ইরফান সাজ্জাদ
ইরফান সাজ্জাদ

১০ বছর পর সাজ্জাদ

আজ মুক্তি পাচ্ছে ইরফান সাজ্জাদ অভিনীত চলচ্চিত্র ‘ভয়াল’। আগেও তাঁর দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। তবে এবারের মতো প্রচারণায় আগে নামেননি। ঢাকার বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন, কথা বলছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি চলচ্চিত্র ক্লাব সদস্যদের সঙ্গে। গত বুধবার দুপুরে যখন কথা হচ্ছিল, তখনো প্রচারণায় ছিলেন এই অভিনেতা। ফাঁকে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুর কাদের

‘আমার কাছে মনে হয়েছে, সিনেমা বানানোর চেয়ে মুক্তি দেওয়ায় যুদ্ধ বেশি। এই কদিনে মনে হচ্ছে, একা যুদ্ধ করছি। তবে ভয় নেই, আমি আশাবাদী। ১০ বছর পর সিনেমা নিয়ে ফিরছি। যুদ্ধে যেহেতু নেমেছি, অনেক কিছু ঘটবে। এটাকে স্বাভাবিকভাবে মেনেও নিয়েছি। মনে করছি, কষ্ট করে বাধা কাটিয়ে উঠতে পারলে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা যাবে, বাকি পথ মসৃণ হবে। পরপর কয়েকটি সিনেমার পরিকল্পনা আছে। ওই ছবিগুলোও তো মানুষকে দেখাতে হবে,’ গত কয়েক দিনের প্রচারণার অভিজ্ঞতা নিয়ে বলছিলেন ইরফান সাজ্জাদ। আরও সমস্যার কথা বললেন, ‘নানান জটিলতায় ট্রেলার প্রচারের অনুমতি পেতে দেরি হয়েছে। এরপর প্রেক্ষাগৃহ ইস্যু। মুক্তির দুই দিন আগেও জানতে পারছি না, কয়টি প্রেক্ষাগৃহ চূড়ান্ত হয়েছে।

সিনেমার প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন আইশা খান ও ইরফান সাজ্জাদ। নির্মাতার সৌজন্যে

প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এই সময় সিনেমা মুক্তি দেব কি দেব না। ছবির শিল্পীরা তো পরিচিত না। এটাও ঠিক, সবাই তো আসলে যুদ্ধ করছে। সিনেমা হল বাঁচাতেও তো সারা বছর সিনেমা লাগবে। শাকিব (খান) ভাইয়ের পক্ষে তো সারা বছর ছবি করা সম্ভব না। উনি যে পর্যায়ে চলে গেছে, বছরে হয়তো দুই-তিনটা ছবি করবে। তাহলে সিনেমা হল চলবে কীভাবে? আমাদের মতো টিমকে যদি আন্তরিকভাবে উৎসাহ না দেওয়া হয়, কীভাবে হবে!’

‘ভয়াল’ ইরফানের তৃতীয় সিনেমা। ২০১৩ সালে চ্যানেল আইয়ের রিয়েলিটি শো ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম চ্যাম্পিয়ন হয়েই অভিনয়ে তাঁর পথচলা শুরু। এরপর করেন ‘মন জানে না মনের ঠিকানা’ ও ‘ভালোবাসা এমনই হয়’ নামের দুটি সিনেমা। দুটি ছবিরই প্রচারণা সেভাবে হয়নি। বিপ্লব হায়দার পরিচালিত ভয়াল নিয়ে হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ দেখে ইরফান সাজ্জাদও আশাবাদী, ‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণেরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। কে জানে, সেখান থেকে বাংলাদেশের একজন দুর্দান্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা উঠে আসবে না। নেক্সট সুপারস্টারও উঠে আসবে না।

ভয়াল সিনেমার একটি দৃশ্য। নির্মাতার সৌজন্যে

তাঁরা যে ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া ক্লাব গঠন করছেন, সেখানে সময় দিচ্ছেন, তাতে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সিনেমায় তাঁদের নেতৃত্বের জানান দিচ্ছেন। তাঁরাও ভয়াল নিয়ে খুব আগ্রহী। ফিল্মের টিজার, গান খুব পছন্দ করছেন। এই তরুণ প্রজন্মকে যদি বাংলাদেশের সিনেমা দেখাতে না পারি, আমাদের জন্য তা খারাপ। আমরা চেষ্টা করেছি, যে সিনেমা বানিয়েছি, তা সবার কাছে গিয়ে জানানোর। তাঁদের এটাও বলেছি, ভালো হলে ভালো বলো। খারাপ হলে খারাপ। আমরা চাই, সমালোচনার জায়গাটা তৈরি হোক।’

বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ‘ভয়াল’ ছবিটি ১৮টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত হয়েছে। তবে সংখ্যাটা ২০-এও যেতে পারে। প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, তা নিয়ে ইরফান সাজ্জাদের মাথাব্যথা নেই। তাঁর মতে, প্রথম সপ্তাহে ভালো সাড়া পেয়ে পরের সপ্তাহে দুটি হলও যদি বাড়ে, সেটাই আমাদের অর্জন। এটা আমাদের টার্গেটও। তাঁর বিশ্বাস, দর্শক যদি ছবিটি একবার দেখেন, দ্বিতীয় সপ্তাহে দর্শক বাড়বে।

ইরফান সাজ্জাদ

নেটওয়ার্কের বাইরে
শ্রীমঙ্গলের আদমপুর ইউনিয়ন থেকে দূরে এক খাসিয়াপুঞ্জিতে ছবির শুটিং হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে টানা ১৫ দিন সেখানে ছবিটির শুটিং হয়। ইরফান বললেন, ‘আদমপুর ইউনিয়ন থেকে ৪৫ মিনিট পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে খাসিয়াদের একটা পুঞ্জি আছে। সেখানে ছিল না কোনো নেটওয়ার্ক। সংরক্ষিত এলাকা। বিশেষ অনুমতি ছাড়া শুটিংও করা যায় না। ওখানে আমরা শুটিং করেছি, যাতে ভিজ্যুয়ালি ভিন্নধর্মী কিছু দেখতে পারে মানুষ। আমাদের মুক্তি পাওয়া গানটি দেখলে কিছুটা হলেও অনুমান করতে পারবেন। ট্রেলার প্রকাশের পর আরও ভালোভাবে সবাই উপলব্ধি করতে পারবেন। টানা ১৫ দিন শুটিং করেছি। দর্শকেরা ছবিটির লোকেশনেও বৈচিত্র্য খুঁজে পাবেন।’

ইরফান এও বললেন, ‘সিনেমা বলতে আমরা বুঝি মারদাঙ্গা কিছু, অনেক আয়োজন। ধুমধাম কিছু। ভয়াল-এও সেটা দেখিয়েছি, কিন্তু শেষ দৃশ্য পর্যন্ত একটা গল্পও দেখিয়েছি। এই ছবিকে থ্রিলার, সম্পর্কের গল্প বা দুর্দান্ত প্রেমের গল্পও বলা যেতে পারে। পর্দায় উপস্থাপনও হয়েছে নন-লিনিয়ার ওয়েতে। গল্পটা শেষ দৃশ্য পর্যন্ত না দেখে কেউ বুঝতে পারবে না। তাই মানুষ দিন শেষে প্রেমের জার্নিও দেখবে, দুর্দান্ত থ্রিলারও দেখবে।’

নিজেকে খোঁজার লড়াই
২০১৩ সালে বিনোদন অঙ্গনে কাজ শুরু করেন ইরফান সাজ্জাদ। এর পাঁচ বছর আগে, স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় প্রেম করে বিয়েপর্বও সারেন।

ইরফান সাজ্জাদ

ইরফানের মতে, ‘জীবনটা আমি মাইনাস থেকে শুরু করেছি। অল্প বয়সে বিয়ে করেছি। এরপর সংগ্রাম। বড় জার্নি। জীবনকে আজকের জায়গায় নিয়ে আসতে যে কষ্ট করতে হয়েছে, তা পুরো সিনেমার গল্প। দুই-তিন বছর আগেও একটা দুর্ঘটনা ঘটল, যে কারণে অভিনয়ে দুই-তিন বছরের বিরতি। সবকিছু মিলে মনে হলো, এরপর আমাকে দর্শকের কাছে যেতে হলে ভিন্ন রকম ইরফান সাজ্জাদ হয়ে যেতে হবে। সিদ্ধান্ত নিই, নাটকের কাজ বন্ধ করার। করেছিও। নাটকের কাজের সংখ্যা নেই বললেই চলে। এর মধ্যে তিনটা সিনেমা করেছি। একটা মুক্তি পাচ্ছে। আগামী বছরের ঈদে মুক্তি পাবে ‘আলী’। এরপর ‘ফুটবল ৭১’ (বর্তমান নাম ‘ঠিকানা বাংলাদেশ’) মুক্তি পাবে। এ যেন নতুন করে যুদ্ধে নামা। সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমার জীবন ও পরিবার। যখনই কোনো চাপ এসেছে, চ্যালেঞ্জ নিয়েছি, পরিবার সঙ্গে ছিল। অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সমর্থন আছে বলেই তো এগিয়েছি।’