ঢাকাই সিনেমায় তখন অশ্লীলতা ছড়াতে থাকে, যুক্ত হয় কাটপিস। সিনেমায় কাটপিসের প্রভাবে অশ্লীলতা তখন চরমে। বিমুখ হন সাধারণ দর্শকেরা। অনেকের মতে, সেই ২০০০ সালপরবর্তী সময়কে বাংলা সিনেমার অন্ধকার যুগ বললে ভুল হবে না। সেই সময়ের দুই সিনেমা সম্প্রতি ঢাকার বাইরে থেকে জব্দ করেছে পুলিশ। সেই সিনেমা পাঠানো হয়েছিল চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের কাছে। সেই কাটপিসযুক্ত অশ্লীল সিনেমা দেখে বিব্রত সার্টিফিকেটশন বোর্ডের সদস্যরা।
গতকাল মঙ্গলবার সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্যরা জব্দ করা ‘জাঁদরেল’ ও ‘শক্র ঘায়েল’ সিনেমা দুটি দেখেন। অভিযোগ ছিল, সিনেমায় অশ্লীল কাটপিস দৃশ্য লাগিয়ে হলে চালানো হচ্ছিল। পরে তার সত্যতা পান বোর্ডের সদস্যরা।
পরিচালক ও সেন্সর বোর্ডের সদস্য খিজির হায়াত বলেন, ‘এত জঘন্য কাটপিস, যা কোনো ভাবেই দেখার মতো নয়। এত অশ্লীলতা, নগ্নতা বাংলা সিনেমার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া বাক্রুদ্ধ করেছে। এ ধরনের রুচিহীন কাজ যাঁরা করেছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনা উচিত। আমরা সিনেমা দুটি দেখে আমাদের মতামত জানিয়েছি। এ ধরনের সিনেমা যেন আর কোথাও কোনো সিনেমা হলে না চালানো হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন, এমন মতামত জানিয়েছি।’
চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এক মাস দায়িত্ব নেওয়ার পরে ইতিমধ্যে তাঁরা ‘নয়া মানুষ’, ‘ভয়াল’, ‘যাপিত জীবন’সহ ১০টি সিনেমা দেখেছেন। এর মধ্যে কাটপিস সিনেমা বিভিন্ন হলে চলছে, সেই কথা শুনেছেন। দেশের বিভিন্ন জেলার সিনেমা হলে দর্শক টানতে এখন সেই আগের কাটপিস বা নিষিদ্ধ সিনেমা চালানো হচ্ছে।
জানা যায়, ঢাকার বাইরের রুপা ও লাবণী নামের দুটি সিনেমা হল থেকে এই সিনেমাগুলো জব্দ করা হয়। অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ বলেন, ‘এই সিনেমাগুলো দেখা আমার জন্য বিব্রতকর ছিল। একটি সিনেমায় অদ্ভুতভাবে আজেবাজে দৃশ্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের সিনেমা কোনো সভ্য দেশের দর্শকের জন্য নয়।’
নওশাবা আরও বলেন, ‘এসব সিনেমা সমাজের জন্য হানিকর। যুক্তিসংগত কারণ দেখিয়ে আমরা মতামত দিয়েছি। এখন স্বাধীনতা মানেই দায়িত্বহীনতা নয়, বরং দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া। আমরা সৃজনশীল কাজগুলোকে অবশ্যই আলাদাভাবে গুরুত্ব দেব। যে সিনেমা সমাজ গঠনে কিছুটা হলেও গুরুত্ব রাখবে।’
যাঁরা অশ্লীল সিনেমা চালাচ্ছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে, এমন কথাও জানান সার্টিফিকেশন বোর্ডের কেউ কেউ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সদস্য বলেন, ‘আমরা কাটপিসের জন্য জব্দ করা একটি সিনেমার সেন্সর সার্টিফিকেট বাতিল করার মতামত দিয়েছি। এটা বিবেচিত হলে শিগগির প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সবাই জানতে পারবেন। আশা করছি, সচেতনতা বাড়ছে।’