যমজ সন্তান নিয়ে কেমন চলছে অভিনেত্রী সুমাইয়া শিমুর সংসার

দুই সন্তানকে নিয়ে সুমাইয়া শিমু। ছবি: ফেসবুক
দুই সন্তানকে নিয়ে সুমাইয়া শিমু। ছবি: ফেসবুক

মাস দেড়েক আগে অভিনেত্রী সুমাইয়া শিমু যমজ সন্তানের মা হন। এরপর যেন পুরোপুরি বদলে গেছে এই অভিনেত্রীর জীবন। কখন রাত আসছে, কখন দিন যাচ্ছে—সে হিসাব রাখার যেন সময়ই নেই। দিন–রাতের বেশির ভাগ সময় কাটছে দুই ছেলেকে নিয়ে। রাত কাটছে নির্ঘুম। সেসব অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে শিমু বলেন, ‘এই কষ্টই যদি না করি, তাহলে আর কিসের মা, সবকিছুর সঙ্গেই দিনদিন অ্যাডজাস্ট হয়ে যাচ্ছি।’

যমজ সন্তানের মা হওয়ার পর প্রথম প্রথম তাদের যত্ন নিয়ে চিন্তায় ছিলেন সুমাইয়া শিমু। অনেক সময় তাদের ধরতেও ভয় পেতেন। বড় বোন এবং মায়ের কাছ থেকে ক্রমেই সেসব রপ্ত করেছেন। তাঁরা এ সময়ে শিমুর দুই সন্তানকে সময় দিয়েছেন। তবে এখন বেশির ভাগ সময় সন্তানেরা শিমুর কাছেই থাকে। হাসতে হাসতে শিমু বলেন, ‘দুই সন্তান লালনপালন অন্য রকম অভিজ্ঞতা। কান্নাকাটি, জ্বালাযন্ত্রনা ভালোই চলছে। এসবই আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছে। কত দিন যে বাইরে যেতে পারি না। ফোনের কাছেও থাকা হয় না। এর মধ্যেই এখন সব ভালো লাগা।’

শিমু সব সময় পছন্দ করতেন বড় পরিবার। যে কারণে যমজ সন্তান হওয়ায় খুবই খুশি এই অভিনেত্রী। মা হওয়ার আগে পরিচিত ও পরিবারের মানুষের কাছ থেকে নানা রকম অভিজ্ঞতা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এখন বুঝতে পারছেন, দুই সন্তানকে সামলানো কঠিন। তিনি জানান, তাঁর দুই ছেলের মধ্যে একটা অনেক বেশি কান্না করে। অনেকের কাছ থেকেই শুনেছেন, আর দুই মাস পর কান্না কিছুটা কমবে। সেই দিনের অপেক্ষায় আছেন। কারণ, সন্তান কাঁদলে অনেক সময় তাঁরও কান্না পায়। কথাগুলো বলতে বলতেই এই অভিনেত্রীর সন্তানের কান্নার শব্দ শোনা যায়। এরপর তাঁর বোন কোলে নেন সন্তানকে।

সুমাইয়া শিমু। ছবি: ফেসবুক

শিমু বলেন, ‘এই দেখেন, কথা বলতে বলতেই কান্না শুরু করেছে। যমজ বাচ্চা মেইনটেইন করা কিছুটা কঠিন। তারা সারা রাত প্রায় নির্ঘুম কাটিয়ে দেবে। আমিও ঘুমাতে পারি না। সারা রাত জেগে থাকি। দেখা যায়, অল্প সময়ের জন্য একটু ঘুমালাম, তখন একটা বাচ্চা কান্না শুরু করল। একটা আবার বেশি কাঁদে। একজনের কান্নার শব্দে পাশের আরেকজন জেগে ওঠে, কান্না শুরু করে। কখনো দেখা যায় দুজনই কাঁদছে। তখন দুজনকেই দেখতে হয়। হয়তো আমার চোখে ঘুম। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। এটাই হচ্ছে আমার দিনকাল।’

