ভারতের গোয়ায় শুরু হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়ার (ইফি) ৫৪তম আসর। ২০ নভেম্বর শুরু হওয়া উৎসবটি শেষ হবে ২৮ নভেম্বর। উৎসবে বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পী জয়া আহসানের চারটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।
গত বছরের শেষ দিকে হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের খবর দিয়েছিলেন জয়া আহসান। এবার জানালেন সেই ছবি ‘কড়ক সিং’ নিয়ে সুখবর। জয়ার কাছ থেকে জানা গেল, ইফির উদ্বোধনী দিনে ছবিটির ট্রেলার প্রকাশিত হবে।
আর ২২ নভেম্বর হবে প্রিমিয়ার। এর মধ্যে ছবির অভিনয়শিল্পীরাসহ লালগালিচায় হাঁটবেন। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী পরিচালিত ছবিতে জয়ার সহশিল্পী বলিউডের পঙ্কজ ত্রিপাঠি ও সানজানা সাংঘি। জয়া বলেন, ‘আমার প্রথম হিন্দি সিনেমা। চরিত্রটিও দারুণ। এই ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়ে বেশ রোমাঞ্চিত ছিলাম। তাই হ্যাঁ বলতেও সময় নিইনি। কারণ, ছবির পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী এবং আমার সহ-অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠি। আমি সব সময় অনিরুদ্ধ ও পঙ্কজের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছি। তাঁদের সঙ্গে কাজ করা এবং তা-ও প্রথম হিন্দি ছবিতে, আনন্দ দ্বিগুণ করে।’
আরও তিন
হিন্দি ভাষার ‘কড়ক সিং’ ছাড়াও এবারের উৎসবে জয়ার তিনটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে—‘ফেরেশতে’, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ ও ‘অর্ধাঙ্গিনী’। জয়া বললেন, ‘ভারতের সবচেয়ে বড় এ উৎসবে এর আগেও আমার ছবি গেছে। গতবার তো ‘নকশিকাঁথার জমিন’ খুব ভালো সাড়া ফেলেছিল। এ উৎসব আমার কাছে গুরুত্ব বহন করে। কারণ, এটা ভারতের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র উৎসব। বিশ্ব চলচ্চিত্র আঙিনায়ও এর গুরুত্ব রয়েছে।
তবে আমার আরও ভালো লাগত, যদি বাংলাদেশের ছবি নিয়ে সেখানে যেতে পারতাম। তারপরও বলব, ইরানি ভাষার যে চলচ্চিত্র, এটাতে তো যৌথভাবে বাংলাদেশও আছে।’
কথায়–কথায় জয়া এ–ও বললেন, ‘যাঁরা ফিল্ম ভালোবাসেন, ফিল্ম নিয়ে সার্বক্ষণিক ভাবেন, তাঁদের কাছে এ উৎসব খুবই অন্য রকম আনন্দের, গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এ উৎসবে একটা ছবির প্রিমিয়ার হওয়াটা অনেক ভালো ব্যাপার। আমাদের দেশের অনেক ছবিও গেছে। সেই জায়গা থেকে বলব, প্রতিযোগিতা বিভাগে থাকলে ভালো লাগাটা আরও বেশি হয়। ভালো লাগলে আমি খুশি। কারণ, কষ্ট করে কাজ করি। এবার ভালো লাগার কারণটা আরও বেশি; কারণ, চারটা ফিল্ম যাচ্ছে, তাই উৎসব কর্তৃপক্ষও অভিনন্দন জানাল। ওরাও খুশি।’
নতুন ছবির কাজ
উৎসব শেষে ‘কড়ক সিং’-এর প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। আপাতত তাই নতুন ছবির কাজ শুরু করছেন না। তবে বেশ কিছু ছবি আটকে আছে, যা শিগগিরই একের পর এক মুক্তি পাবে। জয়াও তা–ই বললেন এভাবে, ‘আমার বেশ কয়েকটি ছবি আটকে আছে। শুটিং শেষ হয়ে গেছে। মুক্তির অপেক্ষায় আছে। একে একে মুক্তি পাবে। এর মধ্যে ‘কড়ক সিং’ নিয়েও প্রচার শুরু হবে। এটা নিয়েও একটু ব্যস্ততা আছে।’ জয়ার কাছ থেকে জানা গেল, বাংলাদেশে ‘জয়া আর শারমিন’ ও পেয়ারার সুবাস’—দুটি ছবিই তাঁর খুব প্রিয় কাজ। কলকাতায়ও শুটিং শেষ হওয়া ছবির মধ্যে মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘কালান্তর’, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’, ‘ওসিডি’, ‘ভূতপরী’।
প্রসঙ্গ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
মাহমুদ দিদারের ‘বিউটি সার্কাস’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ১৪ নভেম্বর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন জয়া আহসান। এর আগে আরও চারবার এ পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এবারের পুরস্কার তিনি উৎসর্গ করেছেন সার্কাস সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীকে। বিষয়টা এভাবেই বললেন জয়া, ‘ভালো লাগার বিষয় হচ্ছে, এ ছবির জন্য আমরা সবাই খুব কষ্ট করেছিলাম। সবচেয়ে বড় কথা, ছবিটি এমন জনগোষ্ঠীর কথা বলেছে, যাদের কথা আমরা সাধারণত কখনো ভাবিনি। একদম বিলুপ্তপ্রায় শিল্পকে নিয়ে। আমি এই অ্যাওয়ার্ডটা সার্কাস কমিউনিটিকে উৎসর্গ করেছি। কারণ, আমি খুব কাছ থেকে তাদের কষ্ট ও ডেডিকেশন দেখেছি।’
আশাবাদী জয়া
উৎসবে দেশের চলচ্চিত্র যেমন ভালো করছে, তেমনি বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন দেশে ব্যবসা করছে। দেশের বাইরে চলচ্চিত্রের বড় বাজার তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশি সিনেমার ভবিষ্যৎ আরও অনেক ভালো বলে বিশ্বাস করেন জয়া। তিনি বললেন, ‘উৎসব সার্কিটের কথা যদি বলি, বুসান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে এত বড় পুরস্কার নিয়ে এল ইকবাল হোসাইন চৌধুরীর “বলী”; এটা খুবই আনন্দের। এত গর্বিত হয়েছি, বলে বোঝাতে পারব না। বুসান উৎসবে কিন্তু আমাদের অনেক ছবিই গেছে। কিন্তু এত বড় পুরস্কার এবারই প্রথম এল। একই সঙ্গে আমরা নুহাশ হুমায়ূনের কাজও দেখছি। বিভিন্ন উৎসবে অসাধারণ করছে। যে জায়গায় নিজেকে নিয়ে গেছে, তা সত্যিই আনন্দের। উৎসব সার্কিটে দারুণ কাজ করছে, পুরস্কার পাচ্ছে, তহবিলও পাচ্ছে—এসব আনন্দের ব্যাপার। আশাবাদী করে, ভালো লাগার ব্যাপার।’