শবনম বুবলী
শবনম বুবলী

আগে জানলে ইধিকাকে নিয়ে হলে বসে একসঙ্গে ‘প্রিয়তমা’ দেখতাম: বুবলী

পঞ্চম সপ্তাহে পড়ল ঈদের সিনেমা ‘প্রিয়তমা’। এখনো দেশ–বিদেশে সাড়া অব্যাহত আছে ছবিটির। বর্তমানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ৪৭টি হলে চলছে এটি। ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন কলকাতার ইধিকা পাল। শাকিব খানের বিপরীতে এই ছবির ‘ইতি’ চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করেছেন এই অভিনেত্রী।
কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, শাকিবের বিপরীতে ইতি চরিত্রটি করার কথা ছিল ঢাকাই ছবির নায়িকা শবনম বুবলীর। সে সময় ছবিটিতে চুক্তিও নাকি করেছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে ১৪ নভেম্বর প্রথম আলোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি ছবিটিতে চুক্তির কথা বলেছিলেন। তার আগে ওই মাসেই ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে নাম নিবন্ধন হয় ছবিটির। শাকিব খানের নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে ফিল্মস থেকে ২০১৮ সালে ছবিটির কাজ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে শুটিং আটকে যায়।

‘প্রিয়তমা’ সিনেমায় শাকিব খান ও ইধিকা পাল

ঘোষণার প্রায় সাত বছর পর এসে চলতি বছর ঈদুল আজহার জন্য নির্মাণ করা হয় ছবিটি। কিন্তু মাঝখানে বুবলীর সঙ্গে শাকিব খানের বিয়ে, বাচ্চাসহ পারিবারিক নানা কারণে ছবিটি থেকে বাদ পড়ে যান বুবলী। তাঁর জায়গায় অভিনয় করেন ইধিকা পাল। ছবিটি মুক্তির পর সুপারহিট।

এ ব্যাপারে বুবলী বলেন, ‘এই ছবির গল্প নিয়ে পরিচালক হিমেল আশরাফের সঙ্গে আমার প্রথম কথা হয়। তাঁর কাছেই প্রথম গল্প শুনি ছবিটির। তখন গল্পটি শুনেই মনে হয়েছিল, দারুণ কিছু একটা হবে। অনেক বছর পর ছবিটি তৈরি হলো, মুক্তির পর চারদিকে সাড়া ফেলে দিল। আমি এই ছবিতে থাকিনি তো কী হয়েছে? ‘প্রিয়তমা’ তো হিট হয়েছে। আমি কাজটি করতে পারিনি, চরিত্রটি অন্য একজন করেছেন। সিনেমাটি শেষ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে। ‘প্রিয়তমা’ সিনেমা হয়ে বেঁচে থাকল, সেটাই বড় কথা।’

চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী

ছবিটি এখনো দেখার সুযোগ না হলেও ছবির গান ও কিছু দৃশ্যের অংশবিশেষের ফুটেজ দেখার সুযোগ হয়েছে বুবলীর। সেখানে ইতি চরিত্রে ইধিকার অভিনয় দারুণ পছন্দ হয়েছে ঢাকাই ছবির এই নায়িকার। তিনি বলেন, ‘আমি কিছু দৃশ্যের ফুটেজ ও গানে ইধিকাকে দেখেছি। চরিত্রটিতে ইধিকাকে অনেক মিষ্টি লেগেছে। তাঁর কণ্ঠে কিছু সংলাপ শুনেছি, যেগুলো আমি আগেই পড়েছি, জানতাম। সংলাপগুলোয় খুব ভালো করেছেন ইধিকা। দেখার পর তাঁকে তো আমার ওপার বাংলার মেয়ে মনে হয়নি। শুনলাম তিনি সিনেমাটি দেখতে ঢাকায় এসেছিলেন। কখন এসে চলে গেছেন, জানি না। আগে জানলে ইধিকাকে নিয়ে হলে একসঙ্গে বসে “প্রিয়তমা” দেখতাম।’

