দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে অন্য সবার মতো উৎকণ্ঠায় রাত-দিন পার করছেন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরাও। পরিচালক, অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলীসহ বেশির ভাগ তারকা এই মুহূর্তে শুটিং করার মানসিকতায় নেই। অনেকেই শিক্ষার্থীদের পাশে রয়েছেন। তাঁরা মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়াসহ নানা বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের পাশের রয়েছেন। তাঁর মতে, দেশ গঠনের জন্য শিক্ষার্থীদের এই দাবি যৌক্তিক। সেখানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকে সন্ত্রাসীদের হামলা বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘সন্ত্রাস থামান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, আপনাদের কাজ যারাই সন্ত্রাস করছে, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান! তা সে যে পক্ষেরই হোক। যার যে মত, সে সেই মত প্রকাশ করবে, সমাবেশ করবে, মিছিল করবে। কিন্তু পিস্তল দিয়ে, শটগান দিয়ে কোন জনমত প্রকাশ করা হচ্ছে? কালকে লাখ লাখ লোক সমাবেশ করল, দেশাত্মবোধক গান গাইল, আমরা তো তাদের কারও হাতে পিস্তল দূরের কথা, একটা লাঠিও দেখলাম না। আজ কেন এই সন্ত্রাস? কেন ৩২টা (বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই তথ্য। পরে আরও অনেকে মারা যান।) লাশ পড়ল?’
তিনি আরও লেখেন, ‘যাঁরা মারছেন, মার দিতে দিতে সাধারণ জনতাকে এ রকম সাহসী বানিয়ে দেবেন না যে সে ঘুরে দাঁড়ায়! তখন যে অগ্ন্যুৎপাত হবে, সেটা কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তার আগেই সন্ত্রাস থামান!’
শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য গত শনিবার এক দফা দাবি ঘোষণা করা হয়, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের এই চাওয়াকে ছোট করে দেখতে চান না চলচ্চিত্র পরিচালক সৈয়দ ওয়াহিদ্দুজ্জামান ডায়মন্ড। তিনি মনে করেন, শিক্ষার্থীদের কোনো আন্দোলন কখনোই বিফলে যায় না। তিনি লিখেছেন, ‘সাক্ষ্য দিচ্ছে ৫২, ৬৯, ৭১, ৯০। যাঁরা ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে, তাঁরা ভেবে দেখুন, ইতিহাসে কোথাও ছাত্র পরাজয়ের কথা লেখা নাই।’
অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘২০ টাকার আলু যখন ৬০ টাকা হলো, মানুষ চুপ ছিল। দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনীতিবিদেরা আত্মসাৎ করল, দেশের বাইরে পাচার করল, মানুষ চুপ ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনিয়ম, গুম, স্বেচ্ছাচারিতায় মানুষ চুপ ছিল। তারা চুপ থাকতে থাকতে বোবা হয়ে গিয়েছিল! আর বোবারা যদি কখনো কথা বলতে শেখে, তাদের চুপ করানো যায় না। ছাত্ররা বোবাদের কথা বলতে শিখিয়ে দিয়েছে! চুপ করাবেন কাকে? মানুষ যখন মৃত্যুভয় জয় করে ফেলে, তখন আর তাদের হারানো যায় না।’
শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষেরা ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, উত্তরা, রামপুরা, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ীসহ সারা দেশের নানা স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে গণজমায়েত শুরু করেন। এর মধ্যে রাত ১২টার দিকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হন কেউ কেউ। অভিনেত্রী সুনেহরা বিনতে কামাল ফেসবুক বন্ধ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘সবাই একসঙ্গে থাকলে মোবাইল ডেটা দিয়ে কী করবে? যারা জানার তারা ইতিমধ্যে জানে, মোবাইল ডেটা বন্ধ করে কী করবেন আপনারা?’
গতকাল রোববার তরুণ অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘পারে শুধু ইন্টারনেটই বন্ধ করতে! এর আগেও তো বন্ধ করসে, লাভ হয়েছে কোনো? হয় নাই, হবেও না। সাধারণ মানুষের ক্ষমতার ব্যাপারে তো এত দিনে একটু হলেও ধারণা হওয়ার কথা যে, এরা একেকটা আগুন। পুরা দুনিয়ায় আগুন ধরায় দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই মানুষগুলা।’
দিনরাত এখন যেন একাকার হয়ে গেছে চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদের। ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছেন না। এর মধ্যেও ছাত্রদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন। শুটিং বন্ধ করে সব খবর রাখছেন বাসা থেকে। এদিকে আজ আবার মোবাইল ডেটা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ করা হয়েছে। এ ঘটনাকে শৈশবের ঘটনার সঙ্গে মিলিয়েছেন এই চিত্রনায়ক। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ছোটবেলায় খেলার সময় যে বন্ধু পারত না সে কী কী করত? প্রথমত, খেলার ব্যাট নিয়ে চলে যেত। দ্বিতীয়ত, দেখে নেওয়ার হুমকি দিত। আবার কখনো রাগে থুথু দিয়ে দৌড় দিত। ইন্টারনেট আর কারফিউ দেখে অনেক দিন পর শৈশবের কথা মনে পড়ল।’