গত সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়ায় মুক্তি পায় অনন্ত জলিল ও বর্ষা অভিনীত ‘দিন: দ্য ডে’ ছবিটি। ছবির মুক্তি উপলক্ষে জলিল ও বর্ষা সেখানে যান। এরই মধ্যে সিঙ্গাপুরেও ছবিটি মুক্তির ঘোষণা এসেছে। এই সবকিছুই অনুমতি ছাড়াই হয়েছে বলে দাবি করেছেন ‘দিন: দ্য ডে’ ছবির পরিচালক ও অন্যতম প্রযোজক মুর্তজা অতাশ জমজম। তিনি তাঁর ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট দিয়ে নিজের ক্ষোভের কথাও জানান।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর ইরানি প্রযোজক ও পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজম তাঁর ইনস্টাগ্রামে অনন্ত জলিলের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘আপনি বাংলাদেশের পর ছবিটির প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে আমার অনুমতি ছাড়াই মালয়েশিয়ায় মুক্তি দিয়েছেন এবং এখন আপনি এটি সিঙ্গাপুরে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অচিরেই ইরানের আদালতে আপনার প্রতারণার স্বরূপ উন্মোচিত হবে এবং তারপর বাংলাদেশের বিজ্ঞ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে আমি আপনার কাছ থেকে আমার পাওনা আদায় করব।’
পবিত্র ঈদুল আজহায় মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘দিন: দ্য ডে’র অভিনেতা ও বাংলাদেশ অংশের প্রযোজক অনন্ত জলিলের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে আগস্ট মাসে মামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সিনেমার পরিচালক ও ইরানি প্রযোজক মুর্তজা অতাশ জমজম। তখনো এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে অনন্ত জলিলের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ সামনে আনেন মুর্তজা। তাঁর অভিযোগ, অনন্ত জলিল সিনেমার চুক্তি ও শর্ত ভঙ্গ করেছেন, সিনেমার প্রধান প্রযোজক হওয়া সত্ত্বেও অর্ধেক নির্মিত সিনেমা তাঁর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন অনন্ত।
ইরানি প্রযোজক ও পরিচালকের মামলার হুঁশিয়ারি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন ‘দিন: দ্য ডে’র অভিনেতা ও বাংলাদেশ অংশের প্রযোজক অনন্ত জলিল। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে অবস্থান তুলে ধরেন। জলিল তখন বলেছিলেন, ‘আমার সঙ্গে চুক্তি আছে যে সিনেমাটির বাংলাদেশে যেসব কাজ হবে (শুটিং, ডাবিং), সেটার ব্যয়ভার আমি বহন করব। আমি সেটাই করেছি। চুক্তি অনুযায়ী ইরানসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে শুটিংয়ের খরচ বহন করবে ইরানি প্রযোজক। ইরান যে সিনেমাটির মূল প্রযোজক, সেটা পরিচালকই তার স্ট্যাটাসে দেওয়া একটি বাক্যের (আমি ছিলাম সিনেমাটির মূল প্রযোজক) মাধ্যমে স্বীকার করেছেন।’
এ বিষয়ে অনন্ত জলিলের উদ্দেশে মুর্তজা অতাশ জমজম তাঁর ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘মিডিয়ায় আপনার শিশুসুলভ দাবির জবাব দেওয়া প্রয়োজন মনে করছিলাম। আপনি বলেছেন যে কেবল বাংলাদেশের ব্যয়ভার আপনার ছিল। অর্থাৎ ইরানি টিমের বাংলাদেশে দুই সপ্তাহের থাকা খাওয়ার খরচ! যদি এমনই হবে, তবে কী করে মিডিয়াতে ১০ মিলিয়ন ডলারের দাবি করে এসেছেন। বাংলাদেশের শুটিং অংশে পুলিশের জন্য কয়েকটি প্লাস্টিকের বন্দুক, কিছু পুলিশের ইউনিফর্ম এবং একটি পুরোনো পুলিশের জিপের বেশি কিছুই ছিল না। এমনকি বাংলাদেশের অংশে যে গাড়িগুলো বিস্ফোরিত করার কথা ছিল, আপনি সে গল্পটাই স্ক্রিপ্ট থেকে বাদ দিয়েছেন এবং কয়েক ঘণ্টার কিছু শটের জন্য আপনি একটি ট্যুরিস্ট হেলিকপ্টার ভাড়া করেছেন। আমরা ৮ মাসে ৭৭ দিন ইরান ও আফগানিস্তান শুটিংয়ের অংশে যথেষ্ট প্রতিকূল ও কঠিনতম পরিবেশে চিত্রগ্রহণের কাজ করেছি, যেখানে আমার দুই শতাধিক সহকর্মী এই ছবির জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন।’
মুর্তজা অতাশ জমজম আরও লিখেছিলেন, ‘উপস্থিত সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ছবির শুটিংয়ে পাঁচটি গাড়ি বিস্ফোরণ করেছি, শত শত বুলেট ছুড়েছি, এ ছাড়া আমরা শত শত বিস্ফোরণ ঘটিয়েছি। ইরান পুলিশ বাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিট পুরো সিনেমাজুড়ে আমাদের সঙ্গে ছিল। যাত্রীবাহী এয়ারপোর্টে এবং সামরিক এয়ারপোর্টে কয়েকটি বিমান ও হেলিকপ্টার শুটিংয়ের জন্য আমাদের সার্বক্ষণিক এখতিয়ারে ছিল। আমরা সমগ্র ইরানে কয়েক ডজন বিশেষ বিশেষ স্পটে চিত্রগ্রহণের কাজ করেছি। আপনি সম্ভবত এ রকম উন্নত সুযোগ-সুবিধাগুলো দেখে, মিলিয়ন ডলারের মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অতএব, কয়েকটি প্লাস্টিকের বন্দুক দিয়ে, কীভাবে নিজেকে অনুমতি দিয়েছেন আমার অনুমতি ছাড়া সিনেমাটি সম্পূর্ণ করতে, আমার নামটি সিনেমার প্রযোজকের নাম থেকে সরিয়ে দিতে এবং চুক্তিপত্র উপেক্ষা করে নিজের নামে প্রদর্শন করতে? সত্যি কি লজ্জাজনক নয়?’
