বছরখানেক আগে ‘বালুখেকো’ চেয়ারম্যান ও বিতর্কিত চলচ্চিত্র প্রযোজক সেলিম খানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়া প্রযোজিত ‘বুবুজান’ চলচ্চিত্রের শুটিং শুরু করেন চিত্রনায়িকা নিশাত সালওয়া। এ বছরের জানুয়ারি মাসে শুটিং শেষ করে ফেব্রুয়ারিতে ছবিটির ডাবিংও শেষ করে দেন এই নায়িকা। তবে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ছবির সব কাজ শেষ করার ছয় মাস পার হয়ে গেলেও প্রাপ্য সম্মানী না পেয়ে ‘বালুখেকো’ চেয়ারম্যানের প্রতিষ্ঠান ও পরিচালকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নায়িকা। বাধ্য হয়ে আঙুল তাক করেছেন পরিচালক শামীম আহমেদের দিকেও।
নিশাত সালওয়া ‘বুবুজান’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য দুই লাখ টাকা সম্মানীতে চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তির দিন সম্মানীর অর্ধেক টাকা তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এদিন উপস্থিত ছিলেন এই ছবির নায়ক ও প্রযোজক শান্ত খান, শাপলা মিডিয়ার পক্ষে অপূর্ব রায় এবং ছবিটির পরিচালক শামীম আহমেদ। সেদিনই নিশাত সালওয়াকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে সম্মানীর অবশিষ্ট টাকা ডাবিং শেষ হওয়ার দিনই তাঁকে দিয়ে দেওয়া হবে। দুঃখজনক হচ্ছে, ডাবিং শেষ হওয়ার ছয় মাস পার হতে চলল, নায়িকার সম্মানীর অবশিষ্ট অর্থ আজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
‘বুবুজান’ চলচ্চিত্রের সম্মানীর অবশিষ্ট অর্থ না পাওয়ার বিষয়টি আজ শনিবার নিজের ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন নায়িকা। তিনি লিখেছেন, ‘কোনো প্রযোজনা সংস্থার কারও ব্যক্তিগত সমস্যার দায়ভার কি আর্টিস্টের! পরিচালক শামীম আহমেদ রনি পরিচালিত ‘বুবুজান’ ফিল্মের শুটিং ও ডাবিং শেষ হওয়ার দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও শাপলা মিডিয়া–সংশ্লিষ্ট কেউ আর্টিস্টের পেমেন্ট ক্লিয়ার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন না। আমি যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। অথচ তাদের অন্য সব কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে! এ ধরনের অপেশাদার আচরণ কখনোই কাম্য নয়।’
এমন পোস্ট দেওয়ার পরপরই যোগাযোগ করা হয় নিশাত সালওয়ার সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে জানান, ২০২১ সালের মার্চে তিনি ‘বুবুজান’ ছবিটির শুটিং শুরু করেন। আর এ বছরের ২৬ জানুয়ারি ছবিটির শুটিং শেষ হয়। এরপর ফেব্রুয়ারিতে ডাবিংও শেষ করে দেন। সালওয়া বললেন, ‘চুক্তির সময়ই কথা ছিল, ডাবিং শেষ যেদিন, সেদিনই সম্মানীর অবশিষ্ট টাকা দিয়ে দেবেন। কিন্তু ছয় মাস পার হয়ে গেছে, কোনো খোঁজখবর নেই। আমি বাধ্য হয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিলাম। এর মধ্যে জানতে পারলাম, আমি ছাড়া আরও অনেকেই এই প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা পান।’
নিশাত সালওয়া বলেন, ‘আমি শিল্পী ছোট হতে পারি, কিন্তু আমার তো আত্মসম্মান আছে। এই অর্থ আমার প্রাপ্য, ন্যায্য অধিকার। এই সম্মানীর টাকা না চাইতেই দিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দিনের পর দিন এসএমএস করেও পরিচালকের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাইনি। প্রায়সময়ই তিনি হোয়াটসঅ্যাপ আর মেসেঞ্জারে এসএমএস করলে সিনও করতেন না। ফোন করলে ধরতেনও না। হঠাৎ হঠাৎ শুধু একটা কথা বলতেন, সেলিম ভাই একটু ব্যস্ত আছেন। দেশের বাইরে আছেন। কবে কী করবেন, সে ব্যাপারেও কোনো কথা বলতেন না। একটা কথা তো অন্তত বলবেন, এক মাস, দুই মাস বা এক বছর পর টাকা দিয়ে দেবেন। কিন্তু না! অদ্ভুত, ফোন ধরারও প্রয়োজন মনে করতেন না তিনি। পরিচালক এতটাই ব্যস্ত মানুষ নন যে আমার ফোন বা এসএমএসের উত্তর দেওয়ার সময়টুকুও তাঁর নেই!’
