ক্যারিয়ারের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘বলী’ নির্মাণ করে আলোচনায় এসেছেন নির্মাতা ইকবাল হোসাইন চৌধুরী। ২৮তম বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান পুরস্কার ‘নিউ কারেন্টস অ্যাওয়ার্ডস’ পাওয়া ছবিটি নিয়ে এবার সাংহাই চলচ্চিত্র উৎসব ঘুরে এলেন এই নির্মাতা। সিনেমাটি নিয়ে গত মঙ্গলবার তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।
সাংহাই চলচ্চিত্র উৎসবে বলী দেখলেন চীনের দর্শকেরা। বলীখেলা ও মাছের পিঠে চড়ে আসা মানুষের কাহিনি দেখে তাঁরা কী বললেন?
ইকবাল হোসাইন চৌধুরী: বলীখেলা ও মাহি সওয়ার বা মাছের পিঠে চড়ে আসা মানুষের কাহিনি নিয়ে তাঁরা (দর্শকেরা) খুব কৌতূহলী ছিলেন। বিচিত্র সব প্রশ্নও এসেছিল। এক দর্শক আমাদের কাছে জানতে চাইলেন, আমাদের অঞ্চলে তিমি মাছ খাওয়ার চল আছে কি না? এশিয়ার কোনো কোনো দেশে তিমি মাছ নাকি খুব অভিজাত খাবার হিসেবে বিবেচিত।
বলীখেলাটা খুবই সহজ। এখানে হারজিতের ব্যাপার আছে। কিন্তু মাহি সওয়ারের কাহিনিটা চীনের দর্শকদের কাছে একদমই নতুন ছিল। ঘূর্ণিঝড় বা দারিদ্র্যের বাইরে সাগরপারের এমন জাদুকরি গল্প সম্ভবত তাঁরা খুব বেশি দেখেননি। বঙ্গোপসাগরের রহস্যময়তা ও সম্মোহনী রূপ—দুই-ই তাঁদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা বলে জানিয়েছেন।
‘বলী’ নিয়ে জাপানি পত্রিকা নিক্কেই এশিয়া লিখেছে, ‘ক্রমেই ঢাকার সিনেমা বলিউডের ছায়া থেকে বেরিয়ে শিকড়ে ফিরছে।’ আপনারও কি তেমনটাই মনে হয়?
ইকবাল হোসাইন চৌধুরী: নিক্কেই এশিয়ার এই শিরোনাম আমাদের সিনেমার জন্য অবশ্যই একটা মনে রাখার মতো ঘটনা। ‘বলী’ বুসানের প্রধান পুরস্কার জয়ের পরই হয়তো নিক্কেই এশিয়া এমন শিরোনামের কথা ভেবেছে। সঙ্গে বুসানের মতো বড় উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে একই বছরে বাংলাদেশের তিনটি সিনেমা থাকার মতো ঘটনাও তারা বিবেচনায় রেখেছে। তবে যেসব নির্মাতা বাংলাদেশের সিনেমাকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে চান, তাঁদের কাছে বলিউড কখনোই আদর্শ ছিল না। তাঁরা সব সময়ই বলিউডের ছায়া থেকে দূরে রয়েছেন। দেশের বাইরে কেবল প্রবাসী বাংলাদেশি দর্শক যদি কারও সিনেমার লক্ষ্য হয়, সেটা আলাদা কথা।
আপনার জন্ম ও বেড়ে ওঠা বঙ্গোপসাগরঘেঁষা অঞ্চলে। প্রথম সিনেমা নির্মাণের জন্য আপনার অঞ্চলের গল্পকে নির্বাচন করেছেন। এ তাড়না কীভাবে পেলেন?
ইকবাল হোসাইন চৌধুরী: কানাডা, নাকি বাংলাদেশ? প্রথম সিনেমা কোথায় বানাব, এটা নিয়ে আমি মানসিকভাবে দ্বন্দ্বে ছিলাম। পরে চিন্তা করে দেখলাম, বঙ্গোপসাগর আমাকে যতটা রোমাঞ্চিত করে, অন্টারিও লেক ততটা করে না। অন্তত এখন পর্যন্ত নয়। সাগর নিয়ে ছোটবেলার অনেক স্মৃতি রয়েছে। ১৯৯১ সালের মহাদুর্যোগের স্মৃতি আলাদা করে মনে আছে। এর বাইরে ২০১৮ সালের দিকে কক্সবাজারের প্যাঁচার দ্বীপে মাস ছয়েক ছিলাম। তখন আমার প্রিয় কাজ ছিল সন্ধ্যাবেলা সাগরের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকা। এসবই আমাকে দেশে টেনে এনেছে। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ সরকার ও পিপলু আর খানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল বক্স আমাদের সঙ্গে না থাকলে ‘বলী’ নির্মাণ করা সম্ভব ছিল না।
বুসান উৎসবের নিউ কারেন্টস পুরস্কার পাওয়ার পর ছবিটি নিয়ে দর্শকের আগ্রহ বেড়েছে। এই পুরস্কার নির্মাতা হিসেবে আপনাকে কতটা অনুপ্রাণিত করেছে?
ইকবাল হোসাইন চৌধুরী: বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান পুরস্কার বিজয় অবশ্যই খুশির ব্যাপার। পুরস্কার পাওয়ার কারণে হলেও সিনেমাটা মানুষ আলাদা আগ্রহ নিয়ে দেখবে, এটাই সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। সমস্যা হচ্ছে, নির্মাতা হিসেবে আমাকে মানতে হবে, আমি প্রতিবার জিতব (পুরস্কার) না। আন্তর্জাতিক সিনেমার রাস্তা অতি নিষ্ঠুর ও পিচ্ছিল।
ছবিটি বাংলাদেশের দর্শকেরা কবে দেখতে পারবেন?
ইকবাল হোসাইন চৌধুরী: এটা আমার প্রযোজকেরা বলবেন। আমি শতভাগ তৈরি, পুরো ‘বলী” টিম অধীর আগ্রহে বসে আছে। দুই মাসের মধ্যে যদি ‘বলী’ দেশে মুক্তি না দিতে পারি, তাহলে এটা নির্মাতা হিসেবে আমার জন্য খুবই হতাশার ব্যাপার হবে।
নির্মাতা হিসেবে আপনি কাকে আদর্শ মানেন?
ইকবাল হোসাইন চৌধুরী: এককভাবে কাউকে আদর্শ মনে হয় না। যেসব নির্মাতার কাজে মৌলিকতা বা অভিনবত্ব দেখি, তাঁদেরই ভক্ত হয়ে যাই।
আপনি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছেন, নির্মাণে এলেন কেন?
ইকবাল হোসাইন চৌধুরী: নিজেকে মিডিয়া পেশাজীবী মনে করি। আমার কাছে সংবাদপত্রের ফিচার লেখা বা সিনেমা বানানো মোটামুটি কাছাকাছি ব্যাপার। আসল কথা হচ্ছে, আমি আমার সেরাটা দিচ্ছি কি না।