আজ ৩ এপ্রিল, চিত্রনায়ক আলমগীরের ৭৫তম জন্মদিন
আজ ৩ এপ্রিল, চিত্রনায়ক আলমগীরের ৭৫তম জন্মদিন

সেদিন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছিলেন নায়ক আলমগীর

১৯৯২ সালে মুক্তি পায় মতিন রহমান পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘অন্ধ বিশ্বাস’। শাবানার এস এস প্রোডাকশন্সের তত্ত্বাবধানে নির্মিত চলচ্চিত্রটিতে একসঙ্গে অভিনয় করেন নায়করাজ রাজ্জাক, আলমগীর ও শাবানা। খ্যাতিমান তিন অভিনয়শিল্পীর অভিনয় দর্শকপ্রিয়তার সঙ্গে ব্যবসায়িক সফলতা এনে দিয়েছিল সিনেমাটিকে। সিনেমাটিতে আলম চরিত্রে আলমগীরের অভিনয় এখনো দর্শকের মনে দাগ কাটে। সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতেছিলেন নায়ক আলমগীর। তবে এ সিনেমা হতে পারত আলমগীরের জীবনের শেষ সিনেমা। স্টান্টম্যান ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ একটি দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন এ অভিনেতা। চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে যেতে হয়েছিল তাঁকে।
আজ ৩ এপ্রিল, চিত্রনায়ক আলমগীরের ৭৫তম জন্মদিন। এ অভিনেতার জন্মদিনে কথা হয় চলচ্চিত্র পরিচালক ও শিক্ষক মতিন রহমানের সঙ্গে। ৩৪ বছর আগে ‘অন্ধ বিশ্বাস’ সিনেমার শুটিংয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার স্মৃতি সামনে আনেন তিনি।

চিত্রনায়ক আলমগীর। ছবি: প্রথম আলো
চিত্রনায়ক আলমগীর। ছবি: প্রথম আলো

সময়টা ১৯৯১ সালের মে–জুন। অ্যাকশন দৃশ্যের শুটিংয়ে পুরো ইউনিট নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ডে। পুরো জায়গায় ছিল জাহাজের বিভিন্ন অংশ ও যন্ত্রাংশ। ভারী এসব জিনিস তোলার জন্য সেখানে বেশ কয়েকটি বড় ক্রেন ছিল। সেখানের সবচেয়ে বড় একটি ক্রেন দেখিয়ে পরিচালক মতিন রহমানকে আলমগীর জানান, এটাতে ঝুলে ঝুলে তিনি নিজে একটি দৃশ্য করতে চান। নায়কের এ কথা শুনে পরিচালক সঙ্গে সঙ্গে নাকচ করে দেন। স্টান্টম্যান ও পরিকল্পনা ছাড়া এ ধরনের ঝুঁকি নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আলমগীর বেশি চাপাচাপি করলে মতিন রহমান অ্যাকশন ডিরেক্টরের সঙ্গে পরামর্শ করেন। কিন্তু সেখান থেকেও অনুমতি আসেনি। অভিনেতাকে বোঝানো হয় শূন্যে ক্রেনের গতির সঙ্গে ঝুলে থাকা সহজ কোনো বিষয় নয়। তবে আলমগীর নাছোড়বান্দা।

এ দৃশ্যে তিনি অভিনয় করবেনই। নায়কের কথা মেনে দৃশ্যধারণের জন্য সবাই তৈরি হন। পরিচালক চলে যান ক্যামেরার কাছে, আর আলমগীর চলে যান ক্রেনের  হুকে। এরপরই আসে অনাকাঙ্ক্ষিত সে সময়, যার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কেউই!
সেদিনের বাকি গল্প শোনা যাক পরিচালক মতিন রহমানের বয়ানে, ‘আলমগীর ভাই এত নিবেদিত একজন শিল্পী। তাঁকে আমরা কেউ আর আটকাতে পারলাম না। সবাইকে নির্দেশনা দিয়ে আমি চলে যাই ক্যামেরার পেছনে। দৃশ্যটির শুটিং শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর দেখি ক্রেন চলছে, কিন্তু সেখানে আলমগীর ভাই নেই। সবাই মিলে হন্যে হয়ে দৌড়াচ্ছি, এমন সময় দেখি তিনি নদীতে পড়ে গেছেন। ফাইটের টিমের কয়েকজন সেখানে গিয়ে দেখেন তিনি পানিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন।

এ দুর্ঘটনায় আলমগীর ভাই পায়ে মারাত্মক আঘাত পান। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হয়েছিল তাঁকে। ছয় মাস শুটিং বন্ধ ছিল আমাদের। ডাক্তারের পরামর্শে বিশ্রাম শেষ হলে বিএফডিসিতে সেট বানিয়ে আমরা সিনেমার বাকি কাজ শেষ করি।’
দুর্ঘটনার সময় সেখানে সিনেমার বাকি অভিনয়শিল্পীর মধ্যে রাজ্জাক, শাবানা ও আনোয়ারাও উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় পুরো ইউনিট স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল সে সময়। সিনেমাটি আরও অভিনয় করেছিলেন নূতন, আনোয়ারা ও রাজীব। সিনেমাটির চিত্রগ্রাহকের দায়িত্বে ছিলেন মাহফুজুর রহমান খান। এ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান মতিন রহমান। শিল্প নির্দেশনায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলেন বিজয় সেন।