শাকিব খান অভিনীত, রায়হান রাফী পরিচালিত সিনেমা ‘তুফান’ মুক্তির আগেই অন্তর্জালে ঝড় তুলেছিল। ছবিটির টিজার, গান বা ট্রেলার মুক্তির পর পশ্চিমবঙ্গের সমালোচকদের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। গত ১৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশে সিনেমাটি মুক্তি পায়। গত শুক্রবার ছবিটি মুক্তি পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। মুক্তির পর ভারতীয় সমালোচকদের মধ্যে সিনেমাটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
ভারতীয় দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন ‘দুরন্ত শাকিব-মিমি-চঞ্চল ট্রায়ো, স্টাইল-অ্যাকশনে ভরপুর “তুফান”’ শিরোনামে ছবিটির সমালোচনা প্রকাশ করেছে অনলাইন সংস্করণে। এখানে ছবিটি সম্পর্কে লেখা হয়েছে, ‘শাকিব তাঁর স্টাইলে, শরীরী ভাষায় হয়ে উঠেছেন সমসময়ের অকৃত্রিম হিংসার প্রতীক।
হলভর্তি দর্শক গুলি ছুটলে হাততালি দিচ্ছে, রক্তপাত হলে উল্লাসধ্বনি প্রকাশ করছে। দর্শকের এই পালসটাই ধরতে চেয়েছেন পরিচালক এবং তাঁর যোগ্য সংগত দিয়েছেন শাকিব খান।’
সিনেমাটির প্রশংসা করে সংবাদপত্রটি লিখেছে, ‘ছবির শুরুটা একটু ধীরগতির হলেও বিশ্বাস করুন, পিকচার আসলে শুরু হয় তুফানের এন্ট্রির পর। গল্পের ডিটেলে যাচ্ছি না। যে সরকার এই গ্যাংস্টার তুফানের সাহায্য নিয়েছিল, সেই সরকার তাকে শেষ করে দিতে তৎপর। কাট, এন্ট্রি আরেক শো-স্টপারের। চঞ্চল চৌধুরী। তিনি এখানে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার আকরাম। শাকিবের “তুফান”-এর পাশে দুর্দান্ত কনট্রাস্ট তৈরি করে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর ধূর্ত ‘আকরাম’। শাকিব খান এবং চঞ্চল চৌধুরীর ডুয়েল দেখার মতো।’ স্বল্প উপস্থিতি হলেও ছবিতে মিমি চক্রবর্তী ও নাবিলার পারফরম্যান্সের প্রশংসা করা হয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে গানের কথা।
তবে চিত্রনাট্যে পার্শ্ব অভিনেতাদের আরও বেশি জায়গা দেওয়া উচিত ছিল মনে করে সংবাদ প্রতিদিন। পত্রিকাটির ভাষ্যে, ‘গল্পে যুক্তি তক্কো না থাকলেও এন্টারটেইনমেন্ট আছে। সেটাই বক্স অফিসে বাজি লড়বে। ছবির দৈর্ঘ্য একটু কম হলেও ক্ষতি হতো না।’
সব মিলিয়ে ছবিটির প্রশংসা করে সমালোচনায় লেখা হয়েছে, ‘আপনি যদি “বাহুবলী” ও “অ্যানিমেল” দেখার জন্য প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করতে পারেন, তাহলে “তুফান”ও আপনাকে দেখতে হবে। কারণ, এসব ছবির নিরিখে এই বাংলা অ্যাকশন থ্রিলার প্যাকেজিংয়ে আধুনিক এবং পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।’
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বাংলায় ‘তুফান’-এর রিভিউ করেছে। অনলাইন গণমাধ্যমটি ৫-এ ছবিটির রেটিং দিয়েছে ৩।
আপনি যদি “বাহুবলী” ও “অ্যানিমেল” দেখার জন্য প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করতে পারেন, তাহলে “তুফান”ও আপনাকে দেখতে হবে। কারণ, এসব ছবির নিরিখে এই বাংলা অ্যাকশন থ্রিলার প্যাকেজিংয়ে আধুনিক এবং পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
ছবির ইতিবাচক দিক তুলে ধরে এখানে লেখা হয়েছে, ‘বাংলা ছবিতে যে ধরনের টেকনোলজির ব্যবহার করা হয়েছে, তা খুব একটা চোখে পড়ে না। ফলে টেকনিক্যাল দিক থেকে এটি যে বেশ উচ্চ মানের একটি বাংলা ছবি তা বলাই যায়। বিশেষ করে একটি দৃশ্যের কথা উল্লেখ করতে হয়। যেখানে ছবির এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র অন্য আরেকজনকে হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করছে। সেখানে যেভাবে পুরো দৃশ্যটি নির্মাণ করা হয়েছে, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। পাশাপাশি ছবির গান। সেটা নিয়ে নতুন করে তো কিছুই বলার নেই। ইতিমধ্যে সেগুলো বেশ ভাইরাল।’
এই রিভিউতে কিছু সমালোচনাও আছে ‘তুফান’-এর। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা লিখেছে, ‘চিত্রনাট্য নিয়ে বোধ হয় আরও একটু কাজ করা যেত। সঙ্গে চরিত্রগুলোকে আরও একটু গভীরতা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল।’ তবে ছবিতে চঞ্চল ও শাকিবের যুগলবন্দী ছিল দেখার মতো বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
এ ছাড়াও ‘তুফান’-এর রিভিউ করেছেন ইউটিউব চ্যানেল ‘ফিল্ম কম্পানিয়ন লোকাল’-এর অরিত্র, ‘রূপমস রিভিউ’-এর রূপম, ‘আর্টিস্টিক সেভেনথ সেন্স’-এর সাগরনীল। মোটাদাগে তিনজনই সিনেমাটির কারিগরি দিক, শাকিব খানের পারফরম্যান্স ও চঞ্চল চৌধুরীর উপস্থিতির প্রশংসা করেছেন। তবে তিনজন মনে করেন, সিনেমাটির চিত্রনাট্য আরও শক্তিশালী করার সুযোগ ছিল। রায়হান রাফীর সিনেমায় চরিত্রগুলোর যে গভীরতার ব্যাপার থাকে, সেটা এ সিনেমায় নেই বলেও মনে করেন তাঁরা। তবে তিনজনই সিনেমাটিতে থাকা হাসপাতালের ‘ওয়ান টেক’ দৃশ্যটির প্রশংসা করেছেন।