কিন্তু জানা যায়, এটি ছিল আপনার জন্য স্বপ্নের প্রজেক্ট। না করতে পারার জন্য আফসোস হয় না এখন? জানতে চাইলে বুবলী বলেন, ‘এই পেশায় অনেক সময় অনেক ক্ষেত্রেই এমন হয়। অনেক সময় অনেক কিছু হবে, আবার হবে না। জায়গাটা এমনই। ভাগ্যেরও ব্যাপার আছে। শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয়, শুনেছি এর আগে বড় বড় অভিনেতা-অভিনেত্রীও অন্যের চূড়ান্ত হওয়া ছবিতে কাজ করেছেন। তবে যা হোক, শেষ পর্যন্ত প্রজেক্টটি উপযুক্তভাবে তৈরি হয়েছে, হিট হয়েছে, এতেই ভালো লাগা। আফসোসের কিছু নেই।’

দর্শক ছবিটিকে দারুণভাবে গ্রহণ করায় ছবিসংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বুবলী বলেন, ‘ছবির প্রাণই হলো গল্প, যেটি লিখেছেন ফারুক হোসেন। তিনি আমাদের মধ্যে নেই। থাকলে আজকের এই সফলতা দেখে অনেক খুশি হতেন। গল্পকে সিনেমায় রূপ দিতে পরিচালক হিমেল ভাইও অনেক কষ্ট করেছেন। অনেক দিন ধরে গল্পটি নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর একটা গুণ হলো, যখন তিনি শিল্পীদের সঙ্গে গল্প নিয়ে বসেন, সংলাপসহ পুরো ছবি দেখিয়ে দেন। পরিচালকের শ্রম সার্থক হয়েছে। অভিনন্দন ছবিসংশ্লিষ্ট সবাইকে। যা হোক, শেষ পর্যন্ত ছবিটি সফল হয়েছে। বরং না হলে খারাপ লাগত।’

স্মৃতি হাতড়ে বুবলী জানান, প্রথমে হিমেল আশরাফের কাছেই ‘প্রিয়তমা’ ছবির গল্প শুনেছিলেন তিনি। এরপর হিমেলকে শাকিব খানের কাছে নিয়ে যান। বুবলী আরও বলেন, ‘এই প্রজেক্টের শুরুর দিকের খবর মোটামুটি অনেকেই জানেন। কারণ, সে সময় ছবির খবরাখবর খবরের পাতায় ছাপা হয়েছিল, টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে। হিমেলের মুখে শুনেই গল্পটি আমার খুব পছন্দ হয়। শাকিব খানও গল্পটি শুনে পছন্দ করেন। এরপর অনেকবারই আমরা তিনজন একসঙ্গে গল্পটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি সে সময়। তখন ছবিটি এসকে ফিল্মস থেকে তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল।’

এই অভিনেত্রী জানান, ছবির নামটি নিয়ে সে সময় কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বও ছিল। বলেন, প্রথমে ‘প্রিয়তম’ নাম রাখা হয়েছিল। পরে অনেক আলাপ-আলোচনার পর ‘প্রিয়তমা’ রাখা হয়। কারণ, ‘প্রিয়তমা’ হলেও সেই প্রিয়তমা তো নায়কেরই। প্রাধান্য তো নায়কেরই থাকছে। পরবর্তীকালে ছবিটির নাম চূড়ান্ত হয় ‘প্রিয়তমা’।

এদিকে এখনো ‘প্রিয়তমা’ হলে গিয়ে দেখা হয়নি বুবলীর। ‘কবে দেখবেন?’ জানতে চাইলে এই নায়িকা বলেন, ‘দ্রুতই “প্রিয়তমা” ও “সুড়ঙ্গ” দুটি ছবিই হলে গিয়ে দেখব।

‌প্রহেলিকার দৃশ্যে বুবলী ও মাহফুজ আহমেদ। ছবি: পরিচালকের সৌজন্যে

এই ঈদে “প্রহেলিকা” ও “ক্যাসিনো” নামে আমারও দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এখনো মাঝেমধ্যে আমার ছবির জন্য সময় দিতে হচ্ছে। তা ছাড়া আগের একটা ছবির অল্প কিছু কাজ বাকি আছে, তার শুটিং চলছে এখন। এগুলো শেষ করেই হলে গিয়ে ছবি দুটি দেখব।’