অন্য শাকিবের গল্প

শাকিব চৌধুরী, আলিফ আলাউদ্দিন ও ফারুক শামস
ছবি: শাকিব চৌধুরীর সৌজন্যে

সিনেমা, সিরিজ নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিতই আড্ডা দেন শাকিব চৌধুরী। ক্রিপটিক ফেইট ব্যান্ডের এই ভোকালিস্ট একসময় ভাবলেন, আচ্ছা ব্যাপারটা যদি ইউটিউবে করা যায়, তাহলে কেমন হবে। ব্যস, এই ভাবনা থেকে শুরু হলো কথা বলা। জন্ম নিল ‘গিক মিক’। সিনেমাপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে আলোচনাধর্মী এই প্ল্যাটফর্ম। সহজবোধ্য বিশ্লেষণ, আড্ডার ভঙ্গিতে আলাপচারিতার কারণেই শোটি পছন্দ করেছে দর্শক।

গতকাল দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে ‘গিক মিথ’ শুরুর গল্পটা বলছিলেন শাকিব চৌধুরী। জানালেন, দুই ধাপ পার হয়ে প্ল্যাটফর্মটি আজকের চেহারা পেয়েছে। ‘২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শুরুর পর তিন চারটি পর্ব করি, ওগুলো এখন নেই। ক্যামেরা ভাড়া করে, এডিটর নিয়ে করেছিলাম, যেভাবে বড় শো হয়। পরে দেখলাম এটা অর্থনৈতিকভাবে টেকসই না। কিছুদিন একটি বেসরকারি এফএম চ্যানেলে শো করেছিলাম। কিন্তু দেখলাম ভিডিওতে আড্ডার যে ফিল, রেডিওতে সেটা আসছে না। আমরা সাফল্য বা ব্যর্থতা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম না। চেয়েছিলাম মজা লাগবে এমন একটা শো করতে,’ বলছিলেন শাকিব।

এরপর শাকিব ভাবতে থাকেন বড় কোনো হাঙ্গামা ছাড়া নিজে নিজেই কীভাবে শো করা যায়। গুগল করে আইডিয়াও মিলল—ফোন দিয়েই এটা করা যায়। শো দাঁড়া করতে আর সমস্যা হলো না। তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম পর্ব ছিল ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘জাস্টিস লিগ’-এর মতো হেভিওয়েট সিনেমা নিয়ে, প্রচারিত হয় ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর। আড্ডায় তাঁর সঙ্গী সংগীতশিল্পী আলিফ আলাউদ্দিন ও বন্ধু ফারুক শামস।

‘গিক মিথ’-এর একটি পর্বে কথা বলছেন ফারুক শামস, শাকিব চৌধুরী ও আলিফ আলাউদ্দিন। ছবি: শাকিব চৌধুরীর সৌজন্যে

এরপর গত সাত বছরে আড়াই শর বেশি পর্ব প্রচার হয়েছে। প্রতি রোববার রাত সাড়ে ১০টায় সরাসরি সম্প্রচারিত হয় নতুন পর্ব। তিনজন সপ্তাহজুড়ে যা যা দেখেছেন, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিরিজ, সিনেমা নিয়ে কাটাছেঁড়া করেন। মাঝেমধ্যে শোতে যুক্ত হন কোনো পরিচালক। এই যেমন গত ঈদে মহানগর ২ আলোচিত হওয়ার পর এসেছিলেন নির্মাতা আশফাক নিপুন। এ ছাড়া সিনেমা বা সিরিজ দেখার পর ছোট ছোট ভিডিও বানিয়েও পোস্ট করেন শাকিব।

দেশি কাজ নিয়েও কথা হয়। দেশের কাজ নিয়ে কথা বলার সময় তাঁরা কি মুক্তভাবে মত প্রকাশ করেন?

