প্রেম, দাম্পত্য জীবন—স্ত্রী প্রসঙ্গে যা বললেন মিশা সওদাগর

স্ত্রীর সঙ্গে মিশা সওদাগর। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
স্ত্রীর সঙ্গে মিশা সওদাগর। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

১০ বছরে প্রেমের সম্পর্ক, এরপর বিয়ে। ১৯৯৩ সালের আজকের দিনে বকশীবাজার কমিউনিটি সেন্টরে মিশা সওদাগর ও জোবায়দা রব্বানী মিতার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। দেখতে দেখতে সেই বিয়ের বয়স পেরিয়েছে ৩০ বছর। বিয়ের এত বছর পূর্তি উপলক্ষে এ নিয়ে ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘৩০ বছর পার করার পর আমার উপলব্ধি হচ্ছে, মানুষের কাছে শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে তার মা। আর একজন পুরুষের কাছে শ্রেষ্ঠ সম্পত্তি হচ্ছে স্ত্রী।’

দাম্পত্য জীবনের ৩০ বছর পূর্তির এই দিনে প্রথম আলো কথা বলেছে মিশা সওদাগরের সঙ্গে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল দুজনের পরিচয়টা কবে, কখন, কীভাবে হয়েছিল? ‘আমরা থাকতাম পুরান ঢাকায়। আর মিতার বাসা ছিল মতিঝিল এজিবি কলোনিতে। আমাদের দুই পরিবারের আগে থেকে জানাশোনা ছিল। দূর সম্পর্কের আত্মীয় আমরা। আমাদের বাসায় তারা আসত, আমরাও যেতাম। আসা–যাওয়ার মাঝে ভালো লাগা। একদিন চোখে চোখে পড়ে ভালো লাগা তৈরি হয়। এরপর মিতা চিঠিতে বলেছিল বাকি কথা। চিঠিটা আজও রেখে দিয়েছি।’ বললেন মিশা সওদাগর।

স্ত্রীর সঙ্গে মিশা সওদাগর। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

মিশার সঙ্গে মিতার যখন প্রথম দেখা, তখন তাঁরা যথাক্রমে দ্বাদশ শ্রেণি এবং এসএসসির পরীক্ষার্থী। কথায় কথায় মিশা সওদাগর বললেন, ‘মিতা ছাত্রী হিসেবে খুবই ভালো ছিল। আমি মোটামুটি। মিতা তো ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পেয়েছিল, এইটেও পেয়েছিল। এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। কিন্তু প্রেমের কারণে ডাক্তারি পড়া হয়নি তাঁর। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিকসে ভর্তি হয়েছিল। আর আমি তো তখন তো উড়ু উড়ু। নিজেকে মিঠুন চক্রবর্তী ভাবছি, সুপারস্টার। মিঠুন চক্রবর্তীর বিখ্যাত স্টেপ দিতে পারতাম। নতুন মুখের কার্যক্রমে তো ওই স্টেপ দিয়ে চান্স পেয়েছি। স্মার্ট ছিলাম, স্টাইলিশও ছিলাম। এখনকার মতো তো বুড়া ভাব ছিল না। মিতা যখন থার্ড ইয়ারে, তখন আমরা বিয়ে করি।’

প্রেমের সম্পর্কের এই বিয়েটা সহজেই হয়েছিল নাকি বেগ পেতে হয়েছিল? ‘মিতার জন্য পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক হচ্ছিল। একটি ছেলে বুয়েট থেকে পড়াশোনা শেষে পারিবারিকভাবে প্রস্তাবও দেয়। যখন বিষয়টা আমরা জানতে পারি, মিতার দাদার কাছে আত্মসমর্পণ করি। নিজেদের প্রেমের সম্পর্কের কথা বলি। মিতা কিন্তু ১০ বছর ধরে প্রেম করলেও কোনো দিন বলেনি বিয়ে করব। সব সময় বলত, তোমাকে যেমন ভালোবাসি মা–বাবাকেও তেমন ভালোবাসি। মা–বাবা এত কষ্ট করে বড় করেছেন, তাঁদের মনে কষ্ট দিয়ে তো বিয়ে করতে পারব না। এরপর ওর দাদাই সবকিছু সুন্দরভাবে ম্যানেজ করেছিলেন।’ বললেন মিশা সওদাগর।

স্ত্রীর সঙ্গে মিশা সওদাগর। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

১৯৯৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ভালোবেসে বিয়ে করেন মিশা ও মিতা। কথায় কথায় মিশা জানালেন, ‘ভাবতে অবাক লাগে, প্রেমের সম্পর্ক ১০ বছর, এরপর ৩০ বছরের দাম্পত্য জীবন—সব মিলিয়ে ৪২ বছরের সম্পর্ক আমাদের।’ আমৃত্যু একসঙ্গে কাটিয়ে দিতে চান তাঁরা। এদিকে ফেসবুক পোস্টে স্ত্রী মিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লিখেছেন, ‘৩০ বছর পার করার পর আমার উপলব্ধি হচ্ছে, মানুষের কাছে শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে তার মা। আর একজন পুরুষের কাছে শ্রেষ্ঠ সম্পত্তি হচ্ছে স্ত্রী। যে তার মানসম্মান, অর্থ, প্রতিপত্তি, সুখ-দুঃখ, আনন্দ বেদনা, সন্তানসন্ততির আমানত হিসেবে রক্ষা করে। তোমার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা, অনেক ভালোবাসা। আমাকে আজকের দিনে কবুল করার জন্য তোমার কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ। শুভ হোক বিবাহবার্ষিকী।’

মিশা সওদাগর

মিশা-মিতা দম্পতির দুই পুত্রসন্তানের জনক–জননী। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। আর সুযোগ পেলেই মিশা সেখানে উড়াল দেন স্ত্রী-পুত্রকে সময় দিতে। এদিকে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে মিশা সওদাগরের ডজনখানেক সিনেমা। এর মধ্যে নির্মাতা বদিউল আলম খোকনের ‘আগুন’, শাহীন সুমনের ‘কুস্তিগির’–এর শুটিং শেষ করেছেন তিনি। এ ছাড়া কাজ চলছে দেবাশীষ বিশ্বাসের ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, রায়হান খানের ‘পায়েল’, কামরুজ্জামান রোমানের ‘লিপস্টিক’, মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘ডার্ক ওয়ার’ এবং মোহাম্মদ ইকবালের রিভেঞ্জ ও ডেড বডি সিনেমার। সর্বশেষ তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন সানী সানোয়ার পরিচালিত ‘এশা মার্ডার’ সিনেমায়।