‘নিশোর হাত-পাও কথা বলে’

ছবির প্রচারে টিম সুড়ঙ্গ এখন কলকাতায়। শ্রী ভেঙ্কোটেশ ফিল্মসের অফিসে মীর আফসার আলীর সঙ্গে তমা মির্জা, আফরান নিশো ও রায়হান রাফী। ছবি: ফেসবুক থেকে
ছবির প্রচারে টিম সুড়ঙ্গ এখন কলকাতায়। শ্রী ভেঙ্কোটেশ ফিল্মসের অফিসে মীর আফসার আলীর সঙ্গে তমা মির্জা, আফরান নিশো ও রায়হান রাফী। ছবি: ফেসবুক থেকে

পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশি সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’। আফরান নিশো ও তমা মির্জা অভিনীত ছবিটি গত শুক্রবার থেকে পশ্চিমবঙ্গের ৩১টি হলে দেখা যাচ্ছে। মুক্তির দিন টালীগঞ্জের প্রথম সারির তারকারা ছবিটির জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশি সিনেমাটির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে কলকাতার জনপ্রিয় কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেল।

ভারতে ‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তি দিয়েছে শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস। এ উপলক্ষে শুক্রবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা সাতটায় কলকাতার অ্যাক্রোপলিস মলে ছবিটির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তারা। প্রিমিয়ার শোর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে শুক্রবার সন্ধ্যায় রায়হান রাফী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শোর আগে গিয়ে দেখি, শত শত মানুষের ভিড়। অন্য দেশে নিজের ছবি দেখতে দর্শকদের এমন আগ্রহ দেখে অন্য রকমের ভালো লাগা কাজ করছিল।’

মুক্তির দিন টুইট করে ‘সুড়ঙ্গ’ টিমের প্রতি শুভকামনা জানান প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও শুভশ্রী গাঙ্গুলি। প্রসেনজিৎ লিখেছেন, ‘“সুড়ঙ্গ” টিমের প্রত্যেককে জানাই অসংখ্য শুভেচ্ছা।’ অন্যদিকে শুভশ্রী লিখেছেন, ‘“সুড়ঙ্গ” টিমের জন্য শুভকামনা।’

‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার পোস্টার

মুক্তির পর কলকাতার জনপ্রিয় কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেল ‘সুড়ঙ্গ’-এর রিভিউ প্রকাশ করেছে। চলচ্চিত্রবিষয়ক ভারতীয় ইউটিউব চ্যানেল ফিল্ম কম্প্যানিয়ন লোকাল, এখানে হিন্দির বাইরে অন্য ভাষার সিনেমাগুলোর রিভিউ করা হয়। চ্যানেলটিতে ‘সুড়ঙ্গ’-এর রিভিউ করেছেন অরিত্র। ছবিটি নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘“সুড়ঙ্গ” কিছুক্ষণ পরপর নিজের জনরা বদলাতে থাকে। ছবিটি শুরু হয় রোমান্টিক কমেডি হিসেবে।

তখন পর্দায় রঙের ব্যবহার, দৃশ্যায়ন সবই ছিল রোমান্টিক কমেডির মতো। প্রথম আধঘণ্টা পর রোমান্টিক কমেডি থেকে রোমান্টিক ড্রামায় রূপ নেয়, সেখানেও শট নেওয়া থেকে রং বদলে যায়। চরিত্রের মনের অনুভূতির সঙ্গে মিলিয়ে একটি ওয়ান টেক দৃশ্যে পরিচালক লাল রঙের ব্যবহার করেছেন। পুরো ছবিতে জনরা বদলানোর সঙ্গে ছবির মুড, ক্যামেরা, কালার বদলের ব্যাপারটি দারুণভাবে করেছেন পরিচালক।’

এ ছাড়া পুরো সিনেমায় ওয়ান টেক শটের ব্যবহার, সিনেমাটোগ্রাফি, শিল্প নির্দেশনা, শব্দ গ্রহণ—কারিগরি দিকের প্রশংসা করেছেন তিনি। ছবিতে আফরান নিশোর পারফরম্যান্সের ভূয়সী প্রশংসা করে রিভিউয়ে অরিত্র বলেন, ‘তিনি এমন এক অভিনেতা, যিনি বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন। পর্দায় মাসুদ চরিত্রটিকে বাস্তবের সঙ্গে আপনি মেলাতে পারবেন। পর্দায় মাসুদ যা করেছেন, সেটা আপনি কখনো না কখনো বাস্তবে হতে দেখেছেন। ছবিটিকে এককথায় বলতে গেলে বলতে হয়—এটা আফরান নিশো শো।’

