তৃতীয় সপ্তাহের শেষ দিকে গতকাল মঙ্গলবারের তালিকায় সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হলিউড ও বলিউডের ছবির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ২ নম্বর স্থানে আছে বাংলাদেশি সুপারস্টার শাকিব খানের ‘রাজকুমার’ ছবিটি। এর পরের স্থানে আছে যথাক্রমে বলিউডের ‘ক্রু’; বাংলাদেশের ‘জ্বীন–২’, ‘দেয়ালের দেশ’, ‘ওমর’, ‘কাজলরেখা’ এবং হলিউডের ‘কুংফু পান্ডা ৪’, ‘গোস্টবাস্টার্স: ফ্রোজেন অ্যাম্পায়ার’ ও ‘ডিউন: পার্ট টু’। আজ ১ মে মুক্তি পেয়েছে ‘দ্য ফল গাই’। এদিকে বাংলাদেশি ছবির চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আগামী শুক্রবার থেকে স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ কোনো ছবির প্রদর্শনী কমিয়ে দিচ্ছে আবার কোনোটির প্রদর্শনী ইতিমধ্যে একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে—এমনটাই অভিযোগ করেছেন ঈদের ছবির তিন নির্মাতা।
দেশের মাল্টিপ্লেক্স চেইন স্টার সিনেপ্লেক্সে দেশ-বিদেশের সব চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। কখনো বিদেশি ছবির পাল্লা ভারী থাকে, কখনো আবার দেশি। এবার ঈদে মুক্তি পাওয়া ১১ ছবির মধ্যে স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ ৮টি ছবি প্রদর্শন করেছে। দুই সপ্তাহ শেষে গত সপ্তাহে ব্যবসায়িক সাফল্য ও দর্শক আগ্রহে কোন ছবি এগিয়ে ছিল, তার একটি তালিকা করে সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। তাতে দেখা গেছে, হলিউডের ছবিকে ছাপিয়ে ১ নম্বর জায়গা ছিল বাংলাদেশি সিনেমা ‘রাজকুমার’–এর। বাংলাদেশি ছবির প্রতি দেশের দর্শকের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রদর্শনী কমিয়ে দেওয়া, বাংলা ছবি নামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে তিন নির্মাতা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘রাজকুমার’ ছবির পরিচালক হিমেল আশরাফ। তিনি আজ দুপুরে সিনেপ্লেক্সের প্রদর্শনীর টিকিটের স্ক্রিনশট ফেসবুকে শেয়ার করে লিখেছেন, ‘ঠিক গত সপ্তাহে টিকিট বিক্রিতে ১ নম্বরে ছিল যেই সিনেমা, সেই সিনেমার কোনো শো পরের সপ্তাহে নেই, একটা শো–ও না! ঈদের সব বাংলা সিনেমা উধাও হয়ে গেল! প্রতিদিন ৫০টার ওপরে শো স্টার সিনেপ্লেক্সের। এর মধ্যে একটা শো পাওয়ার যোগ্যতা নেই ঈদের কোনো সিনেমার? অথচ আজকে সন্ধ্যার “রাজকুমার”, “কাজলরেখা”র শোর টিকিট অনলাইনে চেক করে দেখেন—৬০ শতাংশ অলরেডি বিক্রি হয়ে গেছে। এখনো চার ঘণ্টা বাকি! আমি আজকে সন্ধ্যার শো স্ক্রিনশট দিলাম, যেখানে “রাজকুমার”–এর ৮৫ শতাংশ টিকিট সোল্ড আউট। আগামী শুক্রবার থেকে বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্সে ছয়টা বিদেশি সিনেমা চলবে, যেখানে বাংলা সিনেমা চলবে একটা! ১৬টা শো বিদেশি সিনেমার, ৪টা শো বাংলা সিনেমার! বাংলাদেশের সিনেমা হল, বাংলাদেশের মানুষই দর্শক, বাংলা সিনেমার দর্শক থাকার পরও বাংলা সিনেমা নেই! এই দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াতে অনেক পথ বাকি, অনেক…।’
‘কাজলরেখা’ ছবিটির প্রতিও দর্শকের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছিল, ছবিটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে কথাবার্তা হচ্ছিল। এমন সময় সিনেপ্লেক্সের এমন সিদ্ধান্তে বিস্মিত ছবির পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম। অনলাইনে টিকিট বিক্রির তথ্যের স্ক্রিনশট দিয়ে তিনি সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, ‘বসুন্ধরায় আজকে সাড়ে চারটার শো। তারপরও আগামী শুক্রবার থেকে বিদেশি ছবির জন্য “কাজলরেখা”র কোনো শো নেই। কেন? ঈদের অন্য সিনেমাগুলোও নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্তত ৪০ শতাংশ শো বরাদ্দ দেশি সিনেমার জন্য রাখার অনুরোধ করছি।’
‘দেয়ালের দেশ’ ছবি দিয়ে বড় পর্দার নির্মাতা হিসেবে অভিষেক ঘটেছে মিশুক মনির। তিনিও অনলাইনে টিকিট বিক্রির তথ্যের স্ক্রিনশট দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘বাংলা সিনেমার বিপ্লব ঘটানো নিয়ে অনেক বড় বড় বুলি আওড়াতে দেখি অনেক হল ব্যবসায়ীকে। সেই বিপ্লব ঘটাতে বিদেশি সিনেমার আমদানি শুরু হয়। ব্যবসাও ভালো চলে কিন্তু হলের আর উন্নতি হয় না। ভাঙা সিট বদলে ভালো সিট, ফ্যান, পর্দা ও সাউন্ড সিস্টেমের কিছুরই পরিবর্তন হয় না। আর সিনেপ্লেক্স থেকে একটা টিকিটের কয় ভাগের কত টাকা প্রযোজক পান, সেই হিসাব করে কেন কখনো কেউ কথা বলেনি, আমি সেটা ভেবেই অবাক হই। যে হারে ভাগ হয়, তাতে খুব ভালো চললেও ১০০ সিনেমার মধ্যে ১–২টি ছাড়া বাকি সিনেমার টাকা হল থেকে ওঠা সম্ভব নয়।’ মিশুক মনি বলেন, ‘ঈদের সিনেমা হিসেবে সেল রিপোর্ট এতটাও খারাপ ছিল না যে সব শো বন্ধ করে দিতে হবে। মিনিমাম শো রাখার যৌক্তিকতা ছিল। এই মুল্লুকে বাংলা সিনেমার কখনো জয় হয়নি, আর আপনারা কথা বলতে না শিখলে কখনো জয় হবেও না। বাংলা সিনেমার কফিনের লাস্ট পেরেক মারতে বাকি।’
গিয়াস উদ্দিন সেলিম, হিমেল আশরাফ ও মিশুক মনির ক্ষোভ প্রকাশ ও আবেদনের প্রতি বিনোদন অঙ্গনের অনেকের সমর্থন দেখা গেছে।