‘শিশুতোষ সিনেমা আমাদের এখানে খুব একটা হয় না। “এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী”, “আমার বন্ধু রাশেদ”সহ কিছু সিনেমা আমরা দেখেছি। অথচ শিশুদের সিনেমাও আমাদের সিনেমাকে সমৃদ্ধ করতে পারত, পারে। শিশুদের সিনেমা বেশি হলে শিশুরা সিনেমা দেখার সুযোগ পাবে। সিনেমা হলে যাওয়ার আগ্রহ তৈরি হবে তাদের। এসব শিশু একদিন বড় হয়ে দর্শক–মন্দা কাটাতে বাংলা সিনেমার নিয়মিত দর্শক হতে পারে।’ বলছিলেন শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান ও নাট্যজন লাকী ইনাম।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নাটক সরণির মহিলা সমিতি মিলনায়তনে ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির ট্রেলার প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির গল্পকার মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তাঁর ‘রাতুলের রাত রাতুলের দিন’ উপন্যাস থেকে ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। আরও উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম, অভিনেতা আশিস খন্দকার, ছবির নায়ক সিয়াম আহমেদ, নায়িকা পরীমনি প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ছবির নায়ক সিয়াম আহমেদ জানান ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ শুধুই সিনেমা তৈরি হয়নি, এ সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে সিনেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারও কারও কিছু সার্থকতাও এসেছে। তিনি বলেন, ‘এ সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে আমাদের টিমের দুজনের প্রণয় হয়েছিল। ছবিটি মুক্তির আগে তাঁদের ফুল ফুটেছে। কিছুদিন আগে তাঁরা বিয়ে করেছেন। এ সিনেমার শুটিংয়ের সময় আমিও বাবা ছিলাম না, পরীমনিও মা হয়নি। এখন মুক্তির সময় এসে দুজনের ঘরে দুটি ফুটফুটে ছেলেসন্তান। দারুণ একটা ব্যাপার দুজনের জন্য।’
ছবিটির বেশির ভাগ শুটিং হয়েছে সুন্দরবন, সুন্দরবনের ধার ঘেঁষে নদীতে। শুটিংয়ের সময় করোনা মহামারির মধ্যে পড়ে শুটিং ইউনিট। ফলে শুটিংয়ের দিনগুলো সহজ ছিল না। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে সুন্দরবনের কাদাপানিতে, লঞ্চে, নদীতে শুটিং করতে হয়েছে।
শুটিংয়ের সময়কার একটি স্মরণীয় ঘটনার কথা উল্লেখ করে সিয়াম বলেন, ‘সিনেমায় প্রায় ১৫ জন শিশু অভিনয় করেছে। প্রতিদিন সকালে তাদের জন্য আলাদা খাবার দেওয়া হতো। কিন্তু করোনার কারণে প্রশাসন থেকে আলটিমেটাম দেওয়া হলো। তখন আমরা মাঝনদীতে। বলা হলো, লঞ্চ ডাঙায় ভিড়তে পারবে না। লঞ্চ থেকে কেউ নামতেও পারবে না, বাইরে থেকে কেউ উঠতে পারবে না। এভাবে তিন দিন পার হয়। তত দিনে লঞ্চে খাবার শেষ। এখন বোঝেন, শিশুদের নিয়ে কী অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলাম আমরা তখন।’
সবাইকে ছবিটি দেখার আহ্বান জানিয়ে এ অভিনেতা আরও বলেন, শুধু শিশুদের নয়, তরুণ ও বয়স্ক সবার ছবি এটি। সব বয়সের দর্শকের দেখার উপাদান আছে এই ছবিতে।
এ দিকে অনুষ্ঠানের ঠিক মাঝামাঝিতে পরী তাঁর চার মাসের সন্তান রাজ্যকে নিয়ে অনুষ্ঠানে হাজির হন। মিলনায়তনের সামনের আসনে বসেন। পাশে বসা সিয়াম আহমেদ পরীর কোল থেকে নিজের কোলে তুলে নেন রাজ্যকে। কিছু সময়ের জন্য রাজ্যের সঙ্গে আদর, দুষ্টুমি খেলায় মাতেন সিয়াম। এ সময় হালকা করে রাজ্যের গাল টিপে দুষ্টুমির স্বরে সিয়ামকে বলতে শোনা যায়, ‘বাবুটা, এত চুপচাপ! তুমি বড় হলে নায়ক হবে। হা হা হা...।’ প্রায় দুই ঘণ্টা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরীমনি। কাজের অভিজ্ঞতা, ছবির শুটিংসহ ছবিটির নানা বিষয় নিয়ে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এ সময় রাজ্য শুভাকাঙ্ক্ষীদের কোলে কোলে ঘুরেছেন।
অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের পরীমনি জানান সন্তান সঙ্গে নিয়ে ছবিটি তিনি দেখতে হলে যাবেন। এই অভিনেত্রী বলেন, ‘ওর জন্মের দিন থেকে প্রতিদিন যত ছবি তোলা হয়, একটা অ্যালবাম হচ্ছে। ছবিটি দেখতে সে আমার কোলে চড়ে হলে যাবে। ছবি তোলা হবে। সে একদিন বড় হয়ে অ্যালবামের ছবি দেখে কত মজাই না পাবে!’
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ছবির পরিচালক রায়হান জুয়েল। তিনি জানান, আগামী বছর ২০ জানুয়ারি ছবিটি দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে। সবশেষে মঞ্চে ট্রেলার প্রকাশের ঘোষণা দেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বড় পর্দায় সেটি দেখানো হয়। তার আগে অনুষ্ঠানের মাঝামাঝিতে ছবির শিশুদের একটা গান দেখানো হয়। সরকারের অনুদানের ছবিটির চিত্রনাট্য করেছেন জাকারিয়া সৌখিন। এতে আরও অভিনয় করেছেন শহীদুল আলম সাচ্চু, আজাদ আবুল কালাম, কচি খন্দকার প্রমুখ।