ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ চিত্রনায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে ‘ধর্ষণের’ অভিযোগ তুলেছেন এক প্রযোজক। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার অন্যতম প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহ। শিল্পী সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক সাইমন সাদিক অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রহমত উল্ল্যাহর অভিযোগ, ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার দৃশ্যধারণের সময় এক নারী সহপ্রযোজককে ‘ধর্ষণ’ করেন শাকিব খান, এরপর তিনি দেশে পালিয়ে আসেন। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে শাকিব খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।
শাকিব খানের বিরুদ্ধে সেই ভুক্তভোগী অস্ট্রেলিয়া পুলিশের কাছে একটি লিখিত অভিযোগও করেছিলেন বলে দাবি করেছেন প্রযোজক। সেই অভিযোগে নিজেকে একজন স্বাক্ষী হিসেবে দাবি করেন রহমত উল্ল্যাহ।
শিল্পী সমিতির সভাপতি বরাবর লেখা অভিযোগে রহমত উল্ল্যাহ লিখেছেন, ‘তিনি (শাকিব খান) আমাদের একজন নারী সহপ্রযোজককে কৌশলে ধর্ষণ করেন। নির্যাতিতা নিজেও একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী। এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়া পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। আমি সেই ফৌজদারি অভিযোগের সাক্ষী ছিলাম। এ ঘটনার পর তিনি ও তাঁর পরিবার সামাজিকভাবে যে গ্লানি এবং কুৎসার শিকার হন, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে একটা পর্যায়ে তাঁর নিজের ও তাঁর পরিবারের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে।’
সেই ঘটনার মধ্যে শাকিব খান কৌশলে অস্ট্রেলিয়া থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন বলে দাবি করেছেন ওই প্রযোজক। ২০১৮ সালে আবারও অস্ট্রেলিয়ায় গেলে শাকিব খানকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করেছিল বলে দাবি করেন রহমত উল্ল্যাহ। তাঁর ভাষ্যে, ২০১৮ সালে তিনি আবার অস্ট্রেলিয়ায় এলে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। সামাজিক চাপে এবং আরও নিগ্রহের ভয়ে নির্যাতিতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় শাকিব সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান।
অভিযোগে রহমত উল্ল্যাহ লিখেছেন, ‘দুটি ভিন্ন দেশের আদালতে আইনি এখতিয়ারের সীমাবদ্ধতার কারণে ধর্ষণের বিচার হয়তো বিচারিক আদালতে সম্ভব হবে না। অর্থ, স্বপ্ন ও সম্মান—সব হারিয়ে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। আপনি এর দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেবেন, এই প্রত্যাশা রইল।’
ধর্ষণ ছাড়াও তাঁর অপেশাদার আচরণের কারণে সিনেমার নির্মাণ ব্যয় বেড়ে গিয়েছিল বলে জানান রহমত উল্ল্যাহ। ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমা পরিচালনা করেছেন পরিচালক আশিকুর রহমান। এতে শাকিবের নায়িকা ছিলেন সিবা আলী খান। এ অভিযোগের বিষয়ে শাকিব খানের সঙ্গে কথা বলার জন্য বেশ কয়েকবার ফোন করা হয় শাকিব খানকে। তিনি সাড়া দেননি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও কোনোরকম সাড়া দেননি তিনি।
যোগাযোগ করা হলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগ তো যে কেউ করতে পারেন। আগে আমরা দেখব বিষয়টি কী। যেহেতু শাকিব খান আমাদের সমিতির সদস্য, কাজেই তাঁর বক্তব্য আমরা সবার আগে শুনব। তারপর অভিযোগকারীর সঙ্গে কথা বলব। অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করে স্পষ্ট হয়ে তবেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব, কী করা যায়। তবে এর সবই আমাদের সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন দেশে আসার পর। তিনি বর্তমানে দেশের বাইরে।’
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় পরিচালক সমিতির সভাপতি, প্রযোজক ও অভিনেতা কাজী হায়াতের সঙ্গে। তিনি মনে করেন, শাকিব খানকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং গসিপে আনার জন্য এমনটা করা হয়েছে। অভিযোগকারীরা আলোচনায় আসতে চাইছেন। কাজী হায়াৎ বলেন, ‘এটা মোটেও সমীচীন নয়, মোটেও ভদ্রতা নয়। একজনের অনুপস্থিতিতে এমন কথা বলা, অভিযোগ দেওয়া। প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত জীবন আছে, তারকাদেরও তেমন। তারকাদের পেছনে সব সময় লোক থাকে, মিডিয়ার চোখ থাকে, সেই লোক এবং চোখ যদি তারকার কোনো কিছু গোপনভাবে দেখে ফেলে, তা কি জনসমক্ষে আনা উচিত? আমি মনে করি এটি সমীচীন নয়।’