বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের নাম। একাত্তরে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ফুটবল ম্যাচ খেলে মুক্তিযুদ্ধের জন্য তহবিল সংগ্রহ করত এই দল। স্মরণীয় সেই দলের গড়ে ওঠার ইতিহাসের ‘নির্যাস’ নিয়ে নির্মিত হয়েছে দামাল। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ইতিহাসের হুবহু চিত্রায়ণ নয়, ইতিহাসের আঁচড়ে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ফুটবল ও প্রেমকে উপজীব্য করে সিনেমার গল্প লিখেছেন শিশুসাহিত্যিক ও ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। ২০১৮ সালে ফরিদুর রেজার কাছে প্রথম গল্পটি শুনেই মুগ্ধ হয়ে যান রাফি। বাংলাদেশের মতো দেশে সীমিত বাজেটে একাত্তরের গল্প তুলে আনা বেশ কঠিন কাজ। শুরুতে খানিকটা সংশয় থাকলেও পরে জোর কদমে সিনেমার কাজে নেমে পড়েন। পরিচালনার পাশাপাশি নাজিম উদ দৌলার সঙ্গে যৌথভাবে চিত্রনাট্যও লিখেছেন রাফি।
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ইতিহাসের হুবহু চিত্রায়ণ নয়, ইতিহাসের আঁচড়ে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ফুটবল ও প্রেমকে উপজীব্য করে সিনেমার গল্প লিখেছেন শিশুসাহিত্যিক ও ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। ২০১৮ সালে ফরিদুর রেজার কাছে প্রথম গল্পটি শুনেই মুগ্ধ হয়ে যান রাফি।
শিল্পী ও শুটিং লোকেশন নির্বাচন করে ২০২০ সালে করোনার মধ্যেই দৃশ্যধারণ শুরু করেন রাফি। ফ্রেমে একাত্তরের আবহ তুলে আনতে পুরোনো এলাকা খুঁজছিলেন রাফি, বেশ খোঁজাখুঁজির পর সৈয়দপুরে একটি জায়গা নির্বাচন করেন। রাফি প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘এই প্রজন্মের জন্য যথাযথ মুক্তিযুদ্ধের ছবি নাই। গেরিলা ভালো হয়েছিল। এরপর আর কোনো মুক্তিযুদ্ধের ছবি আলোড়ন তুলতে পারেনি। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে কেন্দ্র করে সিনেমাটি বেছে নিয়েছি। যদিও আমরা স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের গল্প সরাসরি বলিনি। ফুটবল দলের থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সিনেমাটা করেছি। সিনেমার চরিত্রগুলোও কল্পিত, কোনো ফুটবলারের মতো নয়। গল্পের মূলটা শুধু ফুটবল দলে রেখেছি।’ গত ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া তাঁর তুমুল আলোচিত পরাণ–এর পর এবার দামাল নিয়েও আশাবাদী পরিচালক।
সিয়াম–রাজের কিকচর্চা
সিনেমায় একজন ফ্রি কিক বিশেষজ্ঞর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ফুটবল খেলে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, এমন গল্প পৃথিবীতে আর কারও মনে হয় নেই। পায়ে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন তাঁরা।’
দৃশ্যধারণ শুরুর তিন–চার মাস আগে একজন কোচের তত্ত্বাবধানে ফুটবলের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সিনেমার তিন অভিনেতা—সিয়াম আহমেদ, শরীফুল রাজ ও সুমিত।
সেই ফুটবল দল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত দামাল সিনেমার বেশির ভাগ অংশজুড়েই আছে ফুটবল। দৃশ্যধারণ শুরুর তিন–চার মাস আগে একজন কোচের তত্ত্বাবধানে ফুটবলের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সিনেমার তিন অভিনেতা—সিয়াম আহমেদ, শরীফুল রাজ ও সুমিত। সিয়াম জানান, বাসাবোর একটি মাঠে নিয়মিত অনুশীলন করতেন তাঁরা। প্র্যাকটিসে তিন–চার হাজারের বেশিবার ফ্রি কিক প্রাকটিস করতে হয়েছে। কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত ফ্রি ফিক দিতে পারছিলেন না। তবে শুটিংয়ে প্রথমবারের কিকেই শট ‘ওকে’ বলেছেন নির্মাতা।
সিনেমায় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শরীফুল রাজ, তাঁর চরিত্রের নাম মুন্না। রাজের ভাষ্যে, ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের মতো একটি দলকে উপস্থাপন করতে পারছি—এটা আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার। এই যাত্রায় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ও মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অনুপ্রেরণা ছিল।’ সিনেমার ট্রেলার মুক্তির পর রাজের একটি ‘বাইসাইকেল কিক’ আলোচিত হয়েছে। সেই কিক নিয়ে তিনি বলেন, ‘ওটা করতে গিয়ে হাতে ফ্র্যাকচার হয়ে যায়, দুই মাস বাসায় বসে ছিলাম। দিন শেষে জিনিসটা করতে পেরেছি বলে ভালো লাগছে।’
ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় এ সিনেমায় সিয়াম, রাজ, সুমিত ছাড়াও অভিনয় করেছেন বিদ্যা সিনহা মিম, রাশেদ অপু, সাঈদ বাবু, শাহনাজ সুমি, বৃষ্টি, অথৈ, পূজা প্রমুখ।
কেন দেখবেন ‘দামাল’
গল্পকেই সিনেমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে তুলে আনলেন সিয়াম ও রাজ। সিয়ামের ভাষ্য, ‘এই প্রজন্মের অনেকেই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের বীরত্বগাথা জানে না। তাদের নিয়ে বাবা–মা সিনেমা হলে যেতে পারেন।’ রাজের মতে, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাইরে গিয়েও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি দারুণভাবে তুলে এনেছে রাফি। গল্পের কারণেই সিনেমাটা মানুষ দেখবে বলে বিশ্বাস করি।’ মিম বলছেন, ‘বাংলাদেশের দর্শকেরা এখন অনেক ভালো সিনেমা দেখতে চান। সিনেমায় যুদ্ধ, ফুটবল, ভালোবাসা, আবেগ—সবকিছুই আছে। দর্শক পরাণ যেমন পছন্দ করেছেন, ওই রকমভাবে দামালও দেখবে বলে আমার মনে হয়।’ রাফির পরাণ–এও ছিলেন শরীফুল রাজ ও মিম। দামাল–এর পাঁচ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন মমতাজ, কনা, ইমরান, প্রীতম।