আমাদের বন্ধুত্ব নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলতে চায়...

প্রথম সিনেমাতেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান সুনেরাহ বিনতে কামাল। সম্প্রতি একটি সিনেমায় অভিনয় করার কথা থাকলেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে সেটা হয়নি। নিজের চাকরি, বই, সিনেমা আর চিত্রনাট্য পড়ে সময় কাটছে অভিনেত্রীর। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুরুল আলম
সুনেরা বিনতে কামাল। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
সুনেরা বিনতে কামাল। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

কেন নায়িকা হতে চেয়েছিলেন? আলাপের শুরুতেই জানতে চাওয়া সুনেরাহর কাছে। তাঁর সাদাসিধে উত্তর, ‘জানি না, ঠিক মনে পড়ছে না। তবে শৈশবে প্রচুর বাংলা সিনেমা দেখতাম। সেটা থেকেই হয়তো সিনেমার প্রতি ভালোবাসাটা তৈরি হয়েছে। পরে নাচ শিখেছি। অভিনয় বুঝতে শিখেছি।’ ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই জানতেন যদি লক্ষ্য ঠিক থাকে, তাহলে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানো যাবে। সেই আশা নিয়ে এখনো পথচলার তাঁর অনেক বাকি।

সময়ের ভাবনা
প্রায় এক মাস শুটিং থেকে দূরে। এর মধ্যে একটি সিনেমায় শুটিং করার কথা থাকলেও সেগুলো এ মুহূর্তে কী হবে বলতে পারছেন না। প্রতিদিন চিত্রনাট্য পড়েই যাচ্ছেন। ‘শুটিং করার জন্য মনটা ছটফট করছে। কিন্তু চলমান পরিস্থিতির কারণে কাজগুলো যে কবে শুরু হবে বলতে পারছি না। শিল্পী হিসেবে যখন চিত্রনাট্য পড়ে, চরিত্রটি যখন মাথায় চলে আসে তখনই মনে হয় শুটিং শুরু হোক। দুই দিন আগেও একটি চিত্রনাট্য পেয়েছি কিন্তু কবে শুরু হবে বলতেন পারছি না। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, নতুন সরকার, সবকিছুর জন্য সিনেমা অঙ্গনটা স্থবির হয়ে আছে। হয়তো মন ভালো হতে আরও সময় লাগবে।’ বলেন সুনেরাহ।

সুনেরা বিনতে কামাল। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

যেমন কাটছে দিনগুলো
দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিই তাঁকে বেশি ভাবাচ্ছে। অফিস, কাজ ছাড়া এখন খুব বেশি বাইরে বের হন না। এর মধ্যে বাসায় চিত্রনাট্য পড়া হয়। তবে বই, সিনেমা ও সিরিজ তাঁর নিত্যসঙ্গী। তিনি জানান, শেষ হাউস অব দ্য ড্রাগন দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেছে। এখন তৃতীয় মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। গেমস অব থ্রোনস–এর এই প্রিকুয়েলটি শেষ হয়েও শেষ হলো না। সুনেরাহ বলেন, ‘আমি একবার সাধারণ দর্শক হিসেবে সিনেমা, সিরিজগুলো দেখি। পরে একজন অভিনেত্রী হিসেবে শিল্পীর অভিব্যক্তি প্রকাশ, চরিত্রায়ণ, কস্টিউম, মেকিং এগুলো দেখি। ওদের সবকিছু কত বাস্তব মনে হয়। তখন খুব আফসোস হয়। আর আমাদের কস্টিউম, শুটিং কন্টিনিউটি নিয়ে অভিনয় করতে হয়।’

সুনেরা বিনতে কামাল। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

মন খারাপের কারণ
পেশাগত জায়গায় অনেক সময়ই পারিশ্রমিক নিয়ে সমঝোতা করতে হয়। এই অভিনেত্রীর মতে, যোগ্যতা থাকার পরও কেউ কেউ পারিশ্রমিক ঠিকমতো দিতে চান না। এটা মন খারাপের একটা কারণ। এ ছাড়া অনেক সময় কাছের কেউ ভুল বুঝলে বা নেতিবাচক কথা বললে খারাপ লাগে। চেষ্টা করেন বিতর্ক এড়াতে, এগুলো নিয়ে কথা না বলতে। সুনেরাহ বলেন, ‘আমার ন ডরাই সিনেমা মুক্তির পর শুরু হয় করোনা। তখন বেশ কিছু সিনেমার প্রস্তাব পাই। সেগুলো পরে আর করা হয় না। এর মধ্যে অন্তর্জাল সিনেমার কাজ দুই বছর ধরে চলে। অনেক কাজ করতে পারিনি। এখন আবার দেশের পরিস্থিতির জন্য বিশেষ কাজগুলো বন্ধ। এগুলো মন খারাপ করার মতো। সামনে হয়তো ভালো কিছু হবে।’

সুনেরা বিনতে কামাল। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

জীবনদর্শন
‘জীবন নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ অভিমান নেই। জীবনটা খুবই স্বল্প সময়ের, এটা মাথায় রাখি। এ সময়ে সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করি। সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা করি না। আবার অনেক ভেবেচিন্তে কোনো কিছু করা উচিত, এর পক্ষে আমি নই। আমি সচেতন থাকি, তবে অতিরিক্ত চিন্তা করি না। জীবনে অনেক ঘটনাই ঘটে, যার ওপর আমার হাত নেই। সেগুলো না ভেবে, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই।’ বলেন সুনেরাহ।

নুহাশ কি শুধুই বন্ধু
গুঞ্জনে এখন আর কান দেন না সুনেরাহ। এগুলো নাকি গা সওয়া হয়ে গেছে। প্রায়ই নাকি শুনতে হয় নুহাশ হ‌ুমায়ূন কি শুধুই বন্ধু নাকি বেশি কিছু? হেসে সুনেরাহ বলেন, ‘এটা অতীত। এখন শুরু হয়েছে, আমি কেন নুহাশের সিনেমায় নেই। আমি একদিন নিজেই নুহাশকে ফোন দিয়ে ঘটনা বললাম। মজা করে নুহাশ নিজেও বলছে, “তুমি আমার সিনেমায় নাই।” সে আসলে যাকে প্রয়োজন তাকেই নেয়। এটা তার কাস্টিং দেখলেই বোঝা যায়। আমাদের বন্ধুত্ব নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলতে চায়। কিন্তু গুঞ্জন আমাদের সম্পর্ককে নষ্ট হতে দেয়নি। আমাদের দেখা না হলেও যখনই দেখা হোক, সম্পর্ক আগের মতোই থাকে। তবে কিছু মানুষকে জড়িয়ে গুঞ্জন শুনলে তাদের এড়িয়ে চলি।’

সুনেরা বিনতে কামাল। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে