পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফেরার সময় নিজ দেশেরই বিমানবন্দরে পুলিশের হাতে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি গ্রেপ্তার হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানান বিনোদন অঙ্গনের কেউ কেউ। পরিচালক, অভিনয়শিল্পী ও প্রযোজকেরা মাহিকে এভাবে গ্রেপ্তারে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কেউ আবার বলেছেন, মাহিয়া মাহিকে এভাবে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দেশের সবার মধ্যে একটা ভয়ের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। গ্রেপ্তারের পর আদালতে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মাহিকে ছেড়েও দেওয়া হয়। মাহির সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা কীভাবে দেখছেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
একুশে পদকপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, মাহিয়া মাহিকে এভাবে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করেছেন। তা না হলে, এভাবে এয়ারপোর্ট থেকে একজন অভিনয়শিল্পীকে, একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা নয়। ইলিয়াস কাঞ্চন এই মুহূর্তে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। ২৮ মার্চ তাঁর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। সেখান থেকে আজ সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে আমার স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে আছি। তারাও দেখেছে পুরো ঘটনা। তারা বলল, মাহি যে রকমই হোক, সে তো একজন শিল্পী। তাকে এয়ারপোর্ট থেকে এভাবে অ্যারেস্ট করতে হবে! সে তো বিশাল বড় কোনো একজন কিলারও নয়। তাকে যদি অ্যারেস্ট করতেই হয়, বাসা থেকেও তো করা যেত। এয়ারপোর্টে নামার সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে অ্যারেস্ট করা হলো, তাতে মনে হয়েছে, দেশের মধ্যে কোনো ডন আসছে। তাকে এয়ারপোর্ট থেকে অ্যারেস্ট না করলে, সে পালিয়ে যাবে।’
কথায় কথায় ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, ‘আমার কথা হলো, মাহি তো এমন না যে বড় কোনো সন্ত্রাসী, দেশের জন্য হুমকি। সাইবার ক্রাইম মামলা হয়েছে ঠিক আছে, কিন্তু তাকে তো বাসা থেকে অ্যারেস্ট করতে পারত।
এটা ক্ষমতা প্রদর্শন করা হয়ে গেল না! আমাদের দেশে কতজনে কত কিছুই তো বলতেছে, শিল্পীদের প্রতিনিয়ত ফেসবুকে বাজেভাবে আক্রমণ করে, অসম্মান করে কথা বলে, কখনো তো এত দ্রুত কাউকে অ্যারেস্ট করতে দেখিনি। আগের দিন মামলা হলো, পরের দিন অ্যারেস্ট! এটা ওই পুলিশ কর্মকর্তার ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার। তাঁর ক্ষমতা আছে বলে তিনি প্রদর্শন করলেন, বিষয়টি এমন। তা না হলে, এভাবে এয়ারপোর্ট থেকে অন্তঃসত্ত্বা নারী, একজন অভিনয়শিল্পীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা নয়।’
মাহিয়া মাহিকে এভাবে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে শিল্পীদের আত্মমর্যাদায় আঘাত করেছেন ওই পুলিশ কর্মকতা, জানালেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
তিনি বললেন, ‘সংস্কৃতি জগতের সবারই ভাবমূর্তির বিষয় আছে। সেগুলো তো অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত ছিল ওই পুলিশ কর্মকর্তার। কাজটা এ রকমভাবে করা উচিত হয়নি। যেভাবে এয়ারপোর্ট থেকে অ্যারেস্ট করা হলো, কয়েক ঘণ্টা পর আবার ছেড়েও দিল—তাহলে বিশাল ক্রিমিনালকে যেভাবে ট্রিট করে, একজন শিল্পীকে নিয়ে সে কাজটা কেন করল! এই কাজ করে ওই পুলিশ কর্মকর্তা শুধু ক্ষমতা প্রদর্শন করলেন, তা তো নয়, আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য ক্ষতিকর কাজটিই তিনি করলেন।
সর্বজন পরিচিত চলচ্চিত্রের একজন শিল্পীকে এভাবে অ্যারেস্ট করা মোটেও ঠিক হয়নি। তাকে এভাবে অ্যারেস্ট করাটা তার ইমেজ ক্ষুণ্ন করা, শিল্পীদের ইমেজ ক্ষুণ্ন করা এবং ব্যবসায়িকভাবে চলচ্চিত্রের জন্য ক্ষতি করা।’