গত মঙ্গলবার প্রকাশ পায় রায়হান রাফীর ‘তুফান’ সিনেমার প্রথম গান ‘লাগে উরাধুরা’। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই গানটি ভাইরাল। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের দর্শক-সমালোচকেরাও মেতে ওঠেন গানটি নিয়ে। ইউটিউব শর্টস, ফেসবুক রিলস, টিকটকসহ নানা মাধ্যমে হয়ে ওঠে বহুল চর্চিত বিষয়। রইল আলোচিত গানটির পেছনের গল্প জানাচ্ছেন মনজুরুল আলম
তখন কোক স্টুডিও বাংলার একটি গানের জন্য রাজ্জাক দেওয়ানের পরিবারের সঙ্গে বসছিলেন প্রীতম হাসানরা। তাঁরা বেশ কটি গান শুনিয়েছিলেন প্রীতমকে। তার মধ্যে ‘মা লো মা’ গানটি কোক স্টুডিও বাংলার জন্য নতুন করে রেকর্ডিং করা হয়। সেই সময়ে আড্ডায় রাজ্জাক দেওয়ানের আরও অনেক গান নিয়ে কথা হয়। তার মধ্যে একটি ছিল ‘তুমি কোন শহরের মাইয়া গো লাগে উড়াধুরা’। গানটির কয়েক লাইন রাজ্জাক দেওয়ান লিখেছিলেন। গানটির সাতটি শব্দ প্রীতমের মনে গেঁথে যায়। সেই সময় পরিচালক রায়হান রাফী প্রীতমের কাছে একটি আইটেম গান চান। একটি মেয়ে শহর থেকে এসেছে—এমন গল্পের গান। চটপট প্রীতম গানটির কথা বলেন।
যেভাবে তৈরি হলো ‘লাগে উরাধুরা’
রাফীর সব সিনেমায় রাসেল মাহমুদের লেখা গান থাকে। তাঁদের বোঝাপড়া ভালো। এবার তাঁকে নতুন গান লিখতে বলেন। সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়ার পর প্রীতম তাঁকে ফোন করেন। সেদিনই জানিয়ে দেন, গানের কোরাস হবে ‘তুমি কোন শহরের মাইয়া গো লাগে উরাধুরা’।
লাইনটি বলে প্রীতম তাঁকে বলে দেন, এরপর পরে ও আগের অংশগুলো নিজের মতো করে সাজাতে। এভাবেই তৈরি হয় গানটি। বেশ সময় নিয়ে গানটির কথা সাজাতে হয় এই গীতিকারদের। তবে গানটি যে এতটা আলোচনা তৈরি করবে, রাসেল মাহমুদ নিজেও বুঝতে পারেননি।
এক গানে মাতোয়ারা দেশ-বিদেশ
মুক্তির পর থেকেই দেশ-বিদেশের কয়েক শ ইউটিউবার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর মেতে ওঠেন ‘তুফান’ সিনেমার গানটি নিয়ে। সেখানে তাক লাগানোর মতো ছিল গানটি নিয়ে ইউটিউবারদের উচ্ছ্বাস। যাঁরা মূলত হিন্দি বা দক্ষিণি সিনেমা, সিরিজের রিভিউ করেন, এমন অনেক ইউটিউবারের প্রশংসা পায় গানটি। তাঁদের বেশির ভাগই আগে শাকিব খানকে নিয়ে কোনো ভিডিও করেননি। তাঁদের কাছে আগে বাংলা সিনেমা মানেই ছিল কলকাতার জিৎ, দেব, অংকুশদের নাম। তাঁরাই এবার চমকে উঠেছেন গানটিতে শাকিব খানকে দেখে। জাদুয়াজ চ্যানেল গানটি নিয়ে বলে, ‘গানটি পুরো মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে। বাণিজ্যিক সিনেমার গান হিসেবে এটা অসাধারণ।
