আগামী ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। আট দিন পেছাল এই নির্বাচন। নতুন তারিখ আগামী ২৭ এপ্রিল। সোমবার নির্বাচন কমিশনের এক মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন, ‘ঈদের পর ৯-১০ দিন হাতে থাকে নির্বাচন। কিন্তু ঈদের সময় অনেক সদস্য ঈদ করতে ঢাকার বাইরে থাকবেন। ঈদের পর ফিরে এসে খুবই কম সময় হাতে পাবেন। তা ছাড়া প্রার্থীরাও ভোটের চূড়ান্ত ওই মুহূর্তে অনেক ভোটারকে ঢাকাতে পাবেন না। এসব কথা বিবেচনায় ছিল আমাদের। তা ছাড়া চলচ্চিত্রের কিছু জ্যেষ্ঠ শিল্পী ঈদের কারণে নির্বাচন সপ্তাহখানেক পিছিয়ে দিতে অনুরোধ করেছিলেন। সব কথা বিবেচনা করেই আমরা নির্বাচন পিছিয়েছি।’
এই প্রযোজকের ভাষ্য, সোমবার নির্বাচন কমিশনের দুই সদস্যসহ আমি বসেছিলাম। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে মনোনয়নপত্র বিক্রি, জমা, প্রাথমিক ভোটার তালিকা, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, মনোনয়ন বাছাই ও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, প্রত্যাহার—সবই তফসিলে আগের ঘোষিত তারিখ কার্যকর থাকবে।’
৩০ মার্চ মনোনয়নপত্র বিক্রি, ২ এপ্রিল দাখিল। প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ ২৪ মার্চ, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ ২৮ মার্চ। মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ৩ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৭ এপ্রিল। একই দিনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এদিকে ভোটের আগে আগে শিল্পী সমিতির ৭-এর (ক) ও (ঞ) ধারা দেখিয়ে শিল্পী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নায়ক জায়েদ খানের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। তিনি এই নির্বাচনে ভোটও দিতে পারবেন না।
এই ধারায় বলা আছে, ‘গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী কোনো কাজ এবং সমিতির কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধাচরণ করলে সাময়িকভাবে বিরুদ্ধাচরণকারীর সদস্যপদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কার্যকরী পরিষদ। অবশ্য পরে উক্ত সিদ্ধান্ত সাধারণ সভায় অনুমোদন করিয়ে নিতে হইবে।’
২ মার্চ বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির পিকনিক মঞ্চে দ্বিবার্ষিক সভায় সাধারণ সদস্যদের উপস্থিতিতে জায়েদ খানের সদস্যপদ বাতিল অনুমোদন হয়। তার আগে ২০২৩ সালে ২ এপ্রিলে সমিতির কার্যকরী পরিষদের মিটিংয়ে সদস্যপদ বাতিলের এ সিদ্ধান্ত আসে।
জায়েদ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দুই বছর ধরে টেলিভিশন, পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে ধারাবাহিকভাবে সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করে আসছিলেন। পাশাপাশি কোনো কোনো সময় সমিতিকেও নিয়েও কথা বলেছেন। সব মিলিয়ে সমিতির মান ক্ষুণ্ন হয়েছে।
তাঁর সদস্যপদ বাতিলকে অবৈধ বলে প্রতিবাদ করেছেন জায়েদ খান। তিনি বলেন, ‘আমি সমিতিকে নিয়ে কোনো বাজে মন্তব্য করিনি। আমি ব্যক্তি নিপুণকে বলেছি। এখনো বলছি, তিনি একজন নির্লজ্জ মানুষ। পরাজিত হয়েও এত দিন সাধারণ সম্পাদকের পদ দখল করে ছিলেন। এ কারণেই আমি তাঁর বিরুদ্ধে বলেছি। এটি সমিতির গঠনতন্ত্রের মধ্যে পড়ে না।’
ঢাকাই ছবির এই নায়ক আরও বলেন, ‘আমার সদস্যপদ বাতিলের জন্য মাত্র একটি চিঠি দিয়েছে সমিতি। সেটিও অবৈধ মনে করি। কারণ, চিঠিটিও নিপুণ স্বাক্ষরিত ছিল। যিনি নির্বাচিতই নয়, সে আমাকে চিঠি দিতে পারেন না। তা ছাড়া এই পদের মামলা এখনো সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে আছে। তারপরও আমি চিঠির উত্তর দিয়েছি। আমার চিঠি পাওয়ার পর চূড়ান্ত বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে আরও দুটি চিঠি সমিতির আমাকে দিতে হবে। কিন্তু কোনো চিঠি দেয়নি। শুনলাম, পিকনিকে ইসি কমিটির সিদ্ধান্তের লিখিত চিঠি পাঠ করেই আমার সদস্য বাতিল করে দিয়েছে। কিন্তু সেখানে সাধারণ সদস্যদের হাত তুলে মতামত লাগে। সেটিও তো দেখলাম না। বড় কথা, পিকনিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে এভাবে দ্বিবার্ষিক সভা করা আগে সমিতির কোনো কমিটির বেলায় দেখিনি। পুরো প্রক্রিয়াটিই অবৈধ।’
প্রায় ১৮ বছর ধরে সমিতির সদস্য জায়েদ খান। এর আগে পরপর দুবার সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। সেই শিল্পীর সমিতির সদস্যপদই বাতিল, ভোটও প্রয়োগ করতে পারবে না। খারাপ লাগছে কি না—জানতে চাইলে ঢাকাই ছবির অভিনেতা বলেন, ‘খারাপ লাগার কিছু নাই। আমি সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয়েও পদে বসতে পারিনি, এর চাইতে তো খারাপের কিছু হতে পারে না। অবৈধ ব্যক্তির অবৈধ সিদ্ধান্ত আমি বিচলিত নয়।’
সদস্যপদ বাতিল নিয়ে জায়েদ খানের করা অভিযোগ প্রসঙ্গে নিপুণ বলেছেন, ‘আমি তো সমিতির সাধারণ সম্পাদক। সমিতিকে জড়িয়ে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় আমার বিরুদ্ধে একাধিকবার বক্তব্য দিয়েছেন জায়েদ খান। এভাবে প্রকাশ্যে মিডিয়ার সামনে আমাকে নিয়ে বলাতে সামাজিকভাবে আমার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। এতে সমিতিকে ছোট করা নয়? তিনি বলছেন, সমিতিকে ছোট করে কিছু বলেননি। আমার কাছে সব তথ্যই সংগ্রহ আছে। তাঁর বিরুদ্ধে যা যা করা হয়েছে, সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই করা হয়েছে। এর বেশি আর কিছু বলতে চাই না।’