ফারুকী ভাই আমার পছন্দের একজন নির্মাতা, তিনি জিনিয়াস। তবে আমি “ডুব” নিয়ে হতাশ ছিলাম, ওনার গল্প বলার ধরন ভালো লাগেনি। এটা নিয়ে আমরা শো করেছি, নিজে আলাদাভাবে লিখেছি। আমার জানামতে, বাংলাদেশে কম পরিচিত একজন সেবারই প্রথম আরেকজন তারকার সমালোচনা করে বলেছে আপনার কাজটা ভালো হয় নাই।

এ প্রশ্নের উত্তরে শাকিব বলেন, ‘আমি অনেক দিন বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করছি। ফলে (মোস্তফা সরয়ার) ফারুকী, অমিতাভ (রেজা) ভাই বা পিপলু (আর খান) ভাইসহ  অনেক প্রতিভাবান নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করছি। ফলে আমাদের সিনেমার সীমাবদ্ধতা নিয়ে ভালো ধারণা আছে। রিভিউর সময় গল্প নিয়ে তেমন কথা বলি না কারণ গল্প সাবজেক্টেটিভ—আমার ভালো লাগল বা লাগল না, আরেকজনের ক্ষেত্রে উল্টোটাও হতে পারে। চলচ্চিত্র জিনিসটা যেহেতু অডিও-ভিজুয়্যাল, ফলে আমি ক্যামেরা, সাউন্ড, সম্পাদনা এসবে বেশি গুরুত্ব দিই। দেশি কনটেন্ট নিয়ে কথা বলার সময় মৌলিক কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে কাটাছেঁড়া করি। সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখে অন্য বিষয়গুলো নিয়ে একটু “ইজি রিভিউ” দেওয়ার চেষ্টা করি।’

বাংলাদেশে তো অনেকেই সমালোচনা নিতে পারেন না। আপনার অভিজ্ঞতা কী?

শাকিব চৌধুরী, আলিফ আলাউদ্দিন ও ফারুক শামস। ছবি: শাকিব চৌধুরীর সৌজন্যে

শাকিব বললেন, ‘প্রথম প্রথম যখন শো করতাম, যথেষ্ট তিরস্কার, গালিগালাজ শুনতে হয়েছে। অনেকে বলেছেন, সিনেমা, সিরিজ নিয়ে কথা বলার আমি কে? আমি মনে করি, আমরাই প্রথম এ ধরনের শো করে কোনো সৎভাবে কনটেন্টের রিভিউ দিয়েছি। অনেকেই জানেন না, বিজ্ঞাপনী সংস্থার ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে ২০ বছর ধরে আমি দেশের প্রথম সারির নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করছি।

তাই ৩০ বছর, ৪০ বছর এসব উদ্‌যাপন করতে চাই না। নিজেদের মতো একটা উদ্‌যাপন করব অবশ্যই, তবে সেটাকে তিন দর্শক পূর্তি বলব না।

নির্মাণ প্রতিক্রিয়া নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা আছে।’ এ প্রসঙ্গে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ডুব’ সিনেমা নিয়ে হওয়া অভিজ্ঞতার কথা জানালেন শাকিব, ‘ফারুকী ভাই আমার পছন্দের একজন নির্মাতা, তিনি জিনিয়াস। তবে আমি “ডুব” নিয়ে হতাশ ছিলাম, ওনার গল্প বলার ধরন ভালো লাগেনি। এটা নিয়ে আমরা শো করেছি, নিজে আলাদাভাবে লিখেছি। আমার জানামতে, বাংলাদেশে কম পরিচিত একজন সেবারই প্রথম আরেকজন তারকার সমালোচনা করে বলেছে আপনার কাজটা ভালো হয় নাই। এরপর দেখলাম অনেকেই বিভিন্ন কনটেন্টের সৎ রিভিউ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বুঝলাম, আমাদের কাজের একটা প্রভাব পড়েছে। যখন কারিগরি বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করলাম, তখন যাঁরা সাউন্ড নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। নিকেতনে যেখানে সব নির্মাতার অফিস, সেখানে আগে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি হয়েছে, এখন আর হয় না। এটা আমাদের শোর অর্জন।’

শাকিব চৌধুরীর সঙ্গে আলাপ, গান প্রসঙ্গ না এসে কি পারে, বিশেষ করে ২০২৩ যখন ক্রিপটিক ফেইটের তিন দশক পূর্তির বছর। গত ২৩ মার্চ ৩০ বছর পূর্ণ করেছে ব্যান্ডটি। শাকিব জানালেন, তিন দশক পূর্তি নিয়ে তেমন আয়োজন না থাকার কারণ, ‘এসব করলে আমার মনে হয় ব্যান্ড বুড়ো হয়ে গেছে (হাসি)। তাই ৩০ বছর, ৪০ বছর এসব উদ্‌যাপন করতে চাই না। নিজেদের মতো একটা উদ্‌যাপন করব অবশ্যই, তবে সেটাকে তিন দর্শক পূর্তি বলব না।’