তমা মির্জাসহ সিনেমার অন্যান্য শিল্পী, বিশেষ করে পুলিশ কর্মকর্তা আপেল খান চরিত্রে শহীদুজ্জামান সেলিমের অভিনয়েরও প্রশংসা করেছেন অরিত্র। চরিত্রটি দেখে তাঁর অনুরাগ কশ্যপের ‘আগলি’ সিনেমার পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে অভিনয় করা গিরীশ কুলকার্নির কথা মনে পড়েছে।

সব বিষয়ে প্রশংসা করলেও একটি বিষয় নিয়ে আপত্তি তুলেছেন অরিত্র, সেটা নারী চরিত্রের উপস্থাপন। হিন্দি সিনেমার পরিচালক লাভ রঞ্জনের সঙ্গে রায়হান রাফীর তুলনা করে অরিত্র বলেছেন, লাভের মতো রাফীর সিনেমায়ও নারী চরিত্রকে নেতিবাচকভাবে দেখানো হয়।

কলকাতার আরেক জনপ্রিয় ইউটিউবার রূপমও ছবিটির প্রশংসা করেছেন। নিজের চ্যানেল রূপমস রিভিউয়ে তিনি ‘সুড়ঙ্গ’-এর রিভিউয়ে ছবিটির সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হিসেবে আফরান নিশোর অভিনয়ের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘যাঁরা ছবিটি দেখেননি, তাঁরা অনুমানও করতে পারবেন না ছবিতে তিনি কী পর্যায়ের পারফরম্যান্স করেছেন। আমি জানি না, আমাদের এখানে (পশ্চিমবঙ্গে) কোন অভিনেতা এই চরিত্রে অভিনয় করতে পারবেন।’ তিনিও ছবির নির্মাণসহ কারিগরি দিকের প্রশংসা করছেন। সুড়ঙ্গের ভেতর ওয়ান টেক শটের ব্যবহারের তারিফ করেছেন তিনি। তবে রূপমের মনে হয়েছে, প্রথমার্ধে দুর্দান্ত শুরুর পর দ্বিতীয়ার্ধে ছবিটি কিছুটা গতি হারায়। কিন্তু শেষটা এত দুর্দান্ত যে আগের ফর্মে ফিরে আসে।

আরেক ইউটিউবার সাগরনীল তাঁর আর্টিস্টিক সেভেনথ সেন্সে দেওয়া রিভিউয়ে বলেন, ‘কেবল ভিজ্যুয়াল দিয়ে বিচার করলে আমি সেসব বাংলাদেশি সিনেমা দেখেছি, “সুড়ঙ্গ” সেগুলোর অন্যতম। কালার, সাউন্ড ডিজাইনও ভালো—সব মিলিয়ে এটি যে বাংলাদেশের কাজ, দেখার সময় তা মনেই থাকে না। ক্যামেরার কাজ দুর্দান্ত—একটা দৃশ্য আছে, মাসুদ একটা কিছু দেখছে; সেই দৃশ্যটি ওয়ান টেকে যেভাবে শুট করা হয়েছে, কালারের ব্যবহার হয়েছে, বাংলা সিনেমায় তা বিরল।’

‘সুড়ঙ্গ’ ছবিতে তমা মির্জা ও আফরান নিশো। চরকি

আফরান নিশোর প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘ছবিটি যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের মনে হবে, মাসুদ চরিত্রটি আফরান নিশো ছাড়া আর কেউই করতে পারতেন না। নিশো নিজের পুরো শরীর দিয়েই যেন অভিনয় করেছেন। বাঙালি অভিনেতারা শরীর দিয়ে অভিনয় করেন না, যেটা বলিউড বা দক্ষিণি তারকারা করেন। কিন্তু নিশো তা করে দেখিয়েছেন। ছবিতে তাঁর হাত-পাও কথা বলে।’ ছবির ‘গা ছুঁয়ে বলো’ গানসহ সংলাপ, অন্যান্য শিল্পীরও প্রশংসা করেছেন সাগরনীল। তবে ছবির কিছু নেতিবাচক দিকও তুলে ধরেছেন তিনি। বলেছেন, রায়হান রাফীর সিনেমার নারী চরিত্রের পরিণতি কী হবে, সেটা অনেক দর্শক আগেই অনুমান করায় টুইস্টের ‘শকিং ভ্যালু’ কিছুটা কমে গেছে।