বছর শেষে সিনেমা মুক্তি নিয়ে সরব থাকেন প্রযোজক ও পরিচালকেরা। কিন্তু এবার বছরের শেষ দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সে পথে হাঁটেননি সিনেমাসংশ্লিষ্ট কেউই। যে কারণে গত দুই মাসে এক ডজনের বেশি ছবি মুক্তি পায়নি। এসব সিনেমার সঙ্গে আছে নতুন বছরে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সিনেমাগুলোও। এ কারণে ঈদের আগে সিনেমা মুক্তিতে জট দেখছেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আবার মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে, ফলে এসব সিনেমা মুক্তি নিয়ে বাড়ছে অনিশ্চয়তা।
ঈদুল ফিতরের আগে ‘কাজলরেখা’, ‘বলী’, ‘শেষ বাজি’, ‘পেয়ারার সুবাস’, ‘শ্যামা কাব্য’, ‘নন্দিনী’, ‘দরদ’, ‘রুখে দাঁড়াও’, ‘গাঙচিল’সহ ডজনের বেশি সিনেমা মুক্তির কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে নন্দিনী, দরদ, গাঙচিলসহ বেশ কিছু সিনেমা আপাতত ঈদের আগে মুক্তি পাচ্ছে না।
পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘কাজলরেখা’ ঈদের আগে মুক্তির অপেক্ষায় আছে। সেন্সর ছাড়পত্র পেলে যেকোনো সময় মুক্তি পাবে বলে জানান এই পরিচালক। তিনি বলেন, ‘অনুদানের সিনেমায় একটা নিয়ম আছে। বোর্ড সভার সভাপতি হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী সিনেমাটি দেখেন।
এখন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী যেদিন সিনেমাটি দেখবেন এবং অনুমোদন দেবেন, তারপর আমরা সেন্সরের জন্য জমা দেব। শিগগিরই সিনেমাটি আমরা দর্শকের সামনে নিয়ে আসতে চাই। সেন্সর পাওয়ামাত্রই আমরা মুক্তির দিনক্ষণ জানিয়ে দেব। তবে এটা ঈদের আগে যেকোনো সময় হতে পারে।’ সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন শরীফুল রাজ, খাইরুল বাসার, মিথিলা, মন্দিরা, সাদিয়া আয়মান প্রমুখ।
মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৪৫তম আসরের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে অংশ নেয় ‘পেয়ারার সুবাস’। বৈবাহিক সম্পর্কের গল্প নিয়ে তৈরি সিনেমাটির পরিচালক নূরুল আলম আতিক। ২০১৪ সালে সিনেমার শুটিং শুরু হলেও বারবার শুটিং থেমে ছিল। করোনার সময় সিনেমাটির যাবতীয় কাজ শেষ হয়। পরবর্তীকালে সিনেমাটি মুক্তির কথা থাকলেও নির্বাচন ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য পিছিয়ে যায়। সিনেমার প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল বলেন, ‘আমাদের সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। আমরা ভালো একটা সময় দেখে ঈদের আগেই মুক্তির তারিখ ঠিক করব।’
ঈদে সিনেমা মুক্তিতে সব সময় বড় একটা চাপ তৈরি হয়। কারণ, ঈদের আগে এক মাস রোজায় কোনো সিনেমা মুক্তি পায় না। ঈদের সময় মুক্তি পাওয়া সিনেমা বাজিমাত করলেই সেই রেশ থাকে মাসখানেকের বেশি। এর মধ্যে নতুন ছবি হিট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কম। প্রযোজকেরাও চান না, এ সময় নতুন সিনেমা মুক্তি দিতে। তারপরই আবার চলে আসে ঈদুল আজহা। সে সময় সিনেমা মুক্তিতে আবার একটা প্রতিযোগিতাও থাকে। এ কারণে ঈদ ছাড়া অন্য সময়টা যেমন ভালোবাসা দিবস, বাংলা নববর্ষ, দুর্গাপূজাসহ বেশ কিছু দিবসে সিনেমার মুক্তি নিয়ে চাপ দেখা যায়। এদিকে দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা কম থাকায় ঈদ ছাড়া সিনেমা মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
নির্বাচনের আগেই আনকাট সেন্সর পায় শোয়াইবুর রহমান রাসেলের সিনেমা ‘নন্দিনী’। সিনেমাটি ঈদের আগে মুক্তির কথা থাকলেও এখন পিছিয়ে দিয়েছেন পরিচালক। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পরপর সিনেমাটি মুক্তি দিতে চেয়েছিলাম। কারণ, নির্বাচনের সময় তো প্রচারণা করার মতো পরিবেশ ছিল না। এখন যদি প্রচারণা করেও মুক্তি দিই, তাও এক মাস লেগে যাবে। অন্যদিকে মার্চে রোজা শুরু। সব মিলিয়ে তড়িঘড়ি করে সিনেমার মুক্তি দিতে চাই না। আর ঈদেও তো সিনেমা মুক্তি দেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে, যে কারণে দুই ঈদের মাঝামাঝি সময়টাই এখন ভরসা।’
তবে কেউ কেউ আবার ঈদের আগে সুযোগ না পেয়ে ঈদের পর সিনেমা মুক্তি দেওয়ার কথা ভাবছেন। কেউ আবার এই চাপের মধ্যেও ঈদে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ‘গাঙচিল’ সিনেমার পরিচালক নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল বলেন, ‘আমরা আগেই আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন যে ঝামেলা দেখছি, তাতে কঠিন শিডিউল। যা–ই হোক, ঈদেই সিনেমাটি মুক্তি দেব।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রযোজক ও পরিচালক জানান, ‘আমি সিনেমা বানিয়ে বসে আছি। ফেব্রুয়ারির শেষেও যদি মুক্তি দিই, তা এক–দুই সপ্তাহের পর আর চালানো যাবে না। কারণ, তখন রোজা শুরু হবে। আবার দুই ঈদের মাঝখানে সিনেমা মুক্তি দিলেও সমস্যা। পরের ঈদে আবার আমার সিনেমাটি চলবে না। এদিকে ঈদে নতুন সিনেমা মুক্তি পাবে। তখন আমাদের সিনেমা চালানো কঠিন। সে হিসাবে জুলাই পর্যন্ত সিনেমা মুক্তিতে রয়েছে অনিশ্চয়তা। সিনেমা নির্মাণের পর মুক্তি নিয়ে ঝামেলা পোহাতেই হচ্ছে।’