বিনোদন অঙ্গনে ঈদ উৎসবের প্রস্তুতি কয়েক মাস আগেই শুরু হয়ে যায়। আগামী ঈদুল ফিতরের জন্য তৈরি সিনেমা, নাটক, ওয়েব ও গানের কনটেন্ট মুক্তির প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। সেই আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে দর্শকের মধ্যেও। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে কনটেন্টগুলোর প্রচার চোখে পড়ার মতো।
তবে অন্তর্জালে সিনেমার আলোচনাই বেশি হচ্ছে; প্রিয় তারকার সিনেমার পোস্টার, গান, টিজার শেয়ার করে নিজের মত জানাচ্ছেন অনেক ভক্ত। সে তুলনায় নাটক বা অন্যান্য কনটেন্ট নিয়ে আলোচনা কম।
এ ব্যাপারে ঈদের সম্ভাব্য ছবি ‘কাজলরেখা’র পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘সিনেমা একটি বড় মাধ্যম। আর বড় মাধ্যমে একটু প্রচার–প্রচারণা বেশিই হয়। ঈদের সময় বড় বড় বাজেটের ছবি আসে। সিনেমায় সাধারণত নাচ, গান, ভালোবাসা, অ্যাকশন থাকে। দর্শক এখান থেকে একটা পরিপূর্ণ কনটেন্ট পান। এ কারণে ঈদের আগে থেকেই সিনেমা নিয়ে দর্শকের আগ্রহ শুরু হয়। তা ছাড়া নাটক, গান—এগুলো সিনেমা থেকে ভিন্ন। সিনেমা এমন একটি মাধ্যম, পকেটের টাকা খরচ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে দল বেঁধে হলে গিয়ে দেখেন দর্শক। এটার আমেজই আলাদা।’
এই পরিচালকের বক্তব্য, ‘ঈদের সিনেমায় একটা প্রতিযোগিতার আবহ তৈরি হয়। যার কারণে সিনেমার খবর দ্রুতই ছড়ায়। তবে সারা বছরই যদি এমন প্রতিযোগিতার আবহটা থাকত, তাহলে সিনেমা আরও আগেই ঘুরে দাঁড়াতে পারত।’
অন্যদিকে টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টেলিপ্যাব) সূত্রে জানা গেছে, এই ঈদে টেলিভিশন ও ইউটিউবে চ্যানেল মিলিয়ে প্রচারের অপেক্ষায় আছে ৫০০ থেকে ৬০০ নাটক ও টেলিছবি। কিন্তু এত কনটেন্ট থাকলেও সেভাবে প্রচার নেই। অথচ কয়েক বছর আগেও নাটকের নতুন পোস্টারে ফেসবুকের সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোতে আলোচনা হতো। প্রিয় তারকার নাটক নিয়ে ভক্তদের মধ্যে নানা তর্কবিতর্কও হতো। গত কয়েক বছরে সামাজিক মাধ্যমে নাটক নিয়ে সেভাবে আলোচনা হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে টেলিপ্যাবের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসীর বলেন, ‘এখন ঈদের নাটক আর সারা বছরের নাটকের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। সব নাটকের গল্পই কাছাকাছি। ফলে দর্শকের মধ্যে নাটক নিয়ে আলোচনার আগ্রহ কমেছে। তা ছাড়া শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজকদের মাথায় এখন একটাই চিন্তা—ভিউ। আগে যেমন টেলিভিশনকেন্দ্রিক নাটক, টেলিছবির আলোচনা আগে থেকেই দর্শকের মধ্যে ছড়িয়ে যেত, এখন টেলিভিশনে নাটকের সেই জায়গা নেই।’ একই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের সময় বিনোদন অঙ্গনে যে পরিমাণ বিনিয়োগ হয়, তার ৮০ শতাংশই নাটক, টেলিছবিতে। অথচ সেই জায়গারই আলোচনা কম।’
তবে বিষয়টি পরিচালক মিজানুর রহমান আরিয়ান ব্যাখ্যা করলেন অন্যভাবে। তাঁর ভাষ্যে, ‘এখন গল্প, অভিনেতা, পরিচালকের মধ্যে যোগাযোগের জায়গাটা কমেছে। সাধারণত জনপ্রিয় অভিনেতা, পরিচালকদের কাজের বেশি আলোচনা হয়। কিন্তু এমন বেশ কিছু পরিচালক, আর্টিস্ট ওটিটির দিকে ঝুঁকেছেন। নাটকে টিমে বোঝাপড়াটা কমেছে। ফলে মুক্তির আগে নাটক নিয়ে যে আলোচনা হতো, কিছুটা হলেও শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তবে নতুনেরা কাজ করছেন। তাঁদের সময় দিতে হবে। একসময় তাঁদেরও বোঝাপড়া তৈরি হবে। তখন নাটক আবার আলোচনায় ফিরবে।’
ঈদের অডিও গানেও আগের মতো জৌলুশ নেই। গানের সংখ্যাও কমেছে। জানা গেছে, ঈদুল ফিতরে শ খানেক অডিও ও ভিডিও গান প্রকাশিত হতে পারে। একসময় ঈদের আগে প্রিয় শিল্পীর গানের জন্য আলাদা অপেক্ষা থাকত শ্রোতাদের। গত বেশ কয়েক বছরে সেই আলোচনা কমে গেছে। এর কারণ কী? মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইবি) মহাসচিব শেখ শাহেদ আলী মনে করেন, গান প্রকাশের ধরন বদল এর বড় কারণ। তাঁর ভাষ্যে, ‘এখন তো অডিও গানের সিস্টেম পরিবর্তিত হয়ে গেছে। অ্যালবাম বন্ধ হওয়ার পর মিউজিক ভিডিওর যুগ এল। একটা সময় সেটাও কমে গেল। কয়েক বছর আগেও ঈদে মিউজিক ভিডিও বের করার তোড়জোড় ছিল অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর। ভিডিওগুলোতে পরিচালক, মডেল, শিল্পী—তাঁদের নিয়ে একটা আলোচনা তৈরি হতো। কিন্তু এসব থেকে একটা সময় আয় কমতে থাকে। এ কারণে অডিও, ভিডিও গানে আগ্রহও কমেছে প্রতিষ্ঠানগুলোর। এখন তারা নাটকের গানে ঢুকে যাচ্ছে।’
শাহেদ আলী মনে করেন, একটা সময় অডিও গান দোকানে দোকানে বাজত। আশপাশের সবাই শুনতেন, জানতেন। এভাবেই গান ছড়িয়ে যেত। এখন আর এই সংস্কৃতি না থাকায় গান নিয়ে আলোচনাও কম হচ্ছে।