নাটক–সিনেমার মতোই বদলে গেছে এই অভিনেতাদের জীবন
নাটক–সিনেমার মতোই বদলে গেছে এই অভিনেতাদের জীবন

‘অজপাড়াগাঁ থেকে এত দূর এসেছি, কিছু না হলে আবার গ্রামে চলে যাব’

অভিনয় করবেন এমন স্বপ্ন তাঁরা দেখেননি। অথচ সেই অভিনয়ই তাঁদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। এখন তাঁরা পর্দার নিয়মিত মুখ। তাঁদের অভিনয়ে আসার গল্প যেমন নাটকীয়, তেমনি তাঁদের ভাগ্যবদলের গল্পও নাটকের মতোই। এই অভিনয়শিল্পীরা কেউ আগে প্রোডাকশন সহকারী, কেউ শুটিং টিমে চা-বিস্কুট সরবরাহ করতেন, কেউ শুটিংয়ে ভাড়া দিতেন নানা কিছিমের জিনিস। এ ছাড়া শুটিংয়ের গাড়ি চালাতেন এমন ব্যক্তিও এখন অভিনেতা। আগে স্বপ্ন না দেখলেও তাঁরা এখন চেষ্টা করে যাচ্ছেন অভিনয়শিল্পীর পরিচয়টা ধরে রাখতে। পর্ব–২
প্রথম বড় চরিত্রের সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করেন বরিশালের ছেলে আল-আমিন সবুজ

প্রথম বড় চরিত্রের সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করেন বরিশালের ছেলে আল-আমিন সবুজ দূরানী। তবে নাটক নয়, বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে। ‘ওই ইউনুস তোর ডান হাত কোনটা? তোর হাতের আঙুল কয়টা? ইউনুস ফ্যানটা বন্ধ কর তো’—বিজ্ঞাপনচিত্রের এই সংলাপ শোনেননি এমন দর্শক কমই আছেন। সেই বিজ্ঞাপন দিয়েই আলোচনায় আসেন আল-আমিন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি এই অভিনেতাকে। বাইরে বের হলেই শুনতে হতো ইউনুস নামটি। এখন ‘আকাশ মেঘে ঢাকা’, ‘শান্তি মলম ১০ টাকা’, ‘চিটার অ্যান্ড জেন্টেলম্যান’সহ বেশ কিছু ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করছেন। অথচ ভাইরাল হওয়ার আগপর্যন্ত তিনি কল্পনাও করেননি একটি বিজ্ঞাপনের অভিনয় তাঁর ক্যারিয়ার বদলে দেবে।

শুটিংয়ে সহ অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে সবুজ

আল-আমিন বলেন, ‘আমি প্রোডাকশন সহকারী হিসেবে কাজ করতাম। পরিচালক আশফাক নিপুণ ভাই আমাকে “মায়া” নাটকে সুযোগ দেন। সেই নাটক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বস দেখেছিলেন। তখন বস আমাকে তাঁর সঙ্গে কাজের সুযোগ দেন। কখনো প্রোডাকশন সহকারী, কখনো বসের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করতে থাকি। এর মধ্যেই বস ইউনুসখ্যাত বিজ্ঞাপনটায় আমাকে কাস্টিং করেন। প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। কারণ বসের সঙ্গে দেশের সবাই কাজ করার জন্য আগ্রহী থাকে সেখানে আমাকে বেছে নেওয়ায় ভয় পেয়েছিলাম। প্রথম অনেক ভুল করলেও সেগুলো শুধরে বস আমাকে দিয়ে কাজটি করিয়ে নিয়েছিলেন। তখনো মনে হয়নি এটা দেশের দর্শক পছন্দ করবেন। বিজ্ঞাপনটি প্রচারের পর রাতারাতি সেটা জনপ্রিয় হয়ে যায়। আমি সবুজ থেকে হয়ে যাই ইউনুস। পরে অনেকেই কাজের জন্য ডাকতে থাকেন।’

অভিনেতা আল–আমিন সবুজ

অভিনয়ের ওপর পড়াশোনা বা জানাশোনা ছিল না। অভিনয়টা পারবেন কিনা সেটা নিয়েই ভয়ে ছিলেন। কিন্তু সবার সহযোগিতা পেয়েছেন। মোশাররফ করিমসহ যাদের সঙ্গেই অভিনয় করেছেন তারা সবাই সবুজকে অভিনয় শিখিয়েছে। একসময় কাজের চাপ বাড়তে থাকে। ছবিয়াল ছেড়ে দেন। তখন অনেকেই তাকে ভয় দেখিয়ে বলেছিল, অভিনয় ক্যারিয়ারে কিছু করতে পারবে না, তার চেহারা ভালো নয়, দেখতে কালো তাকে কেউ পরে আর অভিনয়ের জন্য ডাকবে না। এসবকে গুরত্ব না দিয়ে একসময় অভিনয় শুরু করেন। তবে অভিনয় নিয়ে শুরুর দিকে অনেকের নেতিবাচক কথা শুনে কিছুটা দোটানায় ছিলেন।

মোশাররফ করিমসহ সহঅভিনেতা ও পরিচালকের সঙ্গে সবুজ

এই অভিনেতা বলেন, ‘বসের ওখানে কাজ করব নাকি অভিনয় করব, সেটা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু অভিনয় করলে পরে যদি আর কেউ না ডাকে, এই ভাবছিলাম। আমি গার্মেন্টসের কিছু কাজ জানতাম। তখন ভাবছি অভিনয়ে ভালো করতে না পারলে গার্মেন্টসের মার্চেন্ডাইজারের কাজ শুরু করব। অজপাড়াগাঁ থেকে এত দূর এসেছি, কিছু না হলে আবার গ্রামে চলে যাব।’ তাই শুটিংয়ে নিয়মিত হন। তিনি মনে করেন, গ্রামের মানুষের উৎসাহে এত দূর এসেছেন। তিনি আরও বলেন,‘অভিনয় শিখে আসিনি বলে অনেকেই অবহেলা করতেন। অনেক সময় অভিনয় ভুল করলেও অনেক পরিচালক বকা দিতেন। আমি সব সহ্য করে আজ এতদূর এসেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে কোনো কিছু একজন নাই–ই পারতে পারে কিন্তু শেখার তো সুযোগ আছে। আমি শিখব, জানব। এখন নিয়মিত কাজের সুযোগ পাই, ব্যবসায়িক কিছু কাজ করি। এসব নিয়েই ভালো আছি। যখন কেউ এসে বলে আপনি অভিনয় করেন না, তখন মনে হয় ছোট হলেও অভিনেতা হিসেবে জীবন স্বার্থক। এই ভালোবাসা টাকা দিয়ে পাওয়া যায় না।’