ইমন সেবারই প্রথম ‘বীরত্ব’ সিনেমার শুটিংয়ে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে যান। প্রথমে একটু অস্বস্তি লাগছিল। তবে একটু পরই সেটা কেটে যায়। বাসিন্দাদের কেউ দূর থেকে বলছিল, ওই দেখ নায়ক! কেউ বলছিল, আপনার ছবি তো দেখেছি। অনেকে ভিড় করছিল ছবি তোলার জন্য। সেখানে চার-পাঁচ দিন থাকার পর যৌনকর্মীদের অনেকেই পরিচিত হয়ে যান। এরপর শুরু হলো জমিয়ে আড্ডা, চেনাজানা বাড়লে যা হয় আর কি। এ আলাপ, সে আলাপে যৌনকর্মীরা নায়ককে শোনালেন তাঁদের জীবনের গল্পও। এই পেশায় থাকার কারণে তাঁদের পরিবার থেকেও যেন নেই। দৌলতদিয়া পতিতাপল্লির মেয়েদের দুঃখগাথা ছুঁয়ে যায় ইমনকেও; যা ‘বীরত্ব’র প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা আরও বাড়িয়ে দেয়। কারণ, ছবির গল্পও যৌনকর্মীদের বেঁচে থাকার লড়াই নিয়ে। সেই ছবি ‘বীরত্ব’ আজ মুক্তি পাচ্ছে দেশের ৩৪ প্রেক্ষাগৃহে।
সিনেমাটি নিয়ে ইমন বলেন, ‘ছবির একটা অংশ নারী পাচার নিয়ে, যেখানে পাচারের পর মেয়েদের পতিতাপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়। শুটিং করতে গিয়ে সত্যিকারের যৌনকর্মীদের কাছ থেকে তাঁদের জীবনের গল্প শুনে, সিনেমাটি আমাকে আরও গভীরভাবে টেনেছে। মনে হয়েছে, এ সিনেমার মাধ্যমে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তাঁদের জন্য কিছু একটা করতে পারছি।’ সিনেমায় ইমনকে দেখা যাবে চিকিৎসকের ভূমিকায়।
হালে বাংলা ছবি নিয়ে দর্শকের আগ্রহ বেড়েছে। গত ঈদের মুক্তি পাওয়া দুই সিনেমার সাফল্য তার প্রমাণ। তবে নিজের ছবি মুক্তির আগে কিছুটা চিন্তায় ইমন, ‘প্রতিটি দিন পরীক্ষার মতো মনে হচ্ছে। ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’ এখনো দর্শক দেখছেন। তার মধ্যে ‘বীরত্ব’ দর্শক কীভাবে নেন, সেটাই চিন্তা। একধরনের চাপ অনুভব করছি। আবার ভালোও লাগছে। এখন যে ধরনের সামাজিক, পরিবার ঘরানার গল্প দর্শক দেখছেন, সেই ধারার গল্প নিয়েই আমাদের সিনেমাটি। আশা করি, দর্শক পছন্দ করবেন।’
‘বীরত্ব’ ছবিতে ইমনের সঙ্গী নিশাত নাওয়ার সালওয়া। এটিই তাঁর প্রথম সিনেমা। বড় পর্দায় অভিষেকের আগে অভিনেত্রী জানালেন নিজের স্বপ্ন পূরণের গল্প। বললেন, অভিনয়ের ইচ্ছা তাঁর কোনো কালেই ছিল না, সিনেমার নায়িকা হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। তবে বড় হওয়ার পর যখন অভিনয়ে নাম লেখালেন, তখন শুনতে হয়েছে কটু কথাও—ও আবার নায়িকা হবে, ওর ছবি কে দেখবে? তবে সেসব এখন অতীত। গতকাল যখন প্রথম ছবি মুক্তি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলো তখন তিনি জানালেন, এত দিন ধরে সিনেমাটি নিয়ে অদ্ভুত এক উন্মাদনার মধ্যে ছিলেন। কিন্তু মুক্তির ঠিক আগে আগে একটু ভয় করছে।
সালওয়া বলেন, ‘এই সিনেমা দর্শকদের গল্পের সঙ্গে একাত্ম করবে। ছবিটিকে সবাই আমরা খুব আপন ভেবেছি। রাতদিন এক করে টানা ২৪ ঘণ্টাও পরিশ্রম করেছি। শতভাগ দিয়ে অভিনয় করেছি। এ ছাড়া ছবিটিতে নতুনত্ব রয়েছে। এ সময়ে দর্শক যেমন গল্পে চান, ঠিক তেমন গল্প নিয়েই দর্শকদের সামনে আসছি। মুক্তির আগে ভয় লাগলেও ছবির গল্পের জোরে নিজের মনেও জোর পাচ্ছি।’
সালওয়া অভিনয়ে এসেছেন সুন্দরী প্রতিযোগিতা থেকে। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-এ অংশ নিয়ে প্রথম রানারআপ হয়েছিলেন। ইচ্ছা ছিল, মুক্তি পাওয়ার পর প্রথম সিনেমা মাকে নিয়েই দেখবেন। কিন্তু হঠাৎই মা কিছুটা অসুস্থ। সেই ইচ্ছা কতটা পূরণ হবে, সেটা এখনই বলতে পারছেন না। নিজের ছবি নিয়ে সালওয়া আরও বললেন, ‘সবার তো সবাইকে পছন্দ হবে না। তারপরও বলব, সিনেমাটি দেখুন।’ প্রথম ‘বীরত্ব’ মুক্তি পেলেও এটি আসলে তাঁর অভিনীত তৃতীয় ছবি। আগের দুটি এখনো মুক্তি পায়নি।
সালওয়ার মতো ‘বীরত্ব’র কান্ডারি সাইদুল ইসলামেরও প্রথম ছবি এটি। ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরুর পর মাথায় চাপে সিনেমার পোকা। কয়েকটি টিভি নাটক বানানোর পর ঠিক করেন বড় পর্দায় গল্প বলবেন। প্রথম ছবির বিষয়বস্তু—রাজনীতি, মাফিয়া, নারী পাচার, চাঁদাবাজির রোমহর্ষক গল্প। ২০২০ সালের অক্টোবরে শুরু করেন শুটিং। শুরুর প্রায় বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। নাম যেহেতু ‘বীরত্ব’, পরিচালকের কাছে জানতে চাওয়া হয় ছবিটি কার বীরত্বের গল্প? পরিচালক বললেন, ‘এটি কারও একার বীরত্বের গল্প নয়। এটি একই সঙ্গে ড্রামা, ক্রাইম, থ্রিলার ঘরানার। শুধু এটুকুই বলব, এমন গল্প দেশের দর্শক প্রথমবার দেখেছে।’
ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ সময়ে ওটিটিতে কাজ করে প্রশংসিত অভিনেতা ইন্তেখাব দিনার। ‘বীরত্ব’ ছবিতে তাঁকে দেখা যাবে খলনায়কের ভূমিকায়। ছবিটি নিয়ে এই অভিনেতা বললেন, ‘গতানুগতিকতার বাইরে নতুন কিছু নিয়ে আসছি। আমি আশাবাদী দর্শক চরিত্রটিতে আমাকে গ্রহণ করবেন।’
ইমন, সালওয়া, দিনার ছাড়াও ছবিটিতে অভিনয় করেছেন নিপুণ আক্তার, আহসান হাবীব, কচি খন্দকার প্রমুখ। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ছাড়াও শুটিং হয়েছে ফরিদপুর, ঢাকা ও সিলেটে। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে পিং পং এন্টারটেইনমেন্ট।