অভিনেতা মোশাররফ করিমের ক্যারিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট ‘ক্যারাম’ নাটক। একসময়ের তুমুল আলোচিত এই নাটকটি নির্মাণ করেছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। দীর্ঘদিন এই নির্মাতা ও অভিনেতা জুটির কাজে দর্শক নতুনত্ব পেয়েছেন। আলোচনা যেমন হয়েছে, তেমনি মোশাররফ করিমের ক্যারিয়ারে যোগ হয়েছে জনপ্রিয় অভিনেতার খেতাব। যাঁর হাত ধরে টার্নিং পয়েন্ট, সেই নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রথমবার লিখলেন মোশাররফ করিমকে নিয়ে।
আমি বাংলাদেশে যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাঁদের মধ্যে চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, নুসরাত ইমরোজ তিশা, অপি করিম, তাসনিয়া ফারিণ, শাহীর হুদা রুমি—এই কয়েকজন অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাগুলো নিয়ে মাঝেমধ্যে লিখতে ইচ্ছা করে। পরে আর লেখা হয় না। আজকে মোশাররফ করিমের জন্মদিন উপলক্ষে মনে হলো এক কিস্তি লেখা যায়। এভাবে এক এক করে চঞ্চল ভাই, তিশাসহ সবার জন্মদিনে একটা করে লেখা চেষ্টা করতে চাই।
মোশাররফ করিমের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ ‘ক্যারাম’। এই ক্যারাম কাজটা মূলত দুইটা জিনিসের অনুপ্রেরণায় বানানো। প্রথমটা হলো, ছোটবেলায় ক্যারামে আমার নিদারুণ ব্যর্থতা। মাসুদ, বাবলু, এমনকি জাহাঙ্গীরের কাছেও হারতাম। কিন্তু পরাজয়টা কখনোই মানতাম না।
দ্বিতীয় অনুপ্রেরণা হচ্ছে, আমাদের শুটিংবাড়ির ক্যারাম টুর্নামেন্ট। আমি আর আমরা সব ভাই-বেরাদার একসঙ্গে থাকতাম সেখানে, এটা সবাই জানেন। সেই আবাসিক ক্যাম্পে আমরা আবিষ্কার করি কচি খন্দকার মোটামুটি আমার ছোটবেলার বুড়ো ভার্সন। তখন আমরা প্রতি খেলায় হারার পর কচিকে অত্যাচার করার নানা সৃজনশীল উপায় আবিষ্কার করি। এবং কচি খেপেখুপে প্রায় প্রতিদিনই আমাদের ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়। আমি ঠিক করলাম, এসব নিয়েই ‘ক্যারাম’ নামে একটা টেলিফিল্ম বানাব এবং কচি খন্দকারের প্রতি অত্যাচারের প্রতিদান হিসেবে তাঁকে স্ক্রিপ্টরাইটার ক্রেডিট দিই। যদিও স্ক্রিপ্ট লেখা সেশনের সঙ্গে তাঁর আদতে কোনো সংস্পর্শ ছিল না।
তখন আমি স্ক্রিপ্ট লিখি সোফায় শুয়ে শুয়ে। লিখি না আসলে, দৃশ্য বলি। মাহমুদ আর সুজন সেটা কাগজে কপি করে। স্ক্রিপ্টের মাঝ পর্যায়ে মোশাররফ করিম আসেন আমাদের ক্যাম্পে। তাঁকে কাস্ট করার পর আমার ওপর চাপ বেড়ে যায়। একজন সাংবাদিক ফোন করে বললেন, ‘বস, আপনি শিওর উনি পারবেন? উনি কিন্তু প্রমিনেন্ট কেউ না।’ আমি বললাম, ‘হি উইল বি প্রমিনেন্ট প্রিটি সুন।’ সেই সাংবাদিক আমার ফ্রেন্ডলিস্টেও আছেন।
তারপর শুটিংয়ে যাই কুমিল্লায়। প্রথম দিন উনি (মোশাররফ করিম) খুবই চাপে ছিলেন। আমি তখন কৌশলে কম চাপওয়ালা দৃশ্যগুলো করতে থাকি। আর তাঁকে আমার সিস্টেমের মধ্যে ধীরে ধীরে ঢোকাতে থাকি। এটা একটা প্রক্রিয়া, যেটা শুধু রিহার্সাল করে সম্ভব নয়। এটা হচ্ছে একটা হোলি স্টিক অ্যাপ্রোচ, যেখানে আমরা আলোচনা করি কবিতা নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে, দেশ নিয়ে। এসব করতে করতে কখন যে আলগোছে আমরা একজন আরেকজনের মাথার ভেতরে ঢুকে বসে যাই। এই ঢোকাটা হয়ে গেলে, বাকিটা তো ইশারায় হয়ে যায়। ‘ক্যারাম’ আর ‘৪২০’ নাটকের পর ওই সাংবাদিক ভাইটাই আমাকে এক অনুষ্ঠানে বলে, ‘না বস, মোশাররফ ইজ আ জিনিয়াস।’ আজকে সবাই জানে হি ইজ আ জিনিয়াস। দীর্ঘায়ু হোন মোশাররফ ভাই। আর ভালো ভালো কাজ করুন। ইউ হ্যাভ আ লট টু অফার।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র নির্মাতা