অনন্ত জলিলের উদ্দেশে কথায়–কথায় মুর্তজা অতাশ জমজম এ–ও বললেন, ‘আমার কোন অনুমতিপত্রের ভিত্তিতে আপনি সিনেমাটি মুক্তি দিয়েছিলেন? এটা একটা লজ্জাজনক ব্যাপার যে অতীতের ভুলগুলো শুধরে না নিয়ে আপনি কীভাবে সিঙ্গাপুরেও সিনেমাটি মুক্তি দিতে চান? আচ্ছা, বাংলাদেশের ব্যয় সম্পর্কে একটি সহজ প্রশ্ন, আপনি যেমন বলেছেন, আমি আপনার সঙ্গে ছিলাম, আপনি ১০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন, আচ্ছা বলুন তো, বাংলাদেশের প্রথিতযশা কবি ওস্তাদ হেলাল হাফিজকে বাংলা গানের লিরিক লেখার জন্য কত মার্কিন ডলার দিয়েছেন? কিংবা আমার প্রিয় বন্ধু বাংলাদেশের স্বনামধন্য গায়ক বেলাল খানকেই–বা কত মার্কিন ডলার দিয়েছেন?’
মুর্তজা অতাশ জমজম বললেন, ‘আপনি (অনন্ত জলিল) ইরানে আপনার প্রথম দুই সফরে আমার অতিথি ছিলেন। আপনি আমার ও আমার মা–বাবার ঘরে সম্মানের সঙ্গে প্রবেশ করেছিলেন এবং সব সময় পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। আপনার তেহরানে দ্বিতীয় সফরের সময়, দুই দেশের জাতীয় পতাকাকে সামনে রেখে আপনার ও আমার মধ্যে সিনেমার কাজের চুক্তিপত্র লিখিত ও স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ইরানের নীতি অনুযায়ী চুক্তিপত্রটি দুই পক্ষের মাতৃভাষায় (বাংলা ও ফারসি) লিপিবদ্ধ হয়েছিল। দয়া করে এই দুটি পতাকাকে সম্মান করুন এবং ওই সভায় উপস্থিত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের সম্মান বজায় রাখুন। চুক্তি স্বাক্ষরে উপস্থিত সাক্ষীরা এখনো জীবিত আছেন এবং প্রয়োজনে সাক্ষ্য দিতে সক্ষম। আমি জানি, আপনার পরামর্শকেরা আপনাকে ভুল তথ্য এবং ভুল পথ দেখাচ্ছেন। তাঁদের পরামর্শ নেওয়া যদি অব্যাহত রাখেন, তাহলে দিন দিন আপনার সামাজিক পদমর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে।’
অনন্ত জলিলকে প্রিয় ভাই হিসেবে সম্বোধন করে মুর্তজা অতাশ জমজম বললেন, ‘মিথ্যা মিথ্যার জন্ম দেয়। যারা আপনাকে প্ররোচিত করেছে প্রচারণার জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার উল্লেখ করতে, তারাই আপনাকে এখন প্ররোচিত করছে চুক্তিপত্রটিকে অস্বীকার করতে, আপনার মাতৃভাষাকে অস্বীকার করতে, সভায় উপস্থিত সাক্ষীদের উপেক্ষা করতে, আপনার দেশের জাতীয় পতাকাকে অস্বীকার করতে, একসঙ্গে যে ডাল-ভাত খেয়েছি, তা অস্বীকার করতে।
সবশেষে অনন্ত জলিলের উদ্দেশে মুর্তজা অতাশ জমজম জানিয়ে রাখলেন, আদালতের আদেশ না হওয়া পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠানেরই ছবিটি প্রদর্শনের অনুমতি নেই এবং এখন থেকে এটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।