তখন নবম শ্রেণির ছাত্রী। বিদ্যা সিনহা মিম নিয়মিত স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। যেকোনো প্রতিযোগিতায় সবার আগে তাঁর অংশগ্রহণ থাকত। এটা ছিল ধরাবাঁধা নিয়ম। কারণ, মিমের মায়ের এককথা, যে প্রতিযোগিতাই হোক, অংশ নিতেই হবে—এটাই বড় কথা। দীর্ঘদিন আগে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা এমন একটি ছবি পোস্ট করে ভক্তদের উদ্দেশে মিম লিখলেন, ‘ছবি থেকে আমাকে খুঁজে বের করুন। কোথায় আমি?’
ছবিতে সহপাঠীদের সঙ্গে মিম। অভিনয়ে জনপ্রিয় না হলেও সেদিন সবাই ঘিরে ধরেছিল মিমকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই ছবিতে এই অভিনেত্রীকে খুঁজে পাওয়া কঠিন বটে। নাকি মিম নেই, সেই কথাও মন্তব্যের ঘরে কেউ কেউ লিখেছেন। তবে খুঁজে না পেয়ে অনেকে খেয়ালখুশিমতো মন্তব্য করেছেন, জোকার বেশে সবার পেছনে এই অভিনেত্রী। মিম নিজেই এই প্রতিবেদককে প্রশ্ন করলেন, ‘বলুন কোনটা আমি?’ পরে মিম হেসে বললেন, ‘সবাই মনে করছে ছবিতে আমি নেই। যাঁদের দেখা যায়, তাঁদের কারও সঙ্গেই আমার মিল নেই। তবে আমার স্কুলের বান্ধবী ও পরিচিতিজনেরাই শুধু চিনেছেন, আমি আসলে জোকারের সাজে।’
স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ এই আয়োজনের কথা মনে হলেই মিমের সবার আগে মনে পড়ে মায়ের কথা। কারণ, এ আয়োজনে অনেকটা বাধ্য হয়েই মিমকে অংশ নিতে হতো। ‘আম্মুর এক কথা, যেকোনো প্রতিযোগিতাই হোক না কেন, অংশ নিতে হবে। আর আমি কী সাজলে ভালো হবে, সেটা আম্মুই সিদ্ধান্ত নিতেন। সেবার আমি সম্ভবত নাইনে পড়ি। সবাই নাম লেখাচ্ছে। আম্মু বললেন, “এবার তুই জোকার সাজবি।” আম্মু নিজে ফাইনাল অনুষ্ঠানের দিন আমার সঙ্গে স্কুলে গিয়ে নিজের হাতে জোকার সাজিয়ে দিলেন। পুরো স্কুলের সবাই জোকার সাজে দেখে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল।’
স্কুলে এসেই জোকার সাজতে হয়েছিল মিমকে। জোকারের পোশাক থেকে শুরু করে সবই সংগ্রহ করেছিলেন মিমের মা। জোকারের যে মাস্ক; মুখের সেই অংশে ফ্লুইড দিতে হয়েছিল। মিম বলেন, ‘কীভাবে আমি জোকার সেজেছিলাম, কিছুই জানি না। সবই মা সাজিয়ে দিয়েছিলেন। পরে জোকার সেজে আমি নিজেকেই চিনতে পারিনি আর এটা মনে আছে যে স্কুলের অনেকে সেদিন আমার পেছনে ঘুরছিল, মাস্ক বানানোর জন্য মুখে ফ্লুইড দেওয়ায় মুখ শুকিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা না করার কারণে মুখ ধুতে পারছিলাম না। পরে সম্ভবত আমি দ্বিতীয় হয়েছিলাম শুনেই মুখ ধুয়েছিলাম।’
এর সঙ্গে মিম আরও যোগ করলেন, ‘আমি এর আগেও ঐতিহাসিক চরিত্রে সেজেছিলাম। সেসব সাজে আমার যেতে লজ্জা লাগত। আমি একটু লাজুক ছিলাম। সবাই আমাকে চিনতে পারত। কিন্তু সেবার জোকার সাজার কারণে কেউই আমাকে চিনতে পারেনি। আমার মধ্যে কোনো জড়তা ছিল না, লজ্জা পাচ্ছিলাম না। আমার শুধু এটাই মনে হচ্ছিল, আমাকে তো কেউ চিনে না। যে কারণে আমি জোকারের সব অ্যাক্টিভিটি করেছি। তারপর আমি খুব লম্বা ছিলাম, আমাকে দেখে সবাই খুব মজা পাচ্ছিল।’
প্রায়ই দেখা যেত মিমের জন্য দৌড় বা অন্য কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এক থেকে তিনের মধ্যে থাকা অনেক সময়ই সম্ভব হতো না। সেখানে একমাত্র শতভাগ প্রথম থেকে তিনজনের মধ্যে থাকার নিশ্চয়তা ছিল ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ পর্বে। মিম বলেন, ‘দেখা যেত আমি অনেক নিচের ক্লাসে পড়েও ক্লাস নাইন টেনের মেয়েদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হতো।
কারণ, আমার উচ্চতা ছিল সবচেয়ে বেশি। যে কারণে অনেক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে কখনোই পারতামই না। অন্যদিকে যেমন খুশি তেমন সেজে ফাস্ট বা সেকেন্ড হয়ে যেতাম।’ শুধু তা–ই নয়, উচ্চতা বেশি হওয়ার কারণে স্কুলে তার নাম ছিল ‘ওই লম্বা মেয়ে’ বললেন মিম।
স্কুল–কলেজ পেরিয়ে পরে মিম নাম লেখান অভিনয়ে। এখানেও তিনি মা ও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা পেয়েছেন। মিম মনে করেন, স্কুলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তাঁর মধ্যে থেকে ক্রমেই জড়তা কেটেছে। যেগুলো পরে তাঁকে অভিনয়েও সহায়তা করেছে, যাঁর জন্য ক্রমেই এগিয়ে চলা, সেই মায়ের চিকিৎসায় এখন দিল্লিতে রয়েছেন তিনি। মায়ের চিকিৎসা শেষে এই মাসেই দেশে ফিরবেন। আগামী মাসে শুটিংয়ে অংশ নেবেন বলে জানান, বিদ্যা সিনহা মিম।