দুই সন্তানকে নিয়ে সুমাইয়া শিমু। ছবি: ফেসবুক

প্রথম মা হয়েছেন। কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় সন্তান জন্মের পর প্রায় ৪০ দিন ছিলেন বড় বোনের বাসায়। সেখানে তাঁর মা, বোন, দুলাভাইসহ অন্যরা সহযোগিতা করেছেন। ১৯ ডিসেম্বর থেকে থাকছেন নিজের বাসায়। সেখানে শিশুদের দেখাশোনার জন্য দুজন লোক রেখেছেন, সঙ্গে তাঁর মা রয়েছেন। তা ছাড়া রাতে স্বামী কাজের ফাঁকে সহযোগিতা করেন। শিমু বলেন, ‘এখনো আমার ছেলের বয়স দুই মাস হয়নি। অন্যদের কাছে গিয়ে কান্না করে। দেখা যায়, আমার আর মায়ের কণ্ঠ শুনে চিনতে পারে। তখন কিছুটা চুপ হয়।’
এ সময় শিমু আরও বলেন, ‘এখন এক সন্তান হলে হয়তো একটু কষ্ট কম হতো। যমজ সন্তানের জন্য কষ্টটা বেশি হয়। যমজ সন্তান নিয়ে পরিস্থিতি এমন হবে, আগে থেকেই ধারণা ছিল। কিন্তু সন্তান হওয়ার পরে এখন সব বুঝতে পারছি। আর অ্যাডজাস্ট হচ্ছি। এগুলোকে আমি কষ্ট মনে করি না। মা হয়ে যদি এই কষ্ট না করি, তাহলে কিসের মা? শিশুদের ঘিরেই আমার সব শিডিউল।’

সুমাইয়া শিমু। ছবি: ফেসবুক

সন্তান হওয়া আগে ওজন বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তখন চিন্তা করতেন সুস্থভাবে সন্তান জন্ম দেওয়ার। এখন প্রতিমুহূর্তে সুস্থ রাখার চিন্তা করতে হয়। ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই কয় মাসে কবে যে টানা ২–৩ ঘণ্টা ঘুমিয়েছি, মনে পড়ে না। ঘুমাতে চাইলেও অনেক সময় চিন্তায় ঘুম আসে না। এখন ১৫–২০ মিনিট করে ঘুমাতে হয়। বোনের বাসা থেকে আসার পর সব মিলিয়ে হয়তো দুই–তিন ঘণ্টাও গড়ে ঘুমাতে পারি না। সবকিছুর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। সবাই বলছে, গরম এলে তখন কিছুটা সময় পেতে পারি। আবার অনেকেই বলে, বাচ্চারা নাকি দিনদিন আরও দুষ্টুমি করে।’, বললেন সুমাইয়া শিমু।

দুই সন্তানের আকিকা অনুষ্ঠান করলেও এখনো নাম রাখেননি সুমাইয়া শিশু। তবে নাম নিয়ে ভাবছেন। কিছু নাম ঠিক করে রেখেছেন। তবে আরেকটু সময় নিতে চান। শিমু বলেন, ‘মাঝেমধ্যে মনে হয়, একটু বাইরে যাই, কিন্তু পারি না। অভিনয় করেছি, ছুটে বেড়িয়েছি। সেই আমি এখন ঘরের বাইরে পা ফেলি না। শীতটা গেলে হয়তো বাইরে বের হওয়া যাবে। এখন বাইরের দুনিয়া থেকে একদম বিচ্ছিন্ন। মাঝেমধ্যে দমবন্ধ লাগে, কিন্তু কিছুই করার নেই। ফোন বন্ধ থাকে। তবে দিন শেষে শুকরিয়া, ছেলে দুইটাকে সুস্থ রাখার জন্য যে চেষ্টা করছি। সেটা এখনো পারছি। এটাই ভালো লাগা। যে কারণে নিজের ওপর দিয়ে যাওয়া সব কষ্টই আর কষ্ট মনে হয় না। এসব মাতৃত্বের অংশ।’

সুমাইয়া শিমু। ছবি: ফেসবুক