যশোরের ঐতিহ্যবাহী মণিহার প্রেক্ষাগৃহে চলছে ‘প্রিয়তমা’
যশোরের ঐতিহ্যবাহী মণিহার প্রেক্ষাগৃহে চলছে  ‘প্রিয়তমা’

‘হাওয়া’, ‘পরাণ’ –এর পর ‘প্রিয়তমা’ জমেছে মণিহারে

‘হাওয়া’, ‘পরাণ’ সিনেমার পর ‘প্রিয়তমা’য় প্রাণ ফিরে পেয়েছে যশোরের ঐতিহ্যবাহী মণিহার প্রেক্ষাগৃহ। সিনেমাটি দেখতে ঈদের দিন থেকেই প্রতিটি শোতে দর্শকের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় মণিহার প্রেক্ষাগৃহে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সন্ধ্যা ছয়টায় প্রেক্ষাগৃহের সামনে দর্শকের উপচেপড়া ভিড়। এর মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যা বেশি। কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকে টিকিট নিচ্ছেন। এরপর লাইন দিয়ে প্রেক্ষাগৃহের ভেতরে দর্শকদের প্রবেশ করানো হচ্ছে। এর মধ্যে ‘প্রিয়তমা’ পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে দর্শকদের অনেকে সেলফি তুলে দুই লাইন মন্তব্য লিখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে দিচ্ছেন। প্রদর্শনী শেষে প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসছিলেন আরেক দর্শক নিলুফা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘সিনেমার শেষ দৃশ্যটি অনেক কষ্টের। দর্শকদের চোখে জল চলে আসে। খুব কেঁদেছি।’

সিনেমা উপভোগ করতে আসা দর্শক খাদিজা ইসলাম বলেন, ‘“প্রিয়তমা” সিনেমাটি দেখতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মণিহারে এসেছি।

“প্রিয়তমা”র মতো সিনেমা নির্মাণ করা হলে আমরা দল বেঁধে হলে (প্রেক্ষাগৃহে) দেখতে আসি। একটা ভালো সিনেমা দেখলাম। এর আগে সর্বশেষ “পরাণ” সিনেমা দেখছিলাম। ভালো গল্প ও অভিনয়-নির্ভর সিনেমা তৈরি হলে দর্শক অবশ্যই হলে আসেন।  “প্রিয়তমা”, “পরাণ”, “হাওয়া” তার প্রমাণ।’

‘প্রিয়তমা’ সিনেমায় শাকিব খান ও ইধিকা পাল

সাব্বির হোসেন নামের এক দর্শক বলেন, ‘শাকিব খান সচরাচর যেসব ছবিতে অভিনয় করেন, সেটা থেকে এই সিনেমা ব্যতিক্রম। সিনেমা দেখে অনেক ভালো লাগল। শাকিবের যে লুক, এই সিনেমাতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগের সিনেমা থেকে তাঁর এই সিনেমাতে অভিনয় অনেক ভালো হয়েছে। খুব সুন্দর ছিল সিনেমাটি। বলা যায় অসাধারণ।’  

ঝিনাইদহ কালিগঞ্জ থেকে দল বেঁধে এসেছেন কলেজপড়ুয়া সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘চোখে জল আসার মতো গল্প। বারবার শাকিব খান তাঁর প্রিয়তমাকে ভুলে না গেলেও বারবার ভুলে যাওয়ার যে অভিনয় করেছেন, সেটা অসাধারণ। অনেকের জীবনে এ ধরনের কাহিনি লুকিয়ে আছে যে আমরা প্রিয়তমাকে রাগ করে ভুলে যেতে পারি, আসলে প্রিয়তমাকে ভোলা যায় না। যদিও সিনেমা হলে প্রথমবার এসেছি। আমার দেখা শাকিব খানের সেরা সিনেমা এটি।’

‘প্রিয়তমা’ ছবিতে শাকিব খান

শুধু দর্শক নন, প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষও খুব খুশি। মণিহার প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে বাংলা সিনেমার যে দুর্দিন চলছে, তার মধ্যে “প্রিয়তমা” সিনেমাটাকে ব্যবসাসফল বলতেই হয়। “পরাণ” ও “হাওয়া” সিনেমার পর এটিই ব্যবসাসফল সিনেমা। প্রতি শোতে ভালোই দর্শক হচ্ছে। আমরা খুশি।’ তিনি বলেন, এক সপ্তাহ চালানোর পরিকল্পনা থাকলেও ‘প্রিয়তমা’ দুই সপ্তাহ চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দর্শক চাইলে আরও সময় ধরে চলতে পারে।
১ হাজার ৪০০ আসনের দেশের সবচেয়ে বড় প্রেক্ষাগৃহ হিসেবে পরিচিত যশোরের মণিহার। একসময় ঢাকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা মুক্তি দেওয়া হতো। সিনেমার ব্যবসার দুর্দিনে ‘প্রিয়তমা’য় মুগ্ধ দর্শক ও প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষ। সিনেমার টিজার, গান দেখে মুক্তির আগেই সারা দেশে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে সিনেমাটি। ঈদের দিন থেকে মণিহারে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন দর্শক।

প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ঈদের দিন থেকে সোমবার পর্যন্ত ২০টি প্রদর্শনী করা হয়েছে। এতে ৮ থেকে ৯ হাজার মানুষ সিনেমাটি দেখেছেন। মণিহারে টিকিটের দাম ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। এ হিসাবে মাত্র পাঁচ দিনে প্রায় ১১ লাখের বেশি টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে।
যদিও মোট কত টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে, সেটা পরিষ্কার করে বলতে চাননি প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপক তোফাজ্জল হোসেন। কিন্তু কয়েকটি শো সরেজমিনে দেখা গেছে, দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে। অনেকের ধারণা, ৯ হাজার নয়, কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ মণিহারে ‘প্রিয়তমা’ উপভোগ করেছেন।