প্রীতম আর দেবশ্রী অসাধারণ গেয়েছেন। গানটির সংগীতায়োজন বলিউডের সিনেমার মতোই মনে হয়েছে।’ এদিকে পাকিস্তানের ব্লগার যুগল সোলেমান আসিফ ও মোতিবা সোলেমান গানটি নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানান। তাঁরা বলেন, ‘মেগাস্টার শাকিব খানের মুভি তুফান-এর গানের সংগীত দারুণ। অসাধারণ শাকিবের নাচ। গানের কথা, সুর সবাইকে মাতিয়ে দিয়েছে। প্রীতম আর দেবশ্রীর তুলনা হয় না।’ তাঁরা গানের অর্থও শ্রোতাদের বুঝিয়ে দেন।
এ যেন নতুন এক শাকিব
শাকিব খানের সিনেমা দেখেননি, তাঁরাও গানটির সঙ্গে নাচছেন। তাঁদের প্রশংসায় শাকিবও। এই নায়ককে ২৫ বছরের ক্যারিয়ারের নিজেকে এবার ভিন্নভাবে পর্দায় আনলেন। গানটিতে শাকিবের লুক, উপস্থাপনা, কোরিওগ্রাফি প্রশংসায় ভাসছে। জেনিফার জেসিকা নামের এক দর্শক লিখেছেন, ‘গানটির জন্য তিনি নিজেকে এত সুন্দরভাবে তৈরি করেছেন, ভাবা যায়! গানে শাকিবের নাচ, স্টাইল, ফিটনেস বলে দেয়, আসলেই তিনি সুপারস্টার।’ অন্যদিকে শাকিবের ভক্তদের প্রিয় তারকাকে নিয়ে মাতামাতির শেষ নেই। নতুন এই গানে প্রিয় নায়ককে ভিন্নভাবে দেখে গত মঙ্গলবারই তাঁরা হাজারো ভিডিও বানিয়ে সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন। এমনকি আগেই টিকিট কেটে সিনেমাটি দেখার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে শাকিবভক্তরা অপেক্ষার দিন গোনা শুরু করেন, কবে থেকে টিকিট পাওয়া যাবে।
কেন ‘এল উরাধুরা’
প্রায় দুই বছর সময় নিয়ে সিনেমাটির কাজ করেছেন পরিচালক রাফী। সিনেমাটির প্রি-প্রোডাকশনের সময় থেকেই গানটি নিয়ে ভাবছিলেন। এই নির্মাতার ভাষ্যে, ‘এমন একটা গান চাইছিলাম, যে গান দেশের মানুষকে মাতোয়ারা করবে। গানের সঙ্গে নাচবেন সব বয়সী দর্শক। এই জন্য একের পর এক অপেক্ষা করতে হয়েছে। চার মাস লেগেছে গানটির কথা, সুর সংগীত ঠিক করতে।’ গানটি নিয়ে রাফী আরও বলেন, ‘আমরা যখনই কোনো অনুষ্ঠান বা ঘরোয়া কোনো আয়োজন যাই, তখন শোনা যায় হিন্দি গান। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। সেখানে তুফান নিয়ে শুটিংয়ের আগেই আমরা ভেবেছিলাম, এমন এক গান করব, যে গান আমাদের দেশের কথা বলবে। অনুষ্ঠান বা পার্টিতে আমাদের ঘরে ঘরে বাজবে। সেখানে আমাদের চেষ্টা এতটা সাফল্য পাবে, ভাবিনি।’
গানটি কেন প্রীতমকে করতে দিলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে রাফী বলেন, ‘প্রীতম এই ধরনের গান করে। উৎসবকেন্দ্রিক গানে তার দখল ভালো। সে এই সময়ের শীর্ষ সংগীতশিল্পীর একজন। যে কারণে তাকে দিকে গান করানো। অন্যদিকে তার সঙ্গে দ্বৈতভাবে কে যায়, সেটা দেখেছে সংগীত পরিচালক।’
‘লাগে উরাধুরা’ গানটির কোরাস অংশের সুর রাজ্জাক দেওয়ানের ‘ঘুম ভাঙ্গাইয়া গেল রে মরার কোকিলে’ অংশ থেকে নেওয়া। ওই অংশটুকুর লেখা শরীফুদ্দিনের। আর গানের বাকি অংশ লিখেছেন রাসেল মাহমুদ, সুর ও সংগীত প্রীতম হাসানের। এতে দ্বৈতভাবে কণ্ঠ দিয়েছেন প্রীতম হাসান ও দেবশ্রী অন্তরা।