হতে পারে। যে যায় সেই রাস্তা দিয়ে, শুধু সেই-ই বলতে পারে। আমাদের কারও আগে থেকে বোঝার কোনো সুযোগই নেই।’প্রসঙ্গ ‘ওসিডি’‘ওসিডি’ ছবিটি কবে মুক্তি পাবে, সে ব্যাপারে এখনই কিছু জানা যায়নি।

ছবিতে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন চিকিৎসকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। দুই বছর আগে শুটিং শেষ হয়েছে। মুক্তির তারিখ জানা না গেলেও কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছে। প্রশংসাও কুড়িয়েছে। সৌকর্য ঘোষাল তাঁর ছবিটি সম্পর্কে ধারণা দিতে ১৬ সেকেন্ডের একটি টিজার প্রকাশ্যে এনেছেন। টিজার ফেসবুকে পোস্ট করে জয়া লিখেছেন, ‘চাঁদের কলঙ্ক কি পরিষ্কার হয়? জীবনের কলঙ্ক? সমাজের কলঙ্ক? উত্তর নিয়ে আসছে ওসিডি…। এবার প্রাণপণে সরাবে জঞ্জাল!’ পরিচালক বলেন, ‘আমি মনে করেছি, এ ছবির উপযুক্ত অভিনেত্রী হতে পারেন জয়া আহসানই। প্রমাণ করেছেন, ছবির জন্য জয়া আহসানই সঠিক বাছাই।

জয়া আহসান

জয়ার অভিনয় দেখে মুগ্ধ। তাই তো সত্যিই মনে হচ্ছে, আমি ঠিক অভিনেত্রীকেই বাছতে পেরেছিলাম।’‘ওসিডি’ ছাড়া আরও কয়েকটি ছবি মুক্তির অপেক্ষায় আছে। তবে আস্তে আস্তে তা জানা যাবে। এ তালিকায় ‘ডিয়ার মা’ যেমন আছে তেমনি আছে ‘জয়া আর শারমীন’ এবং ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ও। নতুন ছবির শুটিংয়ের পরিকল্পনাও চলছে। চলছে প্রস্তুতিও। শিগগিরই শুরু করবেন আশফাক নিপুণের ছবিটি, জানান জয়া।গান নিয়ে ভাবনাজয়া আহসানকে গানে পাওয়া গিয়েছিল। মাস দুয়েক আগে কোক স্টুডিও বাংলার ‘তাঁতি’ শিরোনামের গানটিতে অন্য শিল্পীদের সঙ্গে জয়াও কণ্ঠ দিয়েছেন। পাশাপাশি ভিডিও চিত্রেও ছিলেন। অনেকে ভাবতে পারেন, আবারও নতুন কোনো গানে দেখা যেতে পারে জয়াকে। জয়া কী ভাবছেন? তিনি বললেন, ‘ওটা দায়িত্বের জায়গা থেকে করা হয়েছে। আমার মনে হয়েছে, জামদানিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এগুলো আর্কাইভ করে রাখা উচিত। দায়িত্বের জায়গা থেকে তাই করা। তবে আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই।’