সালওয়া বলেন, ‘বুবুজান ছবির প্রযোজক কিন্তু শান্ত খান। একপর্যায়ে পরিচালক রনি ভাইকে না পেয়ে শান্তকে ফোন করতাম, এসএমএস করতাম, সেও ফোন ধরত না, এসএমএসের উত্তর দিত না। একটা পর্যায়ে জানানো হয়, তাদের সব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছে। কোনো ট্রানজেকশন করতে পারছেন না। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, এসব সমস্যা তো আমার শুটিং ও ডাবিং শেষ হওয়ার কয়েক মাস পরের ঘটনা। চাইলে তো তাঁরা এসব সমস্যার সমাধান অনেক আগেই করতে পারতেন। আমার সবচেয়ে বেশি খারাপ লেগেছে, ফোন না ধরা, এসএমএসের উত্তর না দেওয়া। এসব আমার আত্মসম্মানে খুব লেগেছে।’
ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর ছবিসংশ্লিষ্ট কেউ কি যোগাযোগ করেছেন? জানতে চাইলে নিশাত সালওয়া বললেন, ‘পোস্ট দেওয়ার এক মিনিটও পার হয়নি, তার আগেই ফোন করেছেন পরিচালক। তার মানে এত দিন আমার সবকিছুই তিনি দেখেছেন, শুধু উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি! এখন বারবার অনুরোধ করছেন, ফেসবুক থেকে পোস্টটা সরিয়ে নিতে। কিন্তু আমি বলেছি, সরানো সম্ভব নয়। তবে সম্মানীর টাকাটা পাওয়ামাত্র ফেসবুকে আরেকটা পোস্ট দিয়ে জানিয়ে দেব, পেয়েছি।’
এদিকে প্রযোজনা সংস্থার কাছে নায়িকার সম্মানীর বিষয়টি স্বীকার করেছেন পরিচালক শামীম আহমেদ। তিনি আজ শনিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রযোজনা সংস্থা এখন একটু সমস্যায় আছে, তাই হিরোইনের সম্মানীর টাকা দিতে সময় লাগছে। আমাদের চিন্তা তো এমন নয় যে টাকা মেরে দেব। চলচ্চিত্রে অনেক ক্ষেত্রে ছবি মুক্তির আগেও কিন্তু টাকা দেওয়ার রেওয়াজ আছে। আমরাও তা–ই ভেবেছি। তবে আশা করছি, নভেম্বরের মধ্যে সালওয়া বাকি টাকা পেয়ে যাবে।’
আপনাকে নাকি বারবার ফোন দেওয়া হয়, কিন্তু ধরেন না। এসএমএসেরও উত্তর দেন না! এ প্রসঙ্গে শামীম আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টা আসলে তেমন নয়। একবারই ফোন করেছিল, একবারই এসএমএস দিয়েছিল। প্রযোজনা সংস্থা সমস্যায় থাকায় টাকা দেওয়া হয়নি, আমরা এখন দিয়ে দেব।’