মাঠে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয় সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগের (সিসিএল) আসর। ১৮ দিন পর আজ মঙ্গলবার মাঠে গড়িয়েছে তারকাদের নিয়ে এই ক্রিকেট খেলার আয়োজন। এত দিন ধরে বিশৃঙ্খলকারীর নাম জানা না গেলেও আজকের খেলার মধ্যে প্রকাশ্যে চলে এল তাঁদের নাম। এদিকে মাঠে খেলা গড়ালেও নেই অনেক পরিচিত মুখ। খেলা চলাকালীন দেখা যায়নি চঞ্চল চৌধুরী, আফরান নিশো, তমা মির্জা, মেহজাবীন, তাসনিয়া ফারিণ, শখদের মতো তারকাদের।
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জেরে সিসিএল স্থগিতের পর আজ সাতটি দল নিয়ে মাঠে গড়ায়। মাঠে আসেনি রায়হান রাফির নেতৃত্বাধীন দলের কেউ। বিকেল পাঁচটা নাগাদ প্রথম পর্বের চারটি দলের খেলা শেষ হয়েছে। আজকের মধ্যেই ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হবে। একাধিক সূত্র, বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর খেলা চলাকালীন সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজন খেলোয়াড়সহ অজ্ঞাতনামা একজনকে আজকের খেলায় অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অব্যাহতি যাঁদের দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন চিত্রনায়ক শরীফুল রাজ, পরিচালক নঈম ইমতিয়াজ নিয়ামূল, মোহন আহমেদ, চিত্রনায়িকা রাজ রীপা এবং সোহাগ রানা ও একজন অজ্ঞাতনামা।
এসব খেলোয়াড়ের অব্যাহতির বিষয়ে আয়োজক প্রতিষ্ঠান কিছু না বললেও আয়োজকদের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র তথ্যটি নিশ্চিত করেছে। ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজক প্রতিষ্ঠান জি নেক্সট ও টুর্নামেন্টের আট দলের আট অধিনায়কের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অধিনায়ক বিষয়টি স্বীকারও করেছেন।
আজ খেলা চলাকালীন সময়ে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি একজন অজ্ঞাতনামাসহ মোট ছয়জনকে আজকের খেলায় অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ভিডিও ফুটেজ বিচার বিশ্লেষণসহ সেদিন মাঠে উপস্থিত বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে আয়োজক প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত হয়েছে, ওই দিনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে তাঁরা জড়িত ছিলেন। ঘটনার সময় তাঁদের চিৎকার করতে এবং মারমুখী দেখা গেছে। এতে করে সেখানে বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হয়। ক্রিকেট একটা শান্ত পরিবেশের খেলা। কিন্তু সেদিন তাঁরা তাঁদের মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি। যাতে আবার কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় এ কারণে সব দলের অধিনায়কদের পরামর্শে আয়োজকেরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এ ব্যাপারে অব্যাহতি পাওয়া মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের দলের সদস্য পরিচালক নঈম ইমতিয়াজ নিয়ামূলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানালেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘অব্যাহতি পাওয়ার মতো কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না। যেদিন ঘটনা ঘটেছে, সেদিনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই খেলায় আর অংশ নেব না। অব্যাহতির কথা তো শুনিনি। আমার সঙ্গে এ ব্যাপারে কেউ যোগাযোগও করেনি। আমি এখন পরিবার নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি।’
এদিকে খেলার মাঠে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি স্বীকার করেছেন পরিচালক মোহন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘দল থেকে আমাকে আজ খেলতে যেতে নিষেধ করেছে। এ জন্য আমি খেলতে যাইনি। বাসায় আছি।’ কেন নিষেধ করা হয়েছে জানতে চাইলে এই পরিচালক বললেন, ‘ওই দিনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িয়ে পড়েছিলাম। আমি এর জন্য নিজেকে দায়ী মনে করি না। কারণ, ওই সময় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, পরিস্থিতিই আমাকে ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য করেছিল।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আয়োজক প্রতিষ্ঠান জি নেক্সটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপংকর দীপনের দলের খেলা চলাকালে মাঠে থাকা দুই দলের সতীর্থদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার খেলা শুরু হয়। ম্যাচ শেষে আবার উত্তেজিত হয়ে পড়ে দুই দলের খেলোয়াড়েরা, যা একটা পর্যায়ে মারামারিতে রূপ নেয়। হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনার পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে সিসিএল লিগ স্থগিতের ঘোষণা দেয় আয়োজক প্রতিষ্ঠান।
সিসিএল-এ মোট আটটি দলে লড়ছেন বিনোদন অঙ্গনের তারকা ও কলাকুশলীরা। এসব দলের নেতৃত্বে দেখা গেছে গিয়াস উদ্দিন সেলিম, সালাহউদ্দিন লাভলু, শিহাব শাহীন, চয়নিকা চৌধুরী, দীপংকর দীপন, সকাল আহমেদ, মোস্তফা কামাল রাজ ও রায়হান রাফিকে।