প্রসেনজিতের বাড়িতে চঞ্চলদের জম্পেশ আড্ডা

কলকাতায় প্রসেনজিতের বাড়িতে চঞ্চলদের জম্পেশ আড্ডা
ছবি: সংগৃহীত

‘বাবু, তোমাদের সবাইকে আসতে হবে। অবশ্যই তোমরা বাংলাদেশের সবাই আসবে। তোমাদের অপেক্ষায় থাকব।’ চঞ্চল চৌধুরীকে এভাবেই নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা প্রসেনজিৎ। সেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গতকাল রাতে প্রসেনজিতের বাড়িতে গিয়েছিলেন ইন্তেখাব দিনার, বিজরী বরকতউল্লাহ, শাহনাজ খুশি, বৃন্দাবন দাস, পরিচালক সৈয়দ শাওকিসহ বাংলাদেশের ১০ জন অভিনেতা ও কলাকুশলী। কলকাতায় তাঁদের গত রাতের অভিজ্ঞতা ছিল একেবারেই অন্য রকম।

‘মনের মানুষ’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় কিছুটা ছোট মনে হতো চঞ্চল চৌধুরীকে। তাই তাঁকে বাবু বলে আদর করে ডাকতেন প্রসেনজিৎ। সেই সময় শুটিংয়ে চঞ্চল বাবুকে খুঁজে নিতেন প্রসেনজিৎ। তখন থেকে তাঁদের নিয়মিত যোগাযোগ হতো, আড্ডা হতো, কথা হতো। বেশ কয়েক বছর পর সেই আড্ডাটাই নতুন করে ফিরে এল গতকাল রাতে। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘কারাগার’ ওয়েব সিরিজের এই অভিনেতা বারবার হয়ে উঠছিলেন আসরের মধ্যমণি।

কেমন আড্ডা জমেছিল জানতে চাইলে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘গেলাম, খেলাম, দাদা নিজে দায়িত্ব নিয়ে খাওয়ালেন এই তো।’ আপনাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, আড্ডা একটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কথা না? শুনেই হাসতে হাসতে চঞ্চল বললেন, ‘হা হা। আসলে দাদার সঙ্গে পরিচয় সেই ‘মনের মানুষ’ সিনেমার ওই সময় থেকে। সেই সম্পর্কটা এখনো অনেক গভীর। দাদা যখন আমাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানালেন, তখনই মনে হচ্ছিল এবার একটা আড্ডা জমবে।’

খাবার টেবিলে প্রসেনজিৎসহ অন্যরা

এর আগে শুটিং ইউনিটে দেখেছিলেন প্রসেনজিৎকে। সেই দেখা ছিল সহকর্মী হিসেবে। এবার যেন প্রসেনজিৎ আলাদা এক মানুষ। চঞ্চল বলেন, ‘পর্দায় দেখা আর শুটিংয়ে দেখা মানুষটা এতটা বিনয়ী, এতটা অতিথিপরায়ণ হবে ভাবাই যায় না। তিনি নিজে বসে থেকে খাবার পরিবেশন করালেন। কার কী লাগবে খেয়ালও রাখছিলেন। আর বাংলাদেশের কাজ তিনি নিয়মিত দেখেন। চরকি তাঁর সাবস্ক্রাইব করা। “হাওয়া” সিনেমা নিয়ে কথা বললেন। দুই বাংলাতেই কাজ নিয়ে কীভাবে দর্শকদের সামনে আসা যায়, সেগুলো নিয়ে কথা বললেন। পরে পুরো বাড়ি ঘুরে দেখালেন। কতটা ঐতিহ্যের মধ্যে তিনি বসবাস করেন ভাবা যায় না। আমাদের বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। পরে তিনি দুটো গাড়ি দিয়ে আমাদের পৌঁছে দিলেন।’

এই বাড়িতে নায়ক সিনেমার শুটিং করেছিলেন উত্তম কুমার

‘প্রসেনজিৎ দাদাকে নিয়ে যা–ই বলি না কেন, সবার কাছে মনে হবে আমি বাড়াবাড়ি করছি। এত বড় একজন তারকাকে মাটির মানুষ হিসেবে পাওয়াটা সত্যিই শিল্পী হিসেবে গর্বের। আমি শুধু একটুকুই বলব, আমি তার ব্যবহারে বিস্মিত।’ কথাগুলো বলছিলেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। তিনিও এই ১০ জনের দলে ছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রথমে পথ খুঁজে পেতে কিছুটা ভুল করেছিলাম। পরে তার বাসার সামনে এসে দেখি প্রসেনজিৎ দাদা নিজেই অপেক্ষা করছে। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল। দাদা নিজেই আমাদের ওপরে নিয়ে গেল। আমাদের সবার সঙ্গে নিজ থেকে কথা বলল। আমাদের ছেলেদের তার পছন্দের একটি বই উপহার দিল। যুগ যুগ ধরে চেষ্টা করলেও একজন প্রসেনজিৎ হবে না। সেই কিংবদন্তি অভিনেতার আতিথেয়তায় পুরো সময় মুগ্ধ হয়েছিলাম।’

প্রসেনজিৎ এর বাসার নিচেও জমে আড্ডা

শুটিং থেকে ফিরে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন প্রসেনজিৎ। ঠান্ডা লেগে তাঁর নাক দিয়ে পানি পড়ছিল। তাঁর এমন অবস্থা দেখে সবাই চাইছিলেন প্রসেনজিৎ বাড়ি থেকে দ্রুত চলে আসবেন। কারণ, এই অভিনেতার বিশ্রাম দরকার। কিন্তু সেই কথাটা বলার সুযোগ দিচ্ছিলেন না প্রসেনজিৎ। এমনই আন্তরিকতা ছিল। এই সময় তিনি ঐতিহ্যবাহী ‘নায়ক’ সিনেমার শুটিং হওয়া বাড়িটির অদ্য প্রান্ত দেখান। তখন চঞ্চল, ইন্তেখাব দিনার, বৃন্দাবন দাসরা জানতে পারেন এই বাড়িতে ‘নায়ক’ সিনেমার শুটিং হয়েছিল। বাড়িটি কিনে প্রসেনজিৎ আর সেটি ভাঙেননি।

নাট্যকার বৃন্দাবন দাস বলেন, ‘এই বাড়িটিতে অনেক ঐতিহ্য রয়েছে। উত্তমকুমার এখানে শুটিং করেছেন, এটা অনেক বড় ব্যাপার। এ কারণে বাড়িটি ভাঙেননি। আরও আমরা অবাক হয়ে গেলাম এখানে এক ঘর রয়েছে, সেখানে ‘মনের মানুষ’ সিনেমার শুটিংয়ের আগে তিন মাস ৯ জন বাউলের সঙ্গে থেকেছেন প্রসেনজিৎ। এই সময় তিনি দেখেছেন বাউলেরা কীভাবে কথা বলেন, তাঁদের আচার–আচরণ কেমন, একটা চরিত্রের জন্য এতটা ডেডিকেটেড অভিনয়শিল্পী হয়তো খুবই কম আছে।’

প্রসেনজিৎ এর বাড়ির ভেতরের একটি অংশ

দীর্ঘ সময় ধরে চলা আড্ডা আর গালগল্পে উঠে আসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো। ১৯৭১–এর সেই সময় শরণার্থীশিবিরে ছিলেন বৃন্দাবন দাস। সেই প্রসঙ্গ টেনে গল্পে গল্পে প্রসেনজিৎ জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে একসময় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক ভালো ভালো সিনেমা হলেও এখন সেই সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। একাত্তরের প্রেক্ষাপট নিয়ে কাজ আরও বেশি হওয়া দরকার। এমনকি দুই বাংলার সহযোগিতায় আরও কাজ হওয়া দরকার। এর পেছনে যে বাধা রয়েছে, সেগুলো নিয়ে বসা দরকার। চঞ্চল, শাহনাজ খুশিরা এ সময় আরও জানান, প্রসেনজিতের কথায় উঠে আসে, কলকাতায় যেমন প্রচার বাংলা কনটেন্টের চাহিদা আছে, তেমনি বাংলাদেশেও কলকাতার কনটেন্টের অন্য রকম গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হতে পারে। একসঙ্গে কাজ করলে উভয়ই লাভবান হবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীরা হইচইয়ের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কলকাতায় গেছেন।