আমারও ছেলের বউয়ের মুখ দেখতে ইচ্ছা করে: ববিতা

গত মে মাসের মাঝামাঝি একমাত্র ছেলে অনিকের কাছে ছুটে গেছেন দেশের চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনয়শিল্পী ফরিদা আক্তার ববিতা। চাকরিজীবী ছেলের অফিসের কাজ শেষে মা-ছেলে দুজনেই নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান। গত কয়েক বছর ৩০ জুলাইয়ে জন্মদিনের সময়টা কাটছে ছেলের কাছে। এবারও আছেন সেখানে। বাংলাদেশ সময় গতকাল শনিবার রাতে কথা হয় ববিতার সঙ্গে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে সময় কাটছে তাঁর এবং দেশের কী মিস করছেন
উচ্চশিক্ষার জন্য ববিতা তাঁর একমাত্র ছেলেকে কানাডায় পাঠিয়ে দেন। দেশটির ওয়াটার লু ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে এখন চাকরি করছেন। ছেলের কারণে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ববিতাকে কানাডায় যেতে হয়।
ছবি : ববিতার সৌজন্যে
মা–ছেলে মিলে কানাডার কিচেনার শহরে থাকেন। দিনটিতে মাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার নানা চেষ্টা করেন। এবারও তেমন কিছু করবে বলেই জানালেন ববিতা।
কানাডায় ছেলের কাছে গেলে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াতে পারেন ববিতা। এই আসা-যাওয়ার মধ্যে ববিতার মাছ ধরার শখ তৈরি হয়। ববিতার মতে, শুরুর দিকে শখ থাকলেও এখন তা নেশা হয়ে গেছে। জানালেন, তাঁর বাবারও ছিল এই নেশা। কিন্তু সেটা যে বংশপরম্পরায় নিজের ভেতর চলে আসবে,  তা তিনি নিজেও ভাবতে পারেননি। কানাডা ও আমেরিকায় গেলে ছুটে যান মাছ ধরার বিভিন্ন স্থানে। ছেলের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়াও তাঁর রুটিন। ববিতার মতে, ছিপ হাতে কৈশোরকে নতুন করে ফিরে পেয়েছেন তিনি। বেড়ানোর পাশাপাশি তাই বড়শি দিয়ে মাছ শিকারে দারুণ আনন্দ খুঁজে পান তিনি। ববিতার মাছ শিকারের তেমনিই একটি স্থিরচিত্র।
চাকরিজীবী ছেলে অনিকের মাঝে বিয়ের কথা শোনা গিয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ উঠতেই ববিতা বললেন, বিয়ের ব্যাপারটা ওর ওপরই ছেড়ে দিয়েছি। আমারও ছেলের বউয়ের মুখ দেখতে ইচ্ছা করে, তবে কোনো চাপ দিতে চাই না।
ছেলের সঙ্গে জন্মদিনে আনন্দ উদ্‌যাপন করলেও ঢাকার অনেক কিছুই মিস করেন। বললেন, ‘কয়েক বছর ধরে ডিসিআইআইয়ের (ডিসট্রেসড চিলড্রেন অ্যান্ড ইনফ্যান্টস ইন্টারন্যাশনাল) শুভেচ্ছাদূত হওয়ায় আমার কাছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা আসত। তাদের রান্না করে খাওয়াতাম। ওরা আমাকে গান শোনাত, নেচে দেখাত। আমার জন্য নানা ধরনের উপহার আনত। ওদের খুব মিস করছি। এ ছাড়া চলচ্চিত্রের আমার অনুজ অনেকে স্বাভাবিক সময়ে বাসায় আসত, তাদেরও ভীষণভাবে মিস করব।’
জন্মদিনে নানাজনের নানান উপলব্ধি হয়। বরেণ্য অভিনয়শিল্পী ববিতারও তেমনটা হয়। কথা প্রসঙ্গে ববিতা বললেন, ‘আমার জন্য সৃষ্টিকর্তা যে বয়সটা নির্ধারণ করেছেন, তা থেকে একটি বছর কমে গেল, এটা মনে হয়। বাস্তবে তো জন্মদিন এলেই জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে ফেলছি, এরপরও আমরা উদ্‌যাপন করি। তবে ধুমধাম করে জন্মদিন কখনোই উদ্‌যাপন করিনি। আমি মনে করি, এত হইচই করার কিছু নেই। মনে হয়, জীবন একটাই, এখনো অনেক কিছু করার আছে। কী করতে পারলাম না—এসব নিয়ে ভাবি।’
ববিতা মনে করেন, সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক মানুষকে কোনো না কোনো যোগ্যতা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। সময় থাকতে তার সদ্ব্যবহার করা উচিত। তিনি বললেন, ‘জীবনটা সাদামাটা না করে রঙিন করা উচিত। এমন কিছু কর্ম করে যাওয়া উচিত, যেগুলোর মাধ্যমে মানুষ মনে রাখেন। আমিও হয়তো চেষ্টা করেছি এমন কিছু কর্ম রেখে যেতে, যেগুলোর কারণে আমাকে মানুষ মনে রাখেন। জানি না কতটুকু কী করতে পেরেছি।’
অভিনয় দিয়ে মানুষের মন জয় করা ববিতাকে এখন আর অভিনয়ে দেখা যায় না। তবে তিনি অভিনয় করতে চান। বললেন, ‘আমি তো আমৃত্যু অভিনয়ে থাকতে চাই।’
কথায় কথায় ববিতা বললেন, ‘সেই ধরনের গল্প পাই না। মুগ্ধ করার মতো গল্পের প্রস্তাব নিয়ে কেউ আসেননি। একটা কথা কি, কোনো শিল্পীই এক জীবনে সবকিছু পেয়ে গেছেন, এটা হয় না। সব শিল্পীরই মনের মধ্যে আমৃত্যু অতৃপ্তি থাকবে। আমারও আছে। সুনির্দিষ্ট করে বলতে চাই না। তবে কোনো পরিচালক নতুন কোনো ভাবনা নিয়ে আমার কাছে